অর্ণব দাস, বারাসত: আদালতই মানুষের শেষ ভরসা। কোনও বিবাদের সহজ-সরল সমাধান না হলে 'আদালতে দেখা হবে' বলে হুঙ্কার দেন অনেকেই। কিন্তু আদালতে মামলা করলেই তো আর সমাধান হয় না। আদালতের '১৮ মাসে বছর'! দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে যে পরিমাণ মামলা অমীমাংসিত হয়ে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আদালতগুলিতে, তার সংখ্যা শুনলে চোখ কপালে উঠবে। সবমিলিয়ে সংখ্যাটা সাড়ে ৩৩ লক্ষ! ফলে কোর্টে গিয়েও সুরাহা না মেলায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এর মূল কারণ, পর্যাপ্ত বিচারকক্ষ নেই জেলা আদালত বা মহকুমা আদালত গুলিতে। বছর পাঁচেক আগে বিধাননগরে একটি আদালত তৈরির পাশাপাশি ১৮টি বিচারকক্ষ তৈরির প্রস্তাব হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু এখন তা বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া আদালতে পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবও একটি বড় সমস্যা বলেই অভিযোগ রয়েছে।
বারাসত আদালতে বিচারকক্ষের সংখ্যা কম। তাই শুনানিতে এত দেরি।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় রয়েছে মোট চারটি আদালত। তার মধ্যে একটি বারাসত জেলা আদালত। বাকি তিনটি বারাকপুর, বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমা আদালত। তবে বারাসত পুলিশ জেলার ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অধিকাংশ থানার মামলা বারাসত জেলা আদালতে ওঠার কারণে এখানে চাপ বেশি। সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন কলকাতা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার বিভাসরঞ্জন দে রাজ্য সরকারকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসত জেলা আদালতের ৮টি, বারাকপুরের ৪টি, বসিরহাটে ১টি ও বনগাঁয় ১টি বিচারকক্ষ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এছাড়া বিধাননগরে নতুন একটি আদালত তৈরি করে ৪টি বিচারকক্ষ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবের বাস্তব রূপায়ণ না হওয়ায় ঝুলে রয়েছে লক্ষাধিক মামলা।
আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চারটি আদালত মিলিয়ে 'পেন্ডিং কেস'-এর সংখ্যা ৩৩ লক্ষ ৩১ হাজার ৪২টি। এর মধ্যে ফৌজদারি মামলার সংখ্যাই প্রায় ২৭ লক্ষ। শুনানি আটকে রয়েছে কমবেশি সাড়ে ১৬ হাজার মামলার। দিনদিন ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই প্রসঙ্গে বারাসত জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আলোক সমাজপতি জানিয়েছেন, ''বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। মানুষ বিচার পাচ্ছেন না, এটা ভীষণ উদ্বেগের। আমরা চাই, জেলায় দ্রুত ১৮টি বিচারকক্ষ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হোক। না হলে খুব শীঘ্র আমরা আন্দোলনের পথে নামব।''