শ্রদ্বেয় এবং প্রেমময় আধ্যাত্মিক গুরু রবি শংকর বহু অন্তর্দৃষ্টিমূলক বার্তা দিয়েছেন, যা সুখি দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি। এখানে রইল তেমনই গুরুত্বপূর্ণ ১০ টিপস্।
১. আধ্যাত্মিক গুরু প্রত্যেক পার্টনারকে কমন উদ্দেশ্যর কথা বলেছেন। যেমন “একে অপরের দিকে অতিরিক্ত দৃষ্টিপাত না করলেই ভালো। প্রত্যেকের নিজস্ব লক্ষ্য থাকা উচিত। কল্পনা করে দেখো, দুটো লাইন পাশাপশি চলে, তারা সারা জীবনই একসঙ্গে চলে। কিন্তু যদি তারা একে অপরের দিকে বেশি দৃষ্টি বা ফোকাস করে তখনই মিলিত হয় এবং একে অপরকে ক্রস করে এগিয়ে যায়। তাই সর্বক্ষণ ‘পুলিশ’ (নজর রাখা) হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকের একটি উদ্দেশ্য বা ফোকাস থাকা দরকার। তাহলেই সম্পর্ক অনন্তর দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।”
২. প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুদেব নিজেদের অন্তর্নিহিত গুণের কথা বলেছেন । তিনি বলেন, “অপরকে বিচার করার আগে দেখে নাও তুমি তাঁর সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কে যুক্ত, কত বড় হৃদয় আছে তোমার, কতটা অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছ, কতটা তুমি অপরকে উৎসাহিত করতে পারো।”
[আরও পড়ুন: শর্তসাপেক্ষে মিলল ত্রিবেণী কুম্ভমেলার অনুমতি, জেনে নিন শাহি স্নানের দিনক্ষণ]
৩. অবদানের জায়গা থেকে বেরিয়ে এসো। গুরুদেব বলেছেন, “একটি সম্পর্ক অবদান থেকেই আসে, চাওয়া পাওয়া থেকে নয়। তবেই সম্পর্কটি দীর্ঘস্থায়ী ও লালিতপালিত হয়। কিন্তু যদি প্রতিটি সম্পর্ক এই ভাবনার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, যে অপরের থেকে আমি কি পেতে পারি, তাহলেই বিরক্তির সৃষ্টি হয়। তুমি যখন অন্য ব্যক্তির জীবনের জন্য কী করতে পারো, এই কথা ভাববে, তখনই সম্পর্ক উজ্জ্বল ও ঝকমকে হয়ে উঠবে।” এবং “সফল সম্পর্কের চাবিকাঠি হল সেবা। এক অপরিহার্য অঙ্গ। একটি সম্পর্ক চাওয়া-পাওয়ার হিসেব থেকে বেরিয়ে যখন শুধুমাত্র প্রয়োজনের দিকে আলোকপাত করে তখনই তা একটি উন্নত মানের সম্পর্কে পরিণত হয়।
৪. প্রত্যেকের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা দরকার। গুরুদেব বলেছেন “যদি প্রতিটি মানুষের মধ্যে একে অপরের প্রতি বিনম্রতা এবং শ্রদ্ধা ভাব থাকে তাহলেই সম্পর্কে স্থায়ীত্ব আসে।”
৫. কেন্দ্রস্থ থাকো। গুরুদেব সঠিক ব্যক্তিদের আকর্ষণ করার এক গোপন তথ্য দিয়েছেন। “শুধুমাত্র কেন্দ্রস্থ থাকো। যখন তুমি কেন্দ্রস্থ হবে তোমার সংকল্পই তোমার কাছে ফিরে আসবে। সত্যিকারের ভালোবাসা সেখানে, যেখানে তুমি অন্যদের কাছ থেকে কিছু আশা করো না। তুমি তাঁদের তাই দেবে, যা তুমি দিতে পারবে এবং যা তাঁদের প্রয়োজন। তুমি কাউকে গভীরভাবে ভালোবাসো কিন্তু সে তোমাকে ভালবাসে না, এটা ভেবে নিজেকে বোকাদের দলে ফেলো না। একটু ভেবে দেখো। নিজেকে চেনো। তুমি অন্যদের কাছ থেকে কিছু লোভ লালসা করে ফেলছ!”
[আরও পড়ুন: সরস্বতী পুজোয় ভুলেও এই কাজগুলি নয়, জানুন দেবীর আশীর্বাদ পেতে কী করবেন]
৬. অপরকে দোষী করে আনন্দ পেও না। অপরকে দোষী ভাবতে উৎসাহিত কোরো না। বন্ধুত্বের বন্ধন স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। তাই অপর ব্যক্তির মধ্যে অপরাধী ভাব জাগিয়ে না তুলে তাঁদের ভুল সম্পর্কে অবগত করো। আমাদের সাধারণ প্রবণতা থাকে ওপরের মধ্যে অপরাধবোধ জাগিয়ে তোলা এবং মনে মনে খুশি হওয়া। আমাদের সকলকে এর অনেক ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। তাহলেই সম্পর্কগুলো অনেক দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
৭. প্রতিটি মানুষের জন্য একটাই উপদেশ- স্বাভাবিক থাকো। “সব থেকে ভালো হল কোনও সম্পর্ককে গড়ে তোলার চেষ্টা না করা। শুধুমাত্র নিজের সঙ্গে থাকো, স্বাভাবিক থাকো, সম্পর্ক নিজেই গড়ে উঠবে। যখন তুমি সম্পর্ককে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে, সেটি আর্টিফিশিয়াল সম্পর্কে পরিণত হবে। তোমার ব্যবহারও অস্বাভাবিক হয়ে যাবে। অন্যরা কিন্তু এই ব্যাপারটাকে লক্ষ্য করে।”
৮. ভালবাসাকে সর্বদা টিকিয়ে রাখার একটি উপায়…. ” তোমার প্রতি অন্যের ভালোবাসাকে সন্দেহ কোরও না। বরং তা গ্রহণ করো। প্রত্যেকে তোমায় ভালোবাসে এটাই বিশ্বাস রেখো।”
৯. ভালোবাসার কাঙাল হয়ো না। ভালবাসাকে দেখার এক বৈপ্লবিক ভঙ্গি গুরুদেব বলেছেন — ” তুমি যার থেকেই ভালোবাসা পাও, জানবে তাই-ই ঐশ্বরিক প্রেম। তুমি সর্বশক্তিমান এক শক্তির কাছ থেকে ভালোবাসা পাচ্ছ, সেই ব্যক্তি মিথ্যে হোক বা সত্যি হোক, সঠিক বা ভুল হোক মনের কোন ফাঁদে পড়ে যেও না।”
১০. ভালোবাসা কোন অনুভূতি নয়। আমরা সারা জীবন কাটিয়ে দিলাম একটা এটা বিশ্বাস করে। কিন্তু গুরুদেব বলেছেন এই সত্যি—ভালোবাসা কোনও অনুভূতি নয়, ভালোবাসা হল তোমার অস্তিত্ব।