অর্ণব আইচ: এ যেন রূপকথার সোনার (Gold) কাঠি। এর ছোঁয়ায় যেন জেগে উঠবে রাক্ষসপুরীর ঘুমন্ত রাজকন্যা।
বড়বাজারের দু’টি সোনার গদিতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে একটু অবাকই হয়েছিলেন শুল্ক দপ্তরের গোয়েন্দারা। সিন্দুকের ভিতর পরপর সাজানো সোনার কাঠি। তার সঙ্গে রয়েছে সোনার বাটও। একে একে গোয়েন্দাদের হাতে উদ্ধার হয় ১৫টি বিভিন্ন মাপের সোনার কাঠি। তার সঙ্গে উদ্ধার হয় সোনার বাটও। শুল্কদপ্তরের একটি শাখার অভিযানে বড়বাজারের সোনাপট্টি থেকে উদ্ধার হল মোট ৯ কিলো ২০.৪৬ গ্রাম সোনা। এর দাম ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার শুল্ক দপ্তরের ‘এসআরআই’ বিভাগের আধিকারিকদের কাছে খবর আসে যে, বিদেশ থেকে বড়বাজারে পাচার হয়েছে চোরাই সোনা। সেই মতো একটি সোনার গদিতে গিয়ে হাজির হন গোয়েন্দারা। নামে গদি হলেও আসলে সেটি কারখানা বলে দাবি গোয়েন্দাদের। পাশাপাশি দু’টি কারখানায় সোনার বাট ও বিস্কুট গলানো হয় বলে অভিযোগ। ওই কারখানায় হানা দিয়ে গোয়েন্দারা দেখতে পান, চলছে সোনা গলানোর কাজ। একাধিক সিন্দুক থেকে উদ্ধার হয় প্রায় এক কিলোর বেশ কিছু সোনার বাট। কয়েকটি আবার ভাঙা। তারই সঙ্গে বেরিয়ে আসে সোনার কাঠিগুলি।
[আরও পড়ুন: পাড়ায়-পাড়ায় বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা এখন আরও সহজ, বিধানসভায় পাশ বিল]
গোয়েন্দারা জানতে পারেন, সম্প্রতি চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে সোনার বাট ও বিস্কুট সোনা পাচারের এজেন্টরা নিয়ে আসে কলকাতায়। সেখান থেকে এই বিদেশি সোনা আসে বড়বাজারে। সোনাপট্টির ওই কারখানার মালিক ওই সোনাগুলি কিনে গলাতে শুরু করেন। সোনার বাট পরিণত হয় ‘রূপকথা’র সোনার কাঠিতে। কাঠিগুলির উৎস সহজে বোঝারও উপায় থাকে না। গোয়েন্দারা ওই সোনার বাট বা কাঠির সমর্থনে কোনও নথিপত্র পাননি। সন্ধান মেলেনি কারখানার মালিকেরও।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, ওই মালিকের বড়বাজারে একটি সোনার দোকান আছে। সোনার বাট ও বিস্কুট থেকে প্রথমে সোনার কাঠি এবং তা থেকে পরে গয়না তৈরি হত। তার একটি অংশ বিক্রি হত ওই দোকানে। গয়নার বাকি অংশ ফের পাচার করা হত বাংলাদেশে। কারণ, বাংলাদেশে ভারতীয়, বিশেষ করে কলকাতায় তৈরির সোনার গয়নার বিশেষ চাহিদা রয়েছে। গোয়েন্দাদের মতে, বড়বাজারের আরও বেশ কিছু গদি বা দোকানে চোরাই সোনা গলানো হচ্ছে। চোরাই সোনার খোঁজে এবার সেই গদি ও দোকানগুলির সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন শুল্কদপ্তরের গোয়েন্দারা।