সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: নতুনভাবে জঙ্গলমহলে সশস্ত্র স্কোয়াড গড়ার পরিকল্পনা ভেস্তে গেল মাওবাদীদের। মগজধোলাই-এ নতুন সদস্যদেরকে সংগঠনে টেনে একটি চূড়ান্ত বৈঠকের মধ্য দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র হাতে তুলে দেওয়ার ছক কষা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য পুলিশের তৎপরতায় সেই মাও নীল নকশা বানচাল। পুলিশের জালে মোস্ট ওয়ান্টেড সিপিআই (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বেঙ্গল ইনচার্জ সব্যসাচী গোস্বামী। ওরফে বাবু ওরফে কিশোর ওরফে পঙ্কজ ওরফে অজয়। তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলা থানা এলাকার এইচ বি সোদপুর রোড ৬ নম্বর এলাকায়। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ তার মাথার দাম রেখেছে ১০ লক্ষ টাকা।
উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলার করিডর তৈরির পরিকল্পনা ছিল মাওবাদীদের। যার দায়িত্ব দেওয়া হয় এই শীর্ষ নেতাকেই। ২০২২ সালের মার্চ মাসে অসমের গুয়াহাটিতে উত্তর পূর্ব ভারতে মাও কার্যকলাপ নিয়ে একটি মামলা রুজু হয়। তার পরই এনআইএ মাথার দাম ধার্য করে। বর্তমানে ওই শীর্ষ মাওনেতা ইস্ট্যার্ন রিজিওনাল বুরোর সদস্য ছিলেন। জঙ্গলমহল পুরুলিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এই কাজকে বড়সড় সাফল্য হিসাবে দেখছে রাজ্য পুলিশ। আজ শুক্রবার পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে বেলগুমা পুলিশ লাইনে তাকে সামনে আনার কথা জেলা পুলিশের। এর পরই দুপুরে তাকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হবে।
[আরও পড়ুন: নিজের মৃত্যু কি আগেই বুঝতে পেরেছিলেন বিবেকানন্দ! কী হয়েছিল শেষ দিন?]
এই নিয়ে সিপিআই (মাওবাদী)-দের এই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ৫ বার গ্রেপ্তার হলেন। ২০২১ সালে অসমের গোলাঘাট জেলায় তাকে গ্রেপ্তার করে এনআইএ। তাছাড়া ২০১৮তে মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় থেকে এসটিএফ তাঁকে পাকড়াও করে। এর আগে ২০১৩ তে যাদবপুর থেকে গ্রেপ্তার হয়। তার আগে ২০০৫ সালে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। প্রত্যেকবারই জামিন পেয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে যেতেন তিনি। ২০২১ সালের পর একাধিকবার পুলিশের হাত থেকে তিনি ফসকে যান। ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি দক্ষিণ বাঁকুড়ার বারিকূল থানার গোসদা গ্রামে অনলাইন গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে বৈঠক করেন। পুলিশ চলে আসায় পালিয়ে যান। ২০২৩ সালের মার্চ মাসেও ঝাড়গ্রামে ধরমপুরে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ২০২২ সালের জুন মাসে তার মাথার দাম ধার্য করে। এর পর থেকেই বিভিন্ন রাজ্য পুলিশ-সহ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা হন্যে হয়ে ঘুরছিল।
২০০০ সালে সিপিআই (মাওবাদী)-র কলকাতা সিটি কমিটির সম্পাদক ছিলেন সব্যসাচী। ২০০৪ সালে রাজ্য কমিটির সদস্য পদ পান। ২০১৮ সালের পরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। মূলত তাত্ত্বিক এই মাও নেতা ভূমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নোনাডাঙ্গা উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনেও ভূমিকা ছিলো তার। ছাত্র জীবনে নকশাল নেতা সন্তোষ রানার দলের সক্রিয় কর্মী। পরে যোগ দেন জনযুদ্ধ গোষ্ঠীতে। দীর্ঘদিন ধরেই হাঁপানিতে আক্রান্ত এই ৫৪ বছরের তাত্ত্বিক মাওনেতা। তবুও অস্ত্র চালানোতেও পারদর্শী সব্যসাচী দলের নির্দেশে বাংলার সংগঠনকে আরও মজবুত করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।