সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চোখের সামনে শেষ আটদিনের জীবনযুদ্ধ। যমে-মানুষের টানাটানিতে হার মেনেছে ছোট্ট ঋষভ। অকালে প্রাণোচ্ছ্বল শিশুর মৃত্যু মানতে পারছেন না কেউই। চোখের জল বাঁধ মানছে না সন্তানহারা বাবা-মায়ের। ঋষভের বাবাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Kalyan Banerjee)। বাবার চেয়েও ঋষভের মৃত্যুসংবাদ বেশি কষ্ট দিচ্ছে বলেই জানান তিনি।
১৪ ফেব্রুয়ারি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ঋষভের পুলকার। পোস্টে ধাক্কা মেরে নয়ানজুলিতে উলটে যায় গাড়িটি। স্থানীয়রা উদ্ধার করে নিয়ে যায় চুঁচুড়ার ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, জখম ঋষভ এবং দিব্যাংশুর অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক, তাই তাদের এসএসকেএমে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোই ভাল। কিন্তু হুগলি থেকে কলকাতার দূরত্ব কম নয়। তাই চাইলেই তড়িঘড়ি তাদের এসএসকেএমে নিয়ে আসা কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দুই খুদের পরিবার। ঋষভের বাবা সন্তোষ সিং শ্রীরামপুর পুরসভার কাউন্সিলর। সে সূত্রে ছেলেকে কলকাতার হাসপাতাল স্থানান্তরিত করার কথা জানান হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব। তিনি কথা বলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। রাজ্য সরকারের তৎপরতায় গ্রিন করিডরের মাধ্যমে মাত্র ৪৮ মিনিটে ছোট্ট ঋষভ পৌঁছয় এসএসকেএমে। তারপরই শুরু হয় চিকিৎসা।
[আরও পড়ুন: ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কৃতিত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নামে পোস্টারে, শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর]
প্রায় প্রতিদিনই ঋষভের শারীরিক অবস্থায় খোঁজখবর নিতেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ভোরে ঋষভের মৃত্যুসংবাদ শুনেই এসএসকেএমে পৌঁছন শ্রীরামপুরের সাংসদ। তাঁকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ঋষভের বাবা। সন্তান হারানোর শোকে আকূল তিনি। সাংসদকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন সন্তোষ সিং।
মাত্র ৬ বছর বয়সি স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যু মানতে পারছেন না তৃণমূল সাংসদও। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলেন, “ঋষভের চলে যাওয়ার খবর শুনে বাবার মৃত্যুর চেয়েও বেশি দুঃখ পেয়েছি।” পুলকার চালকদের উদাসীনতাতেই স্কুলপড়ুয়া ঋষভ জীবনযুদ্ধে হার মানল বলেই অভিযোগ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন,”সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কাদের শেখাব? কেউ শিক্ষা নিতে চায় না। কেউ নিয়ম মানতে চায় না। বাসচালক, ট্রাকচালকদের জন্য আইন করা উচিত। সকলে খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে।”
দুর্ঘটনা রুখতে নিয়মেও কিছু বদল আনার প্রয়োজন বলেই মত শ্রীরামপুরের সাংসদের। তিনি বলেন, “সকালে পুলকার নিয়ে বেরনোর সময় চালককে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। দেখা উচিত গত রাতে সে মদ্যপান করেছিল কি না। জিপিএসের মাধ্যমে গাড়িগুলির উপর নজরদারি করা প্রয়োজন। শুধু স্পিডব্রেকারে দুর্ঘটনা রোখা যাবে না।” ইতিমধ্যেই পুলিশের জালে ধরা পড়েছে ঋষভের পুলকার চালক শেখ শামিম। তাকে আপাতত নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করছে পুলিশ। ঋষভের মৃত্যুর পর তার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলার ধারা যোগের সম্ভাবনাও এড়ানো যাচ্ছে না।
The post ‘বাবার চেয়েও ঋষভের মৃত্যু বেশি বেদনাদায়ক’, সান্ত্বনা দিতে গিয়ে চোখে জল কল্যাণের appeared first on Sangbad Pratidin.