সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো, নয়াদিল্লি: সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও আক্রমণাত্মক মেজাজেই দেখা যাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে (TMC)। অধিবেশন শুরুর আগের দিন সর্বদল বৈঠকেই তার প্রমাণ মিলল। মঙ্গলবার সকালে সংসদের লাইব্রেরি ভবনে সরকার পক্ষের তরফে ডাকা সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi) উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু তাঁর সরকার যে বাংলাকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করতে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে উঠেপড়ে লেগেছে, সেই অভিযোগ তুলে বৈঠকে গর্জে উঠল তৃণমূল।
কেন্দ্রের এহেন আচরণ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত বলে অভিযোগ করে সংসদে বিরোধীদের বাক স্বাধীনতার পক্ষে সওয়ালও করেছে বাংলার শাসক দল। তাদের কটাক্ষ, সরকার পক্ষই চায় না যে সংসদের অধিবেশন চলুক। তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়ান বৈঠকে হাজির ছিলেন। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সুদীপ কটাক্ষ করেন, “আপনারা এখানে সবকিছুতে রাজি হন, কিন্তু পরে অবস্থান পালটে ফেলেন।”
”সংসদে বিরোধীদের কণ্ঠ যেন শোনা যায়, বিরোধীদের বলার অনুমতি দিন,” বলে ডেরেক মন্তব্য করেছেন বলেই জানা গিয়েছে। তাঁরও দাবি, সর্বদল বৈঠকে সরকারের তরফে ভাল ভাল কথা বলা হয়। কিন্তু সংসদে আলোচনার সময় বিরোধীদের কথায় কর্ণপাত করা হয় না।
[আরও পড়ুন: ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ধিক্কার জানাই’, সাকেতের গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়]
তৃণমূলের তরফে এদিনের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহারের মতো বিষয়গুলি নিয়ে সংসদে যথাযথ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এদিনের বৈঠকে অবশ্য ডেরেক নিজের বক্তব্য পেশ করেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। গুজরাট পুলিশের হাতে আটক দলের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলেকে আইনি সাহায্য করার জন্য আমেদাবাদ রওনা হন তিনি।
বৈঠকের পরে সুদীপ জানিয়েছেন, “আমরা মূলত বলেছি যে, পশ্চিমবঙ্গকে অর্থনৈতিকভাবে অবরুদ্ধ করা হচ্ছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাংলার সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আলোচনা এবারের অধিবেশনে অবশ্যই হওয়া উচিত। বেকারত্ব নিয়ে দেশে ত্রাহি ত্রাহি রব, অথচ তা নিয়ে লোকসভায় কোনও আলোচনা হয় না। আমরা এ কথাও বলেছি যে, সাধারণ মানুষের বক্তব্য যাতে তুলে ধরা যায় তার জন্য লোকসভা সচল রাখা দরকার। এবং এর দায়িত্ব সরকারের উপর বেশি বর্তায়। কিন্তু সরকার সেটা চাইছে না। এই বৈঠকে তারা সবকিছুতে সহমত হন, কিন্তু পরে পালটে যান।”
[আরও পড়ুন: পামেলার পর এবার গাঁজা মামলায় গ্রেপ্তার হাওড়ার বিজেপি নেতা]
বৈঠকে কংগ্রেসের পক্ষে লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ভারত-চিন সীমান্তে পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সংসদে আলোচনা করুক বলেও দাবি করেছেন। এবারে শীতকালীন অধিবেশন দেরিতে বসছে এবং তা প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাট ভোটের কারণেই বলে ইঙ্গিত করে কটাক্ষ করেন অধীর। বিকেলে লোকসভার অধ্যক্ষের ডাকা বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তৃণমূলের তরফে এবারের অধিবেশনই মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস করানোর দাবি তোলেন সুদীপ। কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে-র মতো বড় বিরোধী দল এবং খোদ বিজেপিও মহিলা সংরক্ষণ বিলের পক্ষে। তার পরেও কেন বিলটি পাস হচ্ছে না, প্রশ্ন করেন তিনি। সায় দেয় বাকি বিরোধীরাও। সরকারের তরফে এ বিষয়ে শীঘ্রই সর্বদল বৈঠক ডাকার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যসভার একই কমিটির বৈঠকে তৃণমূলের তরফে হাজির ছিলেন সুস্মিতা দেব। সূত্রের খবর, ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যেই শীতকালীন অধিবেশন শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে জি ২০-কে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগও তুলছে বিরোধীরা। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে জি-২০ বৈঠকের লোগোতে পদ্মের ছবি ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানাবে বামেরা। বিষয়টি নিয়ে সরব হবেন বলে জানিয়েছেন কেরলের আরএসপি সাংসদ এম প্রেমচন্দ্রন। অন্যান্য বাম সাংসদদের সঙ্গে কথা বলবেন।