সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কিলিয়ান এমবাপের শক্তিশালী ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নেমেছিলেন কাতার বিশ্বকাপে। এ লিগে কঠিন সব যুদ্ধও সহজেই জিতেছেন।
এদেশে আসার আগে এ লিগের গ্র্যান্ড ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্স ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল মেলবোর্ন সিটিকে।
সব ঠিকঠাক থাকলে ডুরান্ড-ডার্বিতে আবির্ভাব হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার জেসন কামিন্সের (Jason Cummings)।
সম্ভবত তাঁর বর্ণময় ফুটবল কেরিয়ারে প্রথমবার সমর্থকদের আবেগ ছুঁয়ে দেখতে পারবেন। অনুভব করতে পারবেন ভক্তদের ভালবাসা। সমর্থকদের ভালবাসা শরীরে জড়িয়ে বাঙালির বড় আবেগের যুবভারতীতে নেমে পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
[আরও পড়ুন: গুরুতর অসুস্থ লিয়েন্ডার পেজের মা জেনিফার পেজ, ভরতি হাসপাতালে]
কামিন্স যে শুরু থেকেই শনিবার নামবেন, এমন নিশ্চয়তা এখনও পর্যন্ত দেননি তাঁর দলের কোচ জুয়ান ফেরান্দো। অবশ্য এই ধরনের হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে কোনও দলের কোচই তাঁর সেরা অস্ত্র সম্পর্কে খুল্লমখুল্লা মন্তব্য করেন না। কখন তাঁকে নামাবেন, কোন ভূমিকায় তাঁকে দেখা যাবে, সে সম্পর্কে আগবাড়িয়ে শব্দ খরচ করবেন না কোনও কোচই। ফেরান্দোও ব্যতিক্রম নন।
কে না জানেন, কামিন্স শুরু করলে প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) একধরনের ছক। কামিন্স না থাকলে লাল-হলুদ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের (Carles Cuadrat) রণকৌশল অন্য। কামিন্স পরিবর্ত হিসেবে নামলে আরেক ধরনের যুদ্ধকৌশল।
ফলে ডার্বি-যুদ্ধের প্রায় ৪৮ ঘণ্টা আগে মোহনবাগান (Mohun Bagan) কোচ ফেরান্দো (Juan Ferrando) কীভাবেই বা আগেভাগে তাঁর দলের বিশ্বকাপার সম্পর্কে সব তথ্য তুলে দেন।
তবে পরিস্থিতি যা তাতে ডার্বিতেই মোহনবাগানের জার্সিতে অস্ট্রেলিয়ান বিশ্বকাপারের অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ডার্বি ম্যাচের যে কোনও মুহূর্তে তাঁকে নামানো হতে পারে। এমনও হতে পারে শুরু থেকে না নামিয়ে তাঁকে পরিবর্ত হিসেবে নামালেন ফেরান্দো। কামিন্স তখন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের পরীক্ষা নেবেন।
এবারের কলকাতা লিগ বিদেশিহীন। ফলে কামিন্স কতটা তৈরি তা দেখার উপায় কিন্তু আর নেই ফেরান্দোর। ডার্বি যুদ্ধের পরই রয়েছে এএফসি প্রিলিমিনারি এবং প্লে অফ পর্যায়ের ম্যাচ। চলতি মাসের ১৬ এবং ২২ তারিখ রয়েছে সেই খেলা।
গতবারের মোহনবাগান দলের সঙ্গে এবার যে সংযোজন এবং বিয়োজন করা হয়েছে, তার উদ্দেশ্য কিন্তু এএফসি কাপে ভাল কিছু করা। আইএসএলে সোনা ফলানোও লক্ষ্য অবশ্যই।
এএফসি কাপের দক্ষিণাঞ্চল পর্বের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে সবুজ-মেরুনের প্রথম প্রতিপক্ষ নেপালের মাচিন্দ্রা এফসি (Machuindra FC)।
[আরও পড়ুন: ফের পিছিয়ে গেল সুকন্যা মণ্ডলের জামিনের মামলা, মেয়ের খবর পেতে হয়রান অনুব্রত]
এদিকে মোহনবাগান বনাম মাচিন্দ্রা এফসি ম্যাচের দিনেই বাংলাদেশের আবাহনী লিমিটেড ঢাকার মুখোমুখি হবে মলদ্বীপের ক্লাব ঈগলসের।
মোহনবাগান প্রথম ম্যাচ জিতলে সেই ম্যাচের বিজয়ীদের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে। এএফসি-র পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, মোহনবাগান প্রথম ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলার পর ২২ আগস্ট দ্বিতীয় ম্যাচও যুবভারতীতেই খেলবে।
ফলে এএফসি কাপে নামার আগে কামিন্সকে ভাল করে দেখে নেওয়ার, তাঁকে এখানকার জলহাওয়ার সঙ্গে তৈরি করে নেওয়ার শেষ সুযোগ ডুরান্ড ডার্বিতেই।
কারণ মোহন-ইস্ট ম্যাচের উত্তেজনা, তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া আবেগ, স্ট্র্যাটেজির কচকচানি, প্রতিমুহূর্তে ম্যাচ রিড করা, প্রতি পল, অনুপলে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে যাওয়া আর অন্য কোনও ম্যাচে এমন হয় না। হওয়া সম্ভবও নয়।
তা যতই শেষ আট ডার্বি যুদ্ধে মোহনবাগান জিতুক, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল শেষ আট ডার্বিতে ১৮টি গোল হজম করুক না কেন, এই একটা ম্যাচ কোনও হিসেবের ধার ধারে না। সেই কারণে ডার্বি যুদ্ধের আগে দুই দলের কোচই সংযত। করতে থাকেন নিরন্তর চিন্তাভাবনা, কষতে থাকেন নানান অঙ্ক।
হতেই পারে শনিবারের ডার্বি যুদ্ধের যে কোনও সময়ে, যে কোনও মুহূর্তে ফেরান্দো তাঁর আস্তিন থেকে বের করলেন কামিন্সকে।
কলকাতার মাঠে এর আগেও বিশ্বকাপার খেলেছেন। তাঁরা ঔজ্জ্বল্যও ছড়িয়েছেন। কিন্তু জেসন কামিন্স তো খোলা হাওয়া। সদ্য বিশ্বকাপ খেলে এসেই নেমে পড়ছেন এদেশের মাঠে, এমন তো খুব একটা অতীতে হয়নি।
কামিন্সের অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন মোহন-সমর্থকরা। এই কামিন্সের জন্যই এ লিগে গ্র্যান্ড ফাইনালের দিকে চোখ লাগিয়ে বসেছিল সবুজ-মেরুন বিশ্ব। সেই কামিন্স এখন মোহনবাগানের অহংকার, মোহনবাগানের গর্ব।
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার এদেশে আসার আগেই তাঁর ভাই ডিন কামিন্স জানিয়েছিলেন, তাঁর ভাইয়ের বাঁ পা কথা বলে। যে কোনও মূহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন কামিন্স।
আর যাঁকে নিয়ে এত উত্তেজনা, এত উন্মাদনা, এত স্বপ্ন দেখা, সেই জেসন কামিন্স সবুজ-মেরুনে সই করেই বলেছিলেন, ”মোহনবাগানের ক্যাবিনেটে আরও ট্রফি দিতে পারব বলেই আশাবাদী আমি।”
বাঙালির বড় আবেগের, বড় প্রিয় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অতীতে বহু ইতিহাস লেখা হয়েছে। বহু তারকা তাঁদের জাদু দেখিয়েছেন।
শনিবারের যুবভারতী হোক কামিন্সের। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিটি সবুজ ঘাসে লেখা হোক কামিন্সের নাম। যুবভারতী গর্জে উঠুক কামিন্স-কামিন্স শব্দব্রহ্মে।
ডার্বি রাঙিয়ে দিন অস্ট্রেলিয়ার বিপজ্জনক স্ট্রাইকার। এই আশায় বুক বাঁধছেন মোহনবাগান সমর্থকরা।
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের প্রস্তুতির মাঝেই ইডেনের ড্রেসিংরুমে আগুন, ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা]