মোহনবাগান- ৪ বেঙ্গালুরু- ০
(ইউস্তে, মনবীর, অনিরুদ্ধ, সাদিকু)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সেই ঐতিহাসিক কান্তিরাভা। সামনে সেই বেঙ্গালুরু এফসি (Bengaluru FC)।
৩১ মে, ২০১৫ তারিখটা কোনও সবুজ-মেরুন ভক্তই ভুলতে পারবেন না। গত ৯ বছরে শুধু বদলেছে মঞ্চটা। বদলেছে তারিখটাও। বদলায়নি মোহনবাগান।
সেদিন আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য শেষ ম্যাচ ড্র করলেই হত মোহনবাগানকে (Mohun Bagan)। ম্যাচের অন্তিম সময়ে বেলো রাজ্জাকের দুরন্ত হেড ট্রফি নিয়ে আসে সবুজ-মেরুনে।
এদিনও মোহনবাগানের লিগ শিল্ড জয়ের স্বপ্ন শুরু হল এক ডিফেন্ডারের সৌজন্যে। তিনি ভিক্টর ইউস্তে। তার পর মনবীর-অনিরুদ্ধ-সাদিকুর দাপটে ৪-০ গোলে বেঙ্গালুরুকে উড়িয়ে আইসিএলে (ISL 10) লিগ শিল্ড জয়ের স্বপ্ন বেঁচে রইল মোহনবাগানের। প্লে অফের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে লক্ষ্মীবারের সন্ধ্যায় মোহনবাগানকে জিততেই হত। এছাড়া দ্বিতীয় কোনও সমীকরণ ছিল না পেত্রাতোসদের জন্য। মোহনবাগান ফিরল রাজার মতো।
প্লে অফ থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছে বেঙ্গালুরু। কিন্তু মোহনবাগানের রাস্তায় কাঁটা ছড়িয়ে দেওয়ার সমস্ত চেষ্টাই করেছেন সুনীল ছেত্রীরা। শুরুর দশ মিনিটের মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল ম্যাচের পরিবেশ। ৯ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখলেন সবুজ-মেরুনের আমনদীপ। ঝামেলায় জড়িয়ে কার্ড দেখলেন বেঙ্গালুরু কোচ জেরার্ড জারাগোজা। নিখিল পূজারীদের চ্যালেঞ্জের কড়া জবাব দিলেন শুভাশিসরা।
তার মধ্যেই অনবদ্য গোলে মোহনবাগানকে এগিয়ে দিলেন ইউস্তে। ১৭ মিনিটে পেত্রাতোসের কর্নার থেকে ভেসে আসা বল ডান পায়ে গোলের দিকে ঘুরিয়ে দেন বাগান ডিফেন্ডার। কিন্তু বারে লেগে সেই বল ফিরে আসে তাঁর কাছেই। এবার আর ভুল হয়নি। বেঙ্গালুরু রক্ষণের তিন জনের মধ্যে দিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো ভলি ঢুকে যায় গোলের মধ্যে। ইউস্তের দুটো পাই যে সচল, তা প্রমাণ করল এই গোল। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই সোনার সুযোগ চলে এসেছিল সাদিকুর কাছে। মাঝমাঠ থেকে কাউকোর ডিফেন্স চেরা বল পেয়েছিলেন আলবেনিয়ার স্ট্রাইকার। কিন্তু গোল তো দূরের কথা, তে-কাঠির মধ্যেই রাখতে পারলেন না তিনি।
[আরও পড়ুন: অলিম্পিকে সোনা জিতলেই আর্থিক পুরস্কার, কত টাকা পেতে পারেন নীরজ চোপড়ারা?]
হাফ টাইমের আগে সমতা ফেরাতে পারত বেঙ্গালুরুও। এবার কাঠগড়ায় সুনীল ছেত্রী। বক্সের মধ্যে তাঁকে ফাউল করেছিলেন আনোয়ার আলি। পেনাল্টি দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না রেফারি রাহুল কুমার গুপ্তর। কিন্তু পেনাল্টি স্পট থেকে গোলের দুর্গম রাস্তাটা খুঁজে পেলেন না তিনি। বল ফিরল বারে লেগে। সুনীল ছেত্রী শেষ কবে পেনাল্টি নষ্ট করেছেন তা স্মরণকালের মধ্যে মনে না পড়ারই কথা। সেই সুনীলই এদিন পেনাল্টি নষ্ট করলেন তাঁর পুরনো দলের বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই চোখে পড়ল অন্য মোহনবাগানকে। সহকারী কোচ ম্যানুয়েল পেরেজ আমনদীপকে তুলে নামালেন আশিস রাইকে। মনবীরদের ঝড়ের সামনে রীতিমতো উড়ে গেল বেঙ্গালুরু। ৫১ মিনিটে কাউকোর পাস থেকে গোল করলেন মনবীর। ঠিক তিন মিনিটের মাথায় দেখা গেল অনিরুদ্ধ থাপা আর পেত্রাতোসের যুগলবন্দি। ম্যাচের তৃতীয় গোল করে বেঙ্গালুরুকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিলেন অনিরুদ্ধ। ৫৯ মিনিটে মনবীর ফাঁকা গোলের সামনে বল সাজিয়ে দিলেন সাদিকুকে। এবার আর মিস হয়নি। অবশ্য তার পরেও গোল মিস করে হ্যাটট্রিকের সুযোগ মাঠেই ফেলে এলেন তিনি। গোলগুলো হয়ে গেলে স্কোরলাইন যে আরও হৃষ্টপুষ্ট হত, তা বলাই বাহুল্য।
[আরও পড়ুন: টানা তিন জয়ের পর হারের ধাক্কা! কলকাতায় ফিরেই কালীঘাটের মন্দিরে চার নাইট তারকা]
৪-০ গোলে জিতে মুম্বইয়ের জন্য অশনি সংকেত পাঠিয়ে রাখল মোহনবাগান। ২১ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে এক নম্বরে থাকলেও আশঙ্কায় থাকতে বাধ্য হবেন ছাংতেরা। সমসংখ্যক ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শিল্ডের লড়াইয়ে তাঁদের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন শুভাশিসরা। ১৫ এপ্রিল যুবভারতীতে মুখোমুখি হবে দুই দল। সেদিনই ফয়সালা হবে লিগ শিল্ডের। দিনটাকে এই মরশুমের ভারতীয় ফুটবলের 'ডি-ডে' বললেও বোধহয় ভুল বলা হবে না। সবুজ-মেরুন ভক্ত-অনুরাগীরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। নববর্ষের পরদিনই যুবভারতী যে সমর্থকদের শব্দব্রহ্মে উত্তাল হবে, তা এখন থেকেই বলে দেওয়া যায়।