শিলাজিৎ সরকার: যুবভারতীর প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডে তখন মুম্বই সিটি এফসি (Mumbai City FC) বধের মহড়ায় ব্যস্ত মোহনবাগান (Mohun Bagan)। ড্রেসিংরুমের সামনে মাঠের পাশে চেয়ারে বসে সেই মহড়ার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছেন তিনি। কখনও সখনও পকেট থেকে বের হয়ে আসছে একফালি চিরকুট। সেখানে লেখা তথ্যের সঙ্গে যেন মিলিয়ে নিতে চাইছেন অনুশীলন পদ্ধতির সঙ্গে।
আসলে কোনও ফুটবলার নয়, আইএসএলের (ISL) লিগ শিল্ড নির্ধারণের ম্যাচে সবুজ-মেরুন শিবিরে সবচেয়ে বড় টনিকের নাম আন্তোনিও লোপেজ হাবাস (Antonio Lopez Habas)। দীর্ঘ অসুস্থতা কাটিয়ে শনিবারই যিনি ফিরেছেন অনুশীলনে। তবে এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন স্প্যানিশ কোচ। তাই অনুশীলনে তাঁর পাশে ঠায় দাড়িয়ে থাকলেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক। মোহনবাগানের সহকারী কোচ ম্যানুয়েল পেরেজের আশ্বাস, সোমবার ডাগআউটে থাকবেন হাবাস। “এখনও হাবাস পুরোপুরি সুস্থ নন। তবে এটা ফাইনাল ম্যাচ, আমাদের জন্য মাস্ট উইন পরিস্থিতি। মাঠে ওঁর উপস্থিতি তফাত গড়ে দিতে পারে। কারণ হাবাসের মস্তিষ্ক ক্ষুরধার, প্লেয়ারদের ওঁর উপর নির্ভরতা তুলনাহীন। তাই হাবাস বেঞ্চে থাকবেন।” হাবাস অবশ্য জানালেন, এখনও ঠিক নেই তিনি ডাগআউটে থাকবেন কি না। পুরোটাই নির্ভর করছে চিকিৎসকের ছাড়পত্র ও তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির উপর। হাবাস নিয়ে কিঞ্চিৎ ধোঁয়াশা থাকলেও, সাহাল আবদুল সামাদের না খেলার বিষয়টি দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে দিয়েছেন ম্যানুয়েল। বিকালে অনুশীলনেও দেখা গেল, ফিজিও অভিনন্দনের সঙ্গে আলাদাভাবে রিহ্যাব করছেন জাতীয় দলের এই তারকা মিডফিল্ডার। ম্যানুয়েল বলে গেলেন, “সাহালকে পাব না। বাকিরা সবাই ফিট। আজকের প্র্যাকটিস সেশনের পর সিদ্ধান্ত নেব দল নির্বাচন নিয়ে।”
[আরও পড়ুন: চেন্নাই দলে ফিরছেন পূজারা? নয়া বার্তায় উসকে দিলেন জল্পনা]
অবশ্য সবুজ-মেরুন শিবির লিগের এই পর্যায়ে এসে কে আছে আর কে নেই- সেসব অঙ্কে ঢুকতে নারাজ। শুধু নিজেদের দিকেই নয়, বিপক্ষ শিবির নিয়েও একই ভাবনা রয়েছে টিম মোহনবাগানের। একমাত্র মুম্বইকে হারাতে পারলেই লিগ শিল্ড নামক অধরা মাধুরি (এখনও আইএসএলের লিগ পর্যায়ে সেরা হতে পারেনি গতবারের চ্যাম্পিয়নরা) আসবে হাতের নাগালে। আপাতত সেটাই পাখির চোখ শুভাশিস বসু, দিমিত্রি পেত্রাতোসদের। আর এক্ষেত্রে তাঁদের বড় হাতিয়ার হতে চলেছে ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে খেলার বিষয়টি। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বার চারেক যে কথা শোনালেন ম্যানুয়েল। কখনও টিকিটের বিপুল চাহিদা প্রসঙ্গে বললেন, “আমরা কাল সমর্থকে ভরা গ্যালারির সামনে খেলব। এটা আমাদের বড় অ্যাডভান্টেজ। কারণ আমরা নিজেদের লোকদের সামনে, তাদের খুশি করার জন্য খেলব। মুম্বইকে সেই সমর্থনের বিপক্ষে খেলার চাপ নিতে হবে।” আবার কখনও মুম্বই মিডিও আলবার্তো নগুয়েরা মোহনবাগানকে এগিয়ে রেখেছেন শুনে বললেন, “নগুয়েরা ঠিকই বলেছে। মুম্বই দল হিসাবে আমাদের থেকে ভালো। ওদের অনেক ভালো ভালো প্লেয়ার আছে। ওরা লিগ শিল্ড জয়ের ক্ষেত্রে ফেভারিট। কিন্তু ওরা এসে আমাদের ঘরের মাঠে, আমাদের সমর্থকদের সামনে খেলবে। সেটাই আমাদের এগিয়ে রাখবে।”
[আরও পড়ুন: ৪২- এও ছক্কার হ্যাটট্রিক, আইপিএলে নয়া নজিরের মালিক ধোনি]
২৩ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে এখন আইএসএল টেবলের শীর্ষে মুম্বই। সেখানে সমসংখ্যক ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে মোহনবাগান। অর্থাৎ মুম্বই যেখানে ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন, সেখানে মোহনবাগানকে জিততেই হবে। ইতিহাস বলছে, আইএসএলে আট সাক্ষাতে ছ’বার মুম্বইয়ের কাছে হেরেছে মোহনবাগান, বাকি দু’টো ড্র। এরমধ্যে শেষ সাক্ষাতে এগিয়ে থেকেও হারতে হয়েছিল জেসন কামিংসদের। বাড়িতে বসে যে হার দেখেছিলেন জনি কাউকো। সোমবার ঘরের মাঠে এই ব্যবধান কমানোর লক্ষ্য নিয়েই নামবেন তিনি। কারণ, সেটা করতে পারলেই লিগ শিল্ডের রং হয়ে যাবে সবুজ মেরুন। মোহনবাগান জনতার কাছে যে সাফল্য একেবারেই ‘অসীম সুখের চাবিকাঠি!’