নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান: একদিকে ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হিসাবে ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’-র জয়গান। অন্যদিকে হিন্দু সমাজকেই ভারতবর্ষের উত্তরাধিকারী হিসাবে ঘোষণা। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের জনভিত্তি আরও প্রসারিত করতে আমজনতাকে সংঘে যোগদান করারও ডাক। রবিবার বর্ধমানের প্রকাশ্য জনসভায় আগামীতে গেরুয়া শিবিরের পথচলার অভিমুখ নির্দিষ্ট করে গেলেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত। যা শুনে শাসকদল তৃণমূলের পাল্টা মন্তব্য, হিন্দুত্বের এজেন্সি আরএসএস বা বিজেপি নিয়ে রাখেনি।
বাৎসরিক প্রবাস কর্মসূচিতে টানা ১০ দিনের সফরে বাংলায় এসেছিলেন সংঘচালক ভাগবত। কলকাতা থেকে বৃহস্পতিবার বর্ধমান পৌঁছে মধ্যবঙ্গের ছয় জেলা পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বাঁকুড়ার সংঘকর্মীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন তিনি। রবিবার বর্ধমানের সাই কমপ্লেক্সের মাঠে প্রকাশ্য জনসভা দিয়ে শেষ হয়েছে তাঁর এবারের বঙ্গ সফর। সেই মঞ্চেই এদিন নিজস্ব ভঙ্গিতেই ভারত রাষ্ট্রের সংজ্ঞা, হিন্দু সমাজের অধিকার ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিতে শোনা গিয়েছে সংঘপ্রধানকে। তিনি বলেন, ‘‘বিবিধতার মধ্যে ঐক্যই ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। যাঁরা নিজেদের বিবিধতা সত্ত্বেও একত্রিত থেকে গিয়েছেন তাঁরা ভারত নামক সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে চেয়েছেন। এই সংস্কৃতির সঙ্গে যারা নিজেদের মেলাতে পারেনি তারা ভারত থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। আলাদা দেশ বানিয়েছে। কিন্তু হিন্দুরা গোটা বিশ্বের বৈচিত্রকে আপন করে নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের উদ্দেশ্য সকলকে সংগঠিত করা। এই লক্ষ্যেই একশো বছর ধরে কাজ করে চলেছে সংঘ।’’
এ প্রসঙ্গে আরএসএস নিয়ে জনমানসের বিভ্রান্তি দূর করতে সংগঠনে যোগ দেওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি সাধারণ মানুষের উদ্দেশে। ভাগবত বলেন, ‘‘বাইরে থেকে সংঘের কাজ দেখলে হবে না। সেটা অন্ধ ব্যক্তির হাতি দেখতে যাওয়ার গল্পের মতো হবে। সংঘকে না জেনে অনেকে সংঘের ব্যাপারে কুমন্তব্য করছেন। সংঘ মানুষের সেবার কাজ করে। সংঘকে জানতে হলে সঙ্গে যোগদান করুন। যোগদান করতে কোনও অর্থ ব্যয় হয় না। মন না চাইলে ছেড়ে চলে যেতে পারবেন। এটা মন থেকে করার কাজ। এ প্রসঙ্গে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘হিন্দুত্বের এজেন্সি আরএসএস বা বিজেপি নিয়ে রাখেনি। ওরা বলছে, এটা তাদের ব্যাপার। আমরা তাদের আদর্শগত বিরোধিতা করি। আরএসএস বিজেপির অন্তরাত্মা। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আদর্শগত লড়াই চলবে।’’
ভারত রাষ্ট্র ভাবনা প্রসঙ্গে ভাগবত বলেন, ‘‘ভারত কোনও ভৌগোলিক সীমা দ্বারা নির্দিষ্ট নয়। ভারত একটি সংস্কৃতি। প্রাচীন যুগ থেকে ভারত এই সংস্কৃতির ধারা বহন করে আসছে। এই সংস্কৃতির মধ্যে বিবিধের মধ্যে একতা অন্যতম বৈশিষ্ট্য, অন্যদিকে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে চলা ও পরিবেশকে রক্ষা করা ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য।’’ হিন্দুত্বের প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভারত নামক ভূখণ্ডে প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতির ধারা বহন করে আসছেন যাঁরা তাঁদের হিন্দু বলা হয়। ভারতে বসবাসকারী সকল সম্প্রদায়ই হিন্দু সম্প্রদায়। যাঁরা মহিলাদের মাতৃরূপে শ্রদ্ধা করেন। পরের অর্থে লোভ করেন না। বিশ্বের দরবারে এই সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘সমাজে সব কিছুই পরিবর্তনশীল। হিন্দু সংস্কৃতির মানুষ সেটা জানে। তাই ঐক্যতাকেই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত করেছে। ১৯৪৭ সালের পর ভারতের একতা তৈরি হয়েছে এমনটা নয়। তার আগে থেকেই আমাদের দেশে নানা সংস্কৃতির মানুষ একসঙ্গে ছিলেন। ব্রিটিশরা আমাদের ভুল শিখিয়েছিল যে ভারতীয়রা ঐক্যবদ্ধ নয়।’’