দুলাল দে: মহামেডানে এখন উৎসবের পরিবেশ। সবাই আই লিগ জয়ের আনন্দে মশগুল। ক্লাবের ৬১ শতাংশ শেয়ার যাদের কাছে আছে সেই ‘বাঙ্কারহিল’ কর্তারা নিজেদের কিছু শেয়ার অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়ে ভালো বিনিয়োগকারী নিয়ে আসতে প্রচণ্ডভাবে সচেষ্ট। কোনওমতে দল তৈরি করে আইএসএলে খেলাই শুধু লক্ষ্য নয়, চেষ্টা হচ্ছে ভালো দল তৈরির করার। তার জন্য ভালো খরচ করতেও রাজি মহামেডান কর্তারা। এসব তো গেল উপরের গল্প। কিন্তু প্রদীপের আলোর নিচেই জমে রয়েছে অন্ধকার। এই খবর আর ক’জনে রাখে? আর সেই অন্ধকার ধীরে ধীরে এতটাই ঘনীভূত হয়েছে যে, লোকসভা নির্বাচন মিটলেই মহামেডান ক্লাবের সচিবের পদ হারাতে পারেন ইস্তিয়াক আহমেদ (রাজু)। ক্লাবের ট্রাস্টি বেছে নিতে পারে মহামেডানের নতুন সচিব।
শুধুই ক্লাবের ইনভেস্টর ‘বাঙ্কারহিল’ নয়। বর্তমান সচিব ইস্তিয়াক আহমেদের বিরুদ্ধে সভাপতি আমিরউদ্দিন ববি এবং ট্রাস্টি মেম্বারদের কাছে চিঠি দিতে শুরু করে দিয়েছেন কার্যকরী কমিটির সদস্যরাও। ক্লাবের শাসক গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সদস্যই এই মুহূর্তে বিরুদ্ধে চলে যাওয়ায়, ইস্তিয়াক আহমেদের পক্ষে লোকসভা ভোটের পর সচিবের কুর্সি টিকিয়ে রাখা ভীষণই কঠিন ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সচিবের উইকেট শেষ পর্যন্ত তিনি টিকিয়ে রাখতে পারবেন না কি, শেষ পর্যন্ত সচিবের মিডল স্টাম্প উড়ে যাবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে ইস্তিয়াক আহমেদকে নিয়ে এই মুহূর্তে মহামেডানে সমস্যা মারাত্মক।
সমস্যার গভীরে যেতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে গত বছর আগস্ট মাসে। সেই সময় নবান্ন থেকে মহামেডান সচিবকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পেন যাত্রায় মহামেডানের কোনও প্রতিনিধির নাম পাঠাতে। নবান্নর এই চিঠির কথা জানতে পেরেই ক্লাবের অন্যতম ডিরেক্টর, ৬১ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার বাঙ্কারহিল কর্তা দীপক সিং, ক্লাব সভাপতি আমিরউদ্দিন ববিকে ২৮ আগস্ট একটি চিঠি পাঠান। যেই চিঠিতে ক্লাব সভাপতিকে তিনি লেখেন, মুখ্যমন্ত্রীর স্পেন সফরে ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যেতে চান। তবে তাঁকে প্রতিনিধি করে পাঠানোর জন্য ক্লাবকে আরও ৫০ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত অর্থ দেবেন তিনি। বাঙ্কারহিলের তরফে এরকম চিঠি আসার পর ক্লাব কর্তারা ভেবেছিলেন, দীপক সিং ক্লাবের সবরকম সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তার উপর আই লিগের সময় ভালো দল গড়তে ৫০ লক্ষ টাকা ক্লাবের কাজেই আসবে। ফলে দীপক সিংকেই মুখ্যমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে যখন ভেবে ফেলা হয়েছে, তখন ক্লাবে কোনও মিটিং না ডেকেই নিজের নাম মুখ্যমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হওয়ার জন্য গোপনে নবান্নে পাঠিয়ে দেন ইস্তিয়াক আহমেদ। স্পেন সফরের দু’দিন আগে ক্লাবকে জানান, তিনিই মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে স্পেনে যাচ্ছেন। এর পর ক্লাবের ট্রাস্টির সাত সদস্য ইস্তিয়াক আহমেদের কাছে জবাবদিহি চাইলে তিনি জানান, যেহেতু নবান্নর চিঠি সচিবের কাছে এসেছে, তাই সচিবের এই সফরে যাওয়া উচিত।
[আরও পড়ুন: গাড়ি নেই, বাড়িও নেই, ‘ফকির’ মোদির ঝোলায় কত সম্পত্তি?]
ইস্তিয়াকের এই বক্তব্যকে ক্লাব কর্তারা কিছুতেই মেনে নিচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, নবান্ন থেকে কখনও বলা হয়নি, শুধুমাত্র সচিব স্পেনে যাবেন। তাহলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সহ-সচিব কীভাবে গেলেন? বলা হয়েছিল, মহামেডান ক্লাবের একজন প্রতিনিধি যাবেন। সেই প্রতিনিধির নাম কর্তারা আলোচনায় বসেই ঠিক করতে পারতেন। কিন্তু ইস্তিয়াক কাউকে কিছু না জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্পেনে যাওয়ার জন্য নিজের নাম দিয়ে দিয়েছেন। পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠলেও, আই লিগের জন্য সেই সময় সবাই চুপচাপ হয়ে যান। কিন্তু ঘটনাটা কেউ ভুলে যাননি। এখানেই শেষ নয়। পর পর কয়েকজন কার্যকরী কমিটির সদস্যও এবার ইস্তিয়াকের ব্যপারে বিভিন্ন ক্ষোভ জানিয়ে সভাপতি এবং ট্রাস্টিদের চিঠি দিতে শুরু করেছেন। মহামেডান ক্লাবের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, ৭ সদস্যর ট্রাস্টি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাস্টিরা চাইলে যে কোনও সময় যে কোনও পদাধিকারীকে সরিয়ে দিতে পারেন। কার্যকরী কমিটির যে সদস্যরা ইস্তিয়াকের বিরুদ্ধে চিঠি দিয়েছেন, তাঁদের বক্তব্য হল, সচিব ক্লাবের পরিচালন কমিটির মাথা। অথচ ইস্তিয়াক নিয়মিত ক্লাবে সময় দেন না। তিনি নিজের প্রচারেই ব্যস্ত। ক্লাবের কঠিন পরিস্থিতিতে হাল ধরার ক্ষমতা নেই বর্তমান সচিবের।
বিভিন্ন দিক থেকে এত ক্ষোভ জমা হয়েছে যে, এরপরও যদি ইস্তিয়াক আহমেদ সচিবের পদে টিকে যান, সেটা ভানুমতির খেলের মতোই ঘটবে। তবে এখন যেহেতু লোকসভা নির্বাচনের জন্য কর্তারা সবাই ব্যস্ত রয়েছেন, তাই এই মুহূর্তে কিছু করা হচ্ছে না। তবে লোকসভা নির্বাচন শেষ হলেই এই ইস্যুতে ক্লাবে ঝড় উঠবে। তার আগে এই মাসেই নতুন কো-ইনভেস্টরও হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। যেখানে ইস্তিয়াকের কোনও ভূমিকাই নেই।