স্টাফ রিপোর্টার: ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল মোহনবাগান ক্লাব। বাংলা কেন, সারা ভারতেরই কোনও ক্লাব যা করতে পারেনি, তাই করতে চলেছেন সবুজ-মেরুন কর্তারা। খুব দ্রুতই উদ্বোধন হবে ‘মোহনবাগান (Mohun Bagan) স্পোর্টস লাইব্রেরি’। আর এই স্পোর্টস লাইব্রেরির সঙ্গে সংযুক্তি রেখে প্রতি বছর শুধুমাত্র স্পোর্টস সম্পর্কিত বইগুলি নিয়ে হবে ‘ক্রীড়া বইমেলা’।
সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর এদিনই প্রথম কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে এসেছিলেন টুটু বোস। সচিব দেবাশিস দত্ত, সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষ, সৌমিক বোস, ফুটবল সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সহ-সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়সহ কার্যকরী কমিটির প্রায় সব সদস্যই এদিন উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সাব কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ‘স্পোর্টস লাইব্রেরি’ গঠন করার প্রসঙ্গটিও আলোচনা হয়। যা সঙ্গে সঙ্গে পাসও হয়ে যায়।
[আরও পড়ুন: ‘যতবার ডাকবে ততবার মাথা উঁচু করে আসব’, সিবিআইয়ের ম্যারাথন জেরার পর বার্তা শওকতের]
পরে সাংবাদিক সম্মেলনে দেবাশিস দত্ত (Debasis Dutta) বলছিলেন, ‘‘আমার তো মনে হয় শুধু বাংলা নয়, সারা ভারতেই কোনও ক্লাবের শুধু স্পোর্টস লাইব্রেরি নেই। সেদিক থেকে মোহনবাগান ক্লাব ইতিহাস তৈরি করতে চলেছে। সেখানে ক্রীড়া সাহিত্য নিয়ে শুধু পাঠকদের আগ্রহ মেটানোই নয়, ক্রীড়া গবেষকরাও মোহনবাগানের এই স্পোর্টস লাইব্রেরিতে এসে কাজ করতে পারবেন।’’
পরে কুণাল ঘোষও (Kunal Ghosh) বলেন, ‘‘মোহনবাগান ক্লাব একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে শুধু খেলাধুলো নয়, ক্রীড়া সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে। কত মানুষ ক্রীড়া গবেষণা করতে গিয়ে রেফারেন্স খোঁজেন। মোহনবাগানের স্পোর্টস লাইব্রেরিতে সেই সুযোগ থাকবে।’’ মিটিংয়ে যখন স্পোর্টস লাইব্রেরির প্রস্তাব পাস হয়, সেই মুহূর্তে ফুটবল সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় স্পোর্টসের বইগুলি নিয়ে ক্লাবেই একটি বইমেলা করার প্রস্তাব দেন। তখন ঠিক হয় স্পোর্টসের বইগুলি নিয়ে ক্লাব চত্বরেই একটি বইমেলা করা হবে। আর সেই বইমেলা দিয়েই উদ্বোধন হতে পারে মোহনবাগান ক্লাবের স্পোর্টস লাইব্রেরি। দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘স্পোর্টস লাইব্রেরি কবে উদ্বোধন হবে, এদিন সেই দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। তবে খুব দ্রুতই স্পোর্টস লাইব্রেরির উদ্বোধন এবং বইমেলার দিন ঠিক করে নেওয়া হবে।’’
আগের কার্যকরী কমিটির মিটিংয়েই মোহনবাগান সচিব জানিয়েছিলেন, হকি এবং অ্যাথলেটিক্সের মেন্টর হিসাবে সবুজ-মেরুনে যোগ দেবেন প্রাক্তন হকি তারকা অশোক কুমার এবং প্রাক্তন তারকা অ্যাথলিট সোমা বিশ্বাস। দু’জনেই এদিন কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ের পর সাংবাদিক সম্মেলনে অশোক কুমার বলেন, ‘‘আমি মোহনবাগান থেকে প্রচুর পেয়েছি। সেই মোহনবাগান আমাকে যখন হকি নিয়ে দায়িত্ব দিচ্ছে, আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব হকিতে মোহনবাগানকে সেরা দল হিসাবে গড়ে তুলতে।’’ সচিব জানান, হকি লিগ যে মাঠে হবে, সেই মাঠেই প্র্যাকটিস করবেন হকির খেলোয়াড়রা। অশোক কুমারের পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্সের দায়িত্ব পাওয়া সোমা বিশ্বাস জানান, সবে তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন। ক্লাবের অ্যাথলেটিক্স কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা করবেন। বলেন, ‘‘ইচ্ছা আছে আমাদের নথিভুক্ত অ্যাথলিটরা যে সেন্টারে প্র্যাকটিস করবে, সারা বছর আমরা তাদের মনিটরিং করব।’’
[আরও পড়ুন: বাংলা সফরের পরই সুকান্ত-অমিতাভদের দিল্লিতে তলব নাড্ডার! তুঙ্গে জল্পনা]
অশোক কুমার এবং সোমা বিশ্বাস সম্পর্কে মোহনবাগান সচিব বলেন, ‘‘অনেকে বলছিলেন, আমরা নাকি কমিটিতে প্রাক্তনদের রাখি না। মানস ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় আছেন। অশোক কুমার, সোমা বিশ্বাসদের সম্পর্কে নতুন করে পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই। এঁরা দু’জনই আজ প্রথম মিটিংয়ে এলেন। পরে নির্দিষ্ট কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা ঠিক করবেন।’’
সভাপতি টুটু বোসের কাছে স্বাভাবিকভাবেই সংবাদমাধ্যম জানতে চায়, এটিকে মোহনবাগান নাম নিয়ে তঁার মতামত। মোহনবাগান সভাপতি বলেন, ‘‘যে ভদ্রলোক প্রতি বছর পঞ্চাশ কোটি টাকা মোহনবাগানে দিচ্ছেন, তঁার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে কোনও লাভ হবে না। মোহনবাগান থেকে এটিকে নাম সরাতে হবে আলাপ-আলোচনা করে। পাশের ক্লাবে প্রতি বছর ইনভেস্টর নিয়ে গন্ডগোল। দল যখন আই লিগে খেলত, তখন এক রকম ছিল। কিন্তু আইএসএলে আমার একার পক্ষে প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। শুধু বাজে ব্যবহার করলেই হয় না, বাস্তবটাও বুঝতে হবে। এই মুহূর্তে ভাল ইনভেস্টর পাওয়া শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব ব্যাপার। নাম সরাতে হলে শুধু বিক্ষোভ, গালিগালাজ এসব করে লাভ হবে না। ভাল ব্যবহার দিয়ে, বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নাম সরাতে হবে। আমার বিশ্বাস, তাহলেই তিনি বুঝবেন।’’