রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: সন্ধে তখন ৮টা-সাড়ে ৮টা। খবরটা পৌঁছায় রায় পরিবারের কাছে। দেশের জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন ছেলে বিপুল রায়। চোখের কোণ দিয়ে জল বেয়ে আসে মায়ের। ডুকরে কেঁদে ওঠেন স্ত্রী। শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন বাবা ও ভাইও। বছর পাঁচেকের মেয়ে বুঝতেও পারেনি, কত বড় ঘটনা ঘটে গিয়েছে। কতখানি শূন্যতা তৈরি হল পরিবারে। গ্রামের প্রিয় ছেলেকে হারিয়ে বুধবার সকাল থেকে বিন্দি পাড়ায় যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা।
সোমবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পূর্ব লাদাখের ভারত-চীন সীমান্ত। গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সেনা সংঘর্ষে শহিদ হন অন্তত ২০জন ভারতীয় জওয়ান। যাঁদের মধ্যে ছিলেন আলিপুরদুয়ারের শামুকতলা থানার অন্তর্গত বিন্দি পাড়ার বিপুল রায়ও। টিভির পর্দায় চোখ রেখে জানতে পেরেছিলেন কাঁটাতার লাঠিতে জড়িয়ে ভারতীয় সেনাদের মারধর করা হচ্ছে। খবরটা পাওয়ার পর বোঝেন দেশসেবায় নিযুক্ত স্বামীও সেই অত্যাচারিতদের তালিকায় ছিলেন। চিনা সেনার নৃশংসতায় এক নিমেষে শেষ হয়ে গেল সাত বছরের দাম্পত্য জীবন। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী।
[আরও পড়ুন: কেন গালওয়ানের দখল নিতে মরিয়া চিন? জেনে নিন সত্যিটা]
এদিন সকাল থেকেই শহিদ বিপুল রায়ের বাড়ির সামনে ভিড় জমান স্থানীয়রা। বাবা-মা, ভাইকে সহানুভূতি জানান তাঁরা। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, গত ডিসেম্বরে শেষবার বাড়ি এসেছিলেন বিপুল রায়। তারপর লকডাউনের জন্য আর আসা হয়নি। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই মন খারাপ গোটা গ্রামের। তিনি বলেন, “খুব খোলা মনের হাসি-খুশি মানুষ ছিল বিপুল। এলেই পাড়ার সকলের সঙ্গে দেখা করত। খবরটা শুনে তাই সকলেই মর্মাহত।”
ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বীর শহিদের বাড়িতে পৌঁছেছে। দু-এক দিনের মধ্যেই তাঁর নিথরদেহ গ্রামে পৌঁছবে বলে জানা গিয়েছে। লকডাউনের জন্য ইচ্ছা থাকলেও আসতে পারেননি বিপুল রায়। তবে করোনা আবহেই স্ত্রী ও মেয়ের কাছে ফিরবেন। পার্থক্য একটাই। এবার আসবেন কফিনবন্দি হয়ে। চিরবিদায় জানাতে।
[আরও পড়ুন: ‘জওয়ানদের বলিদান ব্যর্থ হবে না’, চিনকে কড়া বার্তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির]
The post ৫ বছরের মেয়েকে জড়িয়ে ধরা হল না, কফিনবন্দি হয়ে ফিরছেন লাদাখে শহিদ বাঙালি সেনা appeared first on Sangbad Pratidin.