অর্ণব আইচ: মেনি হারিয়েছে। মিসিং ডায়েরি করতে হবে। খুঁজে দিতেই হবে তাকে। মহিলা ও তাঁর ছেলের আবদার শুনে পুলিশের চক্ষু চড়কগাছে। কিন্তু বিড়াল নিখোঁজ হলে তার জন্য মিসিং ডায়েরির প্রথা বা নিয়মই যে নেই। ডায়েরি না হোক, শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সকালে পূর্ব কলকাতার সার্ভে পার্ক পুলিশ আধিকারিকদেরই ছুটতে হল মেনির বাড়িতে। সারা বাড়ি খুঁজে শেষে বাড়ির কার্নিস থেকে উদ্ধার হল আদরের বিড়াল।
তখন সকাল প্রায় ন’টা। সার্ভে পার্ক থানায় এসে হাজির দক্ষিণ কলকাতার সন্তোষপুরের বাসিন্দা এক মহিলা ও তাঁর ছেলে। প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় মা-ছেলে বলেন, মিসিং ডায়েরি করতে এসেছেন। ডিউটিতে থাকা থানার আধিকারিকরা খাতা খুলে ডায়েরি লিখতে গিয়েই থেমে গেল তাঁদের কলম। ওই গৃহবধূ বলেন, বুধবার রাত থেকে হারিয়ে গিয়েছে তাঁদের বিড়াল ‘মেনি’। তার সন্ধান পেতেই করতে হবে মিসিং ডায়েরি। মুখ চাওয়াচাওয়ি করে পুলিশ আধিকারিকরা মা ও ছেলেকে বুঝিয়ে বলেন, সাধারণত মানুষ হারালে পুলিশ (Kolkata Police) মিসিং ডায়েরি করে। তার ভিত্তিতে শুরু হয় তদন্ত। কিন্তু বিড়াল হারালে মিসিং ডায়েরি কীভাবে করবেন তাঁরা?
[আরও পড়ুন: কামারহাটি গুলিকাণ্ডে সক্রিয় পুলিশ, কয়েকঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার এক]
অথচ গৃহবধূ কোনও কথা শুনতে রাজি নন। তিনি জানান, সন্তোষপুরের একটি বহুতলে তিনতলার ফ্ল্যাটে থাকেন তাঁরা। বুধবার রাতেই আদরের মেনি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। প্রায় সারারাত ধরে বাড়িময় খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি। জানান, পুলিশ মিসিং ডায়েরি না হলেও তাঁরা ফের হারানো বিড়াল খুঁজতে বের হবেন। কিন্তু মাস দেড়েক আগেই বিড়াল খুঁজতে গিয়েই দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জের লেক অ্যাভিনিউয়ে ঘটে গিয়েছে বড় ধরনের অঘটন। ওই অঞ্চলের একটি বহুতলের বাসিন্দা এক মহিলা এক কার্নিস থেকে অন্য কার্নিসে নেমে তাঁর পোষ্য বিড়াল ধরতে গেলে উপর থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তাই এদিন আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি পুলিশ।
সার্ভে পার্ক থানার পুলিশবাহিনী পৌঁছয় সন্তোষপুরের বাড়িটিতে। কোনও অভিযুক্তর সন্ধানে তল্লাশির পদ্ধতিতেই বিড়াল খোঁজা শুরু করেন পুলিশ আধিকারিক ও পুলিশকর্মীরা। পুরো বাড়িজুড়ে শুরু হয় তল্লাশি। শুধু ওই মহিলার ফ্ল্যাট নয়, অন্য ফ্ল্যাটগুলির বাসিন্দাদের অনুমতি নিয়ে তাঁদের ফ্ল্যাটেও পুলিশ তল্লাশি চালায়। শেষে বিড়ালটিকে একটি ফ্ল্যাটের বাইরের অংশে দেখতে পাওয়া যায়। তাকে ডাকতে গেলে সে লাফ দেয় নিচের কার্নিসে। এক পুলিশকর্মী তাকে কার্নিস থেকে উদ্ধারেরও চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত ‘মেনি’র পছন্দ খাবার নিয়ে একটি জায়গায় এনে রাখেন ‘মেনির মা’। অনেকবার ধরে ডাকা সত্ত্বেও প্রথমে সে আসছিল না। তাই অন্যরা আশপাশ থেকে সরে যান। দুধ-মাছের লোভে ‘মেনি’ আসতেই তাকে পাকড়াও করা হয়। যাতে ফের পাড়া বেড়াতে না বের হয়, তাই আপাতত সে তার পরিবারের সঙ্গে ফ্ল্যাটবন্দি বলে জানিয়েছে পুলিশ।