প্রীতিকা দত্ত: সালটা ১৯৩০। ৮ ডিসেম্বর। বিনয় তখন মেরেকেটে ২২। দীনেশ ২০। বাদল সবে আঠারোর গণ্ডি পেরিয়েছেন। ওই বয়সেই হাড়হিম করা কাণ্ড ঘটিয়ে ইতিহাসে নাম তুলেছিলেন তিন বঙ্গসন্তান।
কাট টু ২০১৮।
বিনয়-বাদল-দীনেশ এবার আবির-অর্জুন-অনির্বাণ। এসভিএফের নতুন এই ছবির পরিচালনা করছেন অঞ্জন দত্ত। ছবির নাম ‘অপারেশন রাইটার্স’।
৮৮ বছর আগে ৮ ডিসেম্বর ঠিক কী হয়েছিল?
প্রশাসনের লালবাড়িটায় অন্য দিনের মতোই কাজের চাপ। বিদেশি অফিসার, আমলা, ক্লার্ক, বাঙালি ভদ্রপ্রৌঢ়ের ভিড়। কিন্তু বেলা গড়াতেই কলকাতার লালবাড়ি অর্থাৎ ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ অন্য রূপ নেয়। সৌজন্যে বাংলার তিন ‘ব্রেভহার্ট’- বিনয়-বাদল-দীনেশ। তিনজনেরই লক্ষ্য এক। ব্রিটিশ পুলিশকর্তা এন.এস.সিম্পসন। রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য যিনি ইতিহাসে কুখ্যাত।
[ বাংলার প্রথম প্যারানরমাল থ্রিলারে অর্পিতা-কমলেশ্বর ]
ওপার থেকে আসা স্বাধীনতা অন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া বিনয়কৃষ্ণ বসু, দীনেশ গুপ্তর রক্ত তখন ফুটছে। সঙ্গে আরেক তরুণ বিপ্লবী বাদল। ইংরেজ ছদ্মবেশে সেদিন তিনজন সশস্ত্র ঢুকে পড়েছিলেন মহাকরণের অন্দরে। চার ঘণ্টার গুলির লড়াইয়ে বিনয়-বাদল-দীনেশ ধরাশায়ী করতে পেরেছিলেন সিম্পসনকে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শে দীক্ষিত ‘বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স’ বিনয়-বাদল-দীনেশ তিনজনই ঠিক করে রেখেছিলেন, কোনওভাবেই ছাড়া যাবে না সিম্পসনকে। সেটা করেও দেখিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা।
সে দিনের সেই ‘গান ব্যাটল ইন ভেরান্ডা’ আজকের বাঙালি কতটা মনে রেখেছে, সন্দেহ আছে। তবে সরকারি খাতায় ‘মিশন সিম্পসন’ আজও পরিচিত ‘অপারেশন রাইটার্স’ নামে।
৮৮ বছর পর বাঙালিদের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের পটভূমিকে ভরকেন্দ্রে রেখে পরিচালক অঞ্জন দত্ত এগিয়ে এলেন দুঃসাহসী বিনয়-বাদল-দীনেশের গল্পকে সেলুলয়েডে তুলে ধরতে। ‘অপারেশন রাইটার্স’-এর স্ক্রিপ্টও লিখেছেন তিনি। মুক্তির দিনটাও বাঙালি তথা ভারতীয়দের কাছে রেড লেটার ডে- ১৫ আগস্ট। আগামী বছর রিলিজ করছে ‘অপারেশন রাইটার্স’।
বিনয়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন আবির চট্টোপাধ্যায়। বাদলের চরিত্রে অর্জুন চক্রবর্তী। দীনেশের ভূমিকায় আছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। আবির এ দিন ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে বললেন, “স্বাধীনতা আন্দোলনে বিনয়-বাদল-দীনেশের গল্পটা ঘিরে প্রচুর আবেগ রয়েছে। ইতিহাসের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই তিনজন।” আবিরের সঙ্গে একমত বাদল (অর্জুন)। “হাই স্কুলে ইতিহাস পড়েছি। তবে নেতাজি বা গান্ধীজি বইয়ের পাতায় যতটা হাইলাইটেড, বিনয়-বাদল-দীনেশ অতটা জায়গা জুড়ে থাকেন না। স্ক্রিপ্ট শুনে আমি মুগ্ধ।” বলছিলেন অর্জুন চক্রবর্তী।
[ কীভাবে ‘রসগোল্লার কলম্বাস’ হলেন নবীন ময়রা? ট্রেলারেই দেখুন ]
শুটিং শুরু আগামী বছর জানুয়ারির শেষে। আবিরের সঙ্গে অর্জুনের ‘অপারেশন রাইটার্স’ পাঁচ নম্বর ছবি। তবে পরিচালক-অভিনেতা হিসেবে অঞ্জন-আবির জুটি পর্দায় ফিরছেন ছ’বছর পর। আবির জানালেন, “স্ক্রিপ্ট শুনে আমি সত্যিই অবাক। অঞ্জনদার সঙ্গে ‘ব্যোমকেশ গোত্র’-তে কাজ করার সময় হয়তো তিনি মনে করেছেন আমি ‘বিনয়’ হতে পারি। অঞ্জনদা মানেই ভাল কাজ। তাই পুরনো কোনও কথা মাথায় রাখতে চাই না। ছবিতে বাকি যাদের কথা ভাবা হচ্ছে, সবাই বড় মাপের অভিনেতা।”
এত বড় মাপের ফিল্ম নিয়ে কী ভাবছে প্রযোজক সংস্থা এসভিএফ? সংস্থার এক মুখপাত্র বললেন, “বলিউডে এই ধরনের পটভূমিতে ছবি (মঙ্গল পাণ্ডে, শহিদ উধম পাণ্ডে, নেতাজি, গান্ধী ইত্যাদি) করা হলেও, টলিউডে শেষ কবে স্বাধীনতা আন্দোলন বা বিনয়-বাদল-দীনেশের চরিত্র নিয়ে কাজের কথা ভাবা হয়েছে, আমাদের জানা নেই। তাই এই ছবিটা ইন্ডাস্ট্রিতে খুব দরকার ছিল।”
The post সেলুলয়েডে এবার বিনয়-বাদল-দীনেশের রাইটার্স অভিযানের গল্প appeared first on Sangbad Pratidin.