কলহার মুখোপাধ্যায়: এ তো পুরো ভুল-ভুলাইয়া। চিনে নামতে পারব তো! ঘুটঘুটে অন্ধকার। সিঁড়ি দেখা যাচ্ছে না। তারই মাঝে ডাঁই করা প্লাস্টিকের খেলনা, পারফিউম, ওষুধের বস্তা। হাতে টর্চ নিয়ে উপরে ওঠার সময় আশঙ্কার কথা দমকল কর্মীর গলাতেই।
আগুনের গ্রাসে তখন বাগরি মার্কেটের তিনটি তলা। জল দেওয়ার জায়গা খুঁজতে পাশের লক্ষ্মী-কাটরা বিল্ডিংয়ে উঠছিলেন ওই দমকল কর্মী। উঠতেই হোঁচট খেতে হল তাঁকে। গুটিকয়েক পরিবারের বাস বিল্ডিংয়ের চারতলায়। বাকিটা পুরোটাই গোডাউন, দোকান। দাহ্য বস্তুতে ভরপুর। বাড়ির ভিতরে পুরনো গাছের ঝুরি, শ্যাওলা। “যেন জতুগৃহ। খুব একটা আলাদা নয় বাগরি মার্কেটের অন্দরের চিত্রের সঙ্গে। ইলেকট্রিকের তার, যেখানে সেখানে সিলিন্ডার। এই ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে যে ব্যবসা চলে কে জানে!” দমকলকর্মী কথাতেই বুঝিয়ে দিলেন, কিছু ঠিক নেই সেখানে।
[ ২৮ ঘণ্টা পরও জ্বলছে বাগরি মার্কেট, বিল্ডিং ভেঙে পড়ার আশঙ্কা]
শুধু এই বহুতলই না, বাগরি মার্কেটের আশপাশের মেহতা বিল্ডিং, ভগবানদাস বিল্ডিং, কাজোরিয়া বিল্ডিং, সুবল কাটরা বিল্ডিং, অমরটোলা লেনের একাধিক বহুতলের চিত্রটা অনেকটা একই। ঘরের ভিতরে ঘর, আবার কোথাও কুঠুরি। অভিযোগ, নিয়ম বহির্ভূতভাবেই ব্যবসা চলে বছরের পর বছর ধরে। গোটা বিল্ডিংয়ের নব্বই শতাংশ জুড়েই দাহ্য পদার্থ মজুত। নামে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আছে, কিন্তু তা কাজ করে না অধিকাংশ সময়। এখানকার দোকান—গোডাউন যে ব্যবসার নাম করে নেওয়া হয়, অধিকাংশ তার বাইরেও অন্য পণ্য মজুত রাখে। পাঁচ—ছয় তলার মার্কেটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণও হয় না ভাল করে। বছরের পর বছর একইভাবে দাঁড়িয়ে পাইকারি ব্যবসার রং চটা কেন্দ্রস্থল। “বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক, প্লাস্টিক, ওষুধ, কী নেই এখানে! তাই আগুন লাগলে নিভবে কী করে।”, প্রশ্ন এক ব্যবসায়ীর গলাতেই। পাশের বিল্ডিং যখন আগুনের গ্রাসে, সেই সময় পণ্যসামগ্রী সরাতে ব্যস্ত আশপাশের বহুতলে থাকা গোডাউনের মালিকরা। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছিলেন কাজ। লক্ষ্মী কাটরা বিল্ডিংয়ের চারতলায় নিজেদের গোডাউন থেকে প্যাকেট করা সামগ্রী বের করতে ব্যস্ত তখন কোঠারী পরিবার। পরিবারের সদস্য রাখি কোঠারীর তখন কথা বলার সময় নেই। তবু বললেন, “যেভাবে আগুন লেগেছে ভয় তো হবেই। তাই যা ছিল বের করে নিচ্ছি।” তাঁকে সাহায্যে ব্যস্ত পরিবারের অন্য সদস্য এবং গোডাউনের কর্মীরা।
ঘিঞ্জি এলাকা। এক বিল্ডিংয়ের সঙ্গে পাশেরটার ফাঁক এক হাতও নয়। কোনওটা আবার জোড়া লাগানো। ঘরের ভিতরের ঘরে মজুত নানা রাসায়নিক, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। সামনেই জ্বলে দেশলাই, কোথাও আবার চলে গ্যাস জ্বালিয়ে রান্নাবান্নাও। অনেকটাই লুকানো। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিল্ডিংয়ের মালিককে দেখাই যায় না। ফলে কী করতে হবে, তা তাঁরা কাউকে বলতে পারেন না। ঝুঁকি নিয়েই চলে ব্যবসা।
ছবি: পিন্টু প্রধান
[রুজি রোজগার কেড়ে নিল আগুন, মাথায় হাত মুটে-ভ্যানচালকদের]
The post বাগরি মার্কেটের আশপাশেও একই চিত্র, গ্যাস জ্বালিয়ে রান্নাবান্না চলে বহুতলেই appeared first on Sangbad Pratidin.