সুকুমার সরকার, ঢাকা: সাফল্য মিলেছিল এক যুগ আগেই। আর সেই অনুপ্রেরণায় এবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাঁচটি হাট বসতে চলেছে। সীমান্ত এলাকায় মানুষজনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটাতে বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ (Bangladesh) এবং ভারত সরকার সীমান্তে বর্ডার হাট স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। আরও বেশি সংখ্যক সীমান্ত হাট চালু করার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তাবটি অনিশ্চিত ছিল। দীর্ঘদিন পর এবার তা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। আর এর ফলে উপকৃত হবেন ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা। এতে কিছুটা হলেও অন্তত: চোরাচালানে রাশ পড়বে এমনটাই আশাবাদী সংশ্লিষ্ট মহল। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার জিরো পয়েন্টে চালু হতে চলেছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হাট (Border Hut)।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাঁচটি হাট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে মালদহ-রাজশাহীর (Maldah-Rajshahi) এই সীমান্ত হাটটি চালু হতে চলেছে। সীমান্ত এলাকার আরও চারটি জিরো পয়েন্টকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার হাটের জন্য চিহ্নিত করেছেন। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটের সঙ্গে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সীমান্ত, উত্তরবঙ্গের হিলি সীমান্ত, বেনাপোল-পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকা এবং নদিয়া জেলার গেদে-দর্শনা সীমান্ত এলাকা।
[আরও পড়ুন: বীরভূমের জোড়া বিস্ফোরণের তদন্তে NIA, সিআইডি-কে দ্রুত নথি হস্তান্তরের নির্দেশ হাই কোর্টের]
এদিকে সীমান্ত হাটের জন্য দরকার জমি। ভারতীয় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আইন অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের। ফলে দুই দেশের কেন্দ্রীয় সরকার একমত হলেও ভারতের মোদি সরকারকে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত প্রাথমিক বিষয়ের ক্ষেত্রেও তাকিয়ে থাকতে হবে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকারের দিকেই। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মিলেছে সবুজ সংকেত। আপাতত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাট তৈরির জন্য দুই দেশের জমিই অধিগ্রহণ করা হবে। জিরো পয়েন্ট লাগোয়া বাংলাদেশের ৭৫ মিটার জমি ও পশ্চিমবঙ্গের ৭৫ মিটার জমি অধিগ্রহণ করে যৌথভাবে তৈরি হবে এই হাটবাজার। দুই দেশের সীমান্ত এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী বাসিন্দারা এই বাজারে তাদের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করতে পারবে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী থাকবে নিরাপত্তার দায়িত্বে।
এই হাটে সীমান্ত এলাকায় উৎপাদিত সবজি, খাদ্যশস্য, মিষ্টি, মাছ, মাংস, ডিম বিক্রি হবে। এছাড়া প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য, জামাকাপড়, শাড়ি-সহ একাধিক সামগ্রী বিক্রির সুপারিশ রয়েছে ভারতের সরকারি তালিকায়। আগামী ছয় মাসের মধ্যেই প্রথম হাট শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের।আর আশা করা পশ্চিমবাংলার মানুষরা সহজেই পাবেন পদ্মার ইলিশ। আর বাংলাদেশের বাসিন্দাও সহজে পেয়ে যাবে ভারতের পণ্য সামগ্রী। বিশেষভাবে উপকৃত হবেন উভয় বাংলার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। তাদের উৎপাদিত ফসল আর দূরে কোথাও নিয়ে যেতে হবে না। দরকার সীমান্তেই বেচা-কেনা পারবেন।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে কালবৈশাখীর তাণ্ডব, মৃত অন্তত ৯]
এদিকে বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চারটি হাট চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কালীচরণ ও বালাটে দুটি এবং ত্রিপুরা রাজ্যের শ্রীনগর ও কমলাসাগরে দুটি। সীমান্তের এই হাটে মূলত পণ্যের সম্ভার নিয়ে বসতে পারে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের মানুষজন।