অর্ণব আইচ: বেহালার (Behala) পর্ণশ্রীতে মা ও ছেলেকে খুনের আগে ফ্ল্যাটে বসে চা খেয়েছিল খুনিরা। ফ্ল্যাটের টেবিল থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’টি কাপ। কাপ ধুয়েও রেখেছিল খুনিরা। সেনপল্লিতে মা সুস্মিতা ও ১৩ বছরের ছেলে তমোজিৎ মণ্ডলের খুনের তদন্তে উঠে এসেছে এই তথ্য। এছাড়াও ফ্ল্যাটে রক্তমাখা পায়ের ছাপ পরীক্ষা করে পুলিশের ধারণা, দু’টি পা আলাদা। এদিকে, সোমবার খুনের দিন দুপুর পৌনে দু’টো থেকে বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত কিছু যোগসূত্র মিলছে না। সেই ‘মিসিং লিংক’ খুঁজতে বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার বিকেলেও গোয়েন্দারা সুস্মিতার স্বামী তপন মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালান। যদিও খুনের ‘মোটিভ’ নিয়ে এখনও পুলিশ অন্ধকারে। খুনের অস্ত্রটি তারা নিয়ে এসেছিল। সঙ্গে নিয়ে চলেও যায়।
পুলিশ (Police) জানিয়েছে, খুনের তদন্ত শুরু করার সময়ই টেবিলের উপর দু’টি চায়ের কাপ দেখতে পাওয়া যায়। কাপ দু’টির ভিতর জল ছিল। ফলে মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই কাপ ধোয়া হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। রান্নাঘরে গিয়ে গোয়েন্দারা দেখেছেন, চা যে তৈরি করা হয়েছিল, তার প্রমাণ রয়েছে। কারণ, চায়ের বাসন মাজা হয়নি। পুলিশের মতে, গৃহবধূ সুস্মিতা মণ্ডল সোমবার দুপুরে পরিচিত কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেন। সম্ভবত নিজেই দু’কাপ চা তৈরি করেন। যেহেতু সুস্মিতা কিছুক্ষণ আগেই দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন, তাই নিজে হয়তো চা খাননি। সেক্ষেত্রে দু’জন খুনি আসার সম্ভাবনা রয়েছে। খুনের মূল ‘মাস্টারমাইন্ড’ কাউকে টাকা দিয়ে নিয়োগ করেছিল, এমনও হতে পারে। সেই ব্যক্তি একটি ভারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে মা ও ছেলের গলা কেটে খুন করে।
[আরও পড়ুন: ‘তন্ময়কে নাক ঘষে ঘষে দলে ফিরতে হবে’, তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়ক প্রসঙ্গে মন্তব্য সৌমিত্র খাঁ-র]
তবে খুনের পর খুনিরা নিজেরাই চা তৈরি করে খেয়েছিল, এমন সম্ভাবনা কম। নিজেদের ঠোঁটের ছাপের প্রমাণ লোপাট করতেই ধুয়ে ফেলা হয় দু’টি কাপ। পুলিশের মতে, মাকে খুনের পর রক্তমাখা পায়েই দুই খুনি গিয়েছিল পাশের ঘরে ছেলেকে খুন করতে। কয়েকজন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পায়ের ছাপ নেওয়া হয়। সেই ছাপগুলি মেলানো হচ্ছে। এ ছাড়াও ফ্ল্যাটের ত্রিমাত্রিক ছবি তুলে খুনিদের হাতের ছাপেরও সন্ধান চালান গোয়েন্দারা। এদিকে, তদন্ত করে লালবাজারের গোয়েন্দারা জেনেছেন, গত সোমবার দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ সুস্মিতা মণ্ডলের স্বামী তপনের মোবাইলে একটি ফোন আসে। মোবাইলের সূত্র ধরেই জানা যায়, ব্যাংকের রিকভারি এজেন্ট তপন ওই সময় ছিলেন খিদিরপুর অঞ্চলে। কর্মসূত্রে একটি দোকানে গিয়েছিলেন, তার প্রমাণ মিলেছে। এরপর তাঁর কাছে কোনও ফোন আসেনি। তখন ওই ব্যক্তির মোবাইল বন্ধ ছিল, এমন প্রমাণও মেলেনি। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তপনের মোবাইলে একটি ফোন আসে।
মোবাইলের (Mobile) সূত্র ধরে জানা যায়, তখন তিনি ছিলেন গার্ডেনরিচের পাহাড়পুর রোডে। ওই সময়টুকুর জন্য তাঁর মোবাইল ‘ফ্লাইং মোড’এ ছিল কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে। যদিও পুলিশের জেরার মুখে তপন জানান, ওই পৌনে দু’ঘণ্টা তিনি রাস্তায় ছিলেন। মাঝখানে বৃষ্টি হয়েছিল বলে স্কুটি রেখে অনেকক্ষণ একটি শেডের তলায় দাঁড়ান। তিনি খিদিরপুর থেকে পাহাড়পুরে কতক্ষণের মধ্যে গিয়েছিলেন, কোথায়ই বা দাঁড়িয়েছিলেন, সেই তথ্য এলাকার সিসিটিভির ফুটেজের মাধ্যমে পুলিশ যাচাই করছে। তপনের দাবি, প্রত্যেকদিন রাত আটটা নাগাদ স্ত্রী সুস্মিতাকে ফোন করে তিনি বাড়ি ফিরছেন। সোমবার রাত আটটায় স্ত্রীকে ফোনে পাননি। একতলা থেকেই তিনতলায় ফ্ল্যাট অন্ধকার দেখেন। সাধারণত জুতো খুলে চটি পরে ফের পা ধোয়ার জন্য নিচে নামেন তপন। কিন্তু সোমবার ঘর অন্ধকার দেখেই দরজায় ধাক্কা দেন। ঘরে ঢুকে স্ত্রী ও ছেলের নিথর দেহ দেখে আর্তনাদ করে ওঠেন। তপন বারবার জিজ্ঞাসা করতে থাকেন, তাঁর ছেলেকে কেন খুন করা হল? সেই উত্তর পেতে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।