সুকুমার সরকার, ঢাকা: বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সদ্য অনুপ্রবেশকারীদের দাবি, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনারা এখনও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। যারা এখনও সেখানে আছে তাদের ‘ক্রীতদাস’ বানিয়ে রাখা হয়েছে। নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় আছেন রাখাইনের বাকি রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারের একাধিক ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন, ‘নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপেক্ষায় আছেন। প্রায় প্রতি রাতে একাধিক দল বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। তাদের অধিকাংশই নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। ৩০০ রোহিঙ্গা মায়ানমার সীমান্তের বন-জঙ্গলে দিন গুনছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সুযোগের। টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আবদুল মতলব বলেন, ‘রাখাইনের যেসব রোহিঙ্গা এখনো বাংলাদেশে আসতে পারেননি, তাদের আসলে আটকে রাখা হয়েছে। সেনারা তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে, স্থানীয় হাটবাজারেও তাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে খাবারের সংকটে রয়েছেন রোহিঙ্গারা। এ কারণে সুযোগ পেলেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে সদ্য অনুপ্রবেশকারীরা জানিয়েছেন, সেখানে সেনারা বড় আকারে জুলুম না করলেও ভিতরে ভিতরে কৌশলগত জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে।
[বাংলাদেশে নির্বাচনের মুখে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির বই ঘিরে তোলপাড়]
রাখাইনের রাজধানী শিত্তুই বা আকিয়াব, রাথিডং, মংডুসহ পুরো রাজ্যের ১৭টি ‘টাউনশিপে’ পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা আছেন। রোহিঙ্গারা যে হারে অনুপ্রবেশ করছেন, তাতে একদিন সবাই বাংলাদেশে চলে আসবেন। রাষ্ট্রসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) দেওয়া তথ্য মতে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনে নাফ নদী পেরিয়ে ৫৩১ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। আগস্টে ২৫৬ জন ও জুলাইয়ে ৪১৩ জন এসেছেন। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে জিরো টলারেন্সে রয়েছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রোহিঙ্গারা এখনো নৌকায় করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত শুক্রবার নাফ নদী পেরিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় সাত রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা ‘পুশব্যাক’ করা হয়েছে।
[ধাক্কা খেল মায়ানমার, রোহিঙ্গা নিধনে তদন্ত শুরু আন্তর্জাতিক আদালতের]
অন্যদিকে, রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন, আইসিসি (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) নিজেই মায়ানমারের বিচারে সক্ষম। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সদর দপ্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারের বিচার করার পক্ষে দেওয়া আইসিসির মতামতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, এরইমধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমারকে মোকাবিলার সামর্থ্য প্রমাণ করেছে আইসিসি। মায়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সনদে স্বাক্ষর করেনি। সে কারণে সরাসরি সে দেশে সংঘটিত অপরাধ বিচারের এখতিয়ার আইসিসির নেই। সনদে স্বাক্ষর না করা দেশকে আইসিসি তখনই বিচারের আওতায় নিতে পারে, যখন নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়। তবে মায়ানমারের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত এসেছে আইসিসির পক্ষ থেকে। আইসিসির প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদার করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগে সংস্থাটির তিনজন বিচারক বিশিষ্ট প্রি-ট্রায়াল কোর্ট মায়ানমারের বিচারের পক্ষে রায় দেয়।
[সাংবাদিকদের সাজার সমর্থনে সু কি, বিশ্বমঞ্চে কাঠগড়ায় মায়ানমার]