সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনার জেরে আর্থিক সঙ্কট থেকে ত্রাণের পথ মিলল না মোদি সরকারের ২০ লক্ষ কোটি টাকার ‘আত্মনির্ভর’ প্যাকেজ ঘোষণার তৃতীয় দিনেও। এদিন, কৃষি-মৎস্য-দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রে একগুচ্ছ ঘোষণা করলেও চাহিদা বাড়ানো বা মানুষের খাতায় সরাসরি টাকা দেওয়ার বিষয়ে সম্পূর্ণ মৌন ছিলেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি, মধ্যবিত্তের জন্য ট্যাক্স ছাড় বা অন্য কোনওরকম ঘোষণাই স্থান পায়নি ‘আত্মনির্ভর’ প্যাকেজে। গতকাল মধ্যবিত্তের জন্য গত তিন বছর ধরে চলা একটি আবাসন প্রকল্পকে শুধু আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে। ৬ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের পরিবার ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে সরকার ভর্তুকি প্রদান করবে। শুধু ওইটুকুই।
[আরও পড়ুন: লকডাউনের চতুর্থ পর্বে দিল্লিতে চালু হচ্ছে মেট্রো! ইঙ্গিত কর্তৃপক্ষের]
শুক্রবার, কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নে ১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। পাশাপাশি, অর্থমন্ত্রী জানান, বিগত দু’মাসে লকডাউন চলাকালীন ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (msp) কৃষকদের থেকে ৭৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকার খাদ্য শস্যের ক্রয় করা হয়েছে। কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি দেওয়া হয়েছে। গত দু’মাসে প্রধানমন্ত্রী কিষান যোজনায় চাষীদের ১৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। করোনা আবহে দুধের চাহিদা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষে দুগ্ধ সমবায়গুলির জন্য ২ শতাংশ সুদের ছাড় দেওয়া হবে। এর ফলে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বাঁচবে যার দরুন লাভবান হবেন ২ কোটি চাষী। কিন্তু সরসরী ঋণ মকুব বা কৃষকদের খাতায় টাকা না দিয়ে সেই ব্যাংক লোনের কথাই বললেন অর্থমন্ত্রী। অথচ বর্তমান সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরাসরি আর্থিক সাহায্য প্রাপ্তির কোনও ব্যবস্থা প্যাকেজে নেই। অর্থসঙ্কট, আয় বন্ধ হয়ে থাকা, স্তব্ধ থাকা কারখানা, জীবিকা হারানো, বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন একটিই পথ দেখিয়েছেন, আর তা হল ব্যাংক থেকে ঋণের সংস্থান।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, লকডাউন চলায় চাহিদা ঠেকেছে তলানিতে, ব্যবসা বন্ধ হকারদের, সে ক্ষেত্রে তাঁরা ১০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে লোন নেবেই বা কেন? বাজারে খদ্দের নেই, সেক্ষেত্রে নতুন করে পসরা সাজাবেই বা কেন তাঁরা? ক্ষুদ্র বা মাঝারী শিল্পের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন প্রযোজ্য। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদর মতে, অর্থনীতির দু’টি দিক হচ্ছে–চাহিদা ও যোগান। লকডাউন চলায় নিচের দিকে নেমেছে চাহিদার গ্রাফ। সে ক্ষেত্রে সরাসরি ব্যাংক খাতায় টাকা দেওয়া-সহ অন্যান্য চাহিদা বাড়ানোর দাওয়াই না দিয়ে, সরকার ব্যাংকের মাধ্যমে লোন জোগান দিতে ব্যস্ত। অর্থাৎ জোগানের দিক নিয়েই বেশি ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। করোনা আবহে আতঙ্কিত মধ্যবিত্তদের আয়করে কিছুটা ছাড় দিয়ে বাজারমুখী করা যেতেই পারত। এদিকে অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, লকডাউনের জেরে গত দু’মাসে প্রবল ধাক্কা খেয়েছে রাজকোষ। ‘ট্যাক্স কালেকশন’ হয়নি বললেই চলে। ফলে সরকারের হাতে নগদের অভাব রয়েছে। তাই সরাসরি ব্যাংকের খাতায় টাকা দিতে গেলে নোট ছাপতে হবে। সেই পথ নিলে, মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি ধাক্কা খাবে দেশের ‘ক্রেডিট রেটিং’। তাই সামঞ্জস্য বজায় রাখতে ব্যাংকগুলিকে লোন জুগিয়ে বাজারে নগদ জোগান বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র।
[আরও পড়ুন: লকডাউনে কর্মীদের বেতন কাটলেও হবে না শাস্তি! মালিকপক্ষকে স্বস্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট]
The post আজও ফাঁকা মধ্যবিত্তের ঝুলি, চাহিদা বাড়ানোর দাওয়াই দিতে ব্যর্থ নির্মলা appeared first on Sangbad Pratidin.