ধীমান রায়, কাটোয়া: স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে মেয়ের জন্ম দিলেন মা। আর হাসপাতালে জন্মায় ছেলে। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। এভাবেই দুই জায়গায় ভূমিষ্ঠ হল এক মহিলার দুই সন্তান। সিনেমার চিত্রনাট্যকেও যেন হার মানায় বাস্তবের এই ছবি। তবে পুরোটাই সম্ভব হয় জিআরপি কর্মীদের সহায়তায়।
ঠিক কী ঘটল? সন্তানসম্ভবাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসছিলেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু ট্রেনের মধ্যেই শুরু হয় প্রসব যন্ত্রণা। স্ত্রীর অবস্থা দেখে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েন স্বামী। নিজেকে সামলে নিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে কর্মরত জিআরপি কর্মীদের কাছে তিনি সাহায্য চান। নিরাশ হতে হয়নি সেই ব্যক্তিকে। জিআরপি কর্মীদের সহযোগিতাতেই সমস্যা মেটে। স্ত্রীকে ট্রেন থেকে নামাতেই প্ল্যাটফর্মে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ওই বধূ। এখানেই জিআরপি কাজে ইতি টানেনি। কাটোয়ার জিআরপি ওই বধূকে ও তাঁর সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতলে নিয়ে যায়। সেখানে ফের পুত্র সন্তান জন্ম দেন মুর্শিদাবাদ জেলার ওই মহিলা। জিআরপির (GRP) তৎপরতায় অতি দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে দারুণ খুশি বধূ ও তাঁর পরিবার।
[আরও পড়ুন: উদ্বৃত্ত ভ্যাকসিন ফেরত চাইল সরকার, রাজ্যের বেসরকারি ক্ষেত্রে অনিশ্চিত টিকার দ্বিতীয় ডোজ]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) শক্তিপুর থানার মিঞাগ্রামের বাসিন্দা সন্তানসম্ভবা আরজিনা বিবিকে নিয়ে কাটোয়া হাসপাতাল যাওয়ার সময়ই বিপত্তি ঘটেছিল। সঙ্গে ছিলেন স্বামী সিরাজ শেখ ও আরজিনার বউদি রুখসনা বিবি। আজিমগঞ্জ কাটোয়া ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট নাগাদ সবে কাটোয়া স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছে। সেসময় জিআরপি কর্মী রঞ্জিত ঘোষ ও তাঁর সহকর্মীরা প্ল্যাটফর্মে ডিউটি করছিলেন। ট্রেনের মহিলা কম্পার্টমেন্টে ছিলেন আরজিনা ও তাঁর বউদি। পাশের কামরাতেই ছিলেন সিরাজ। ট্রেন থামতেই সিরাজ শেখ হন্তদন্ত হয়ে জিআরপি কর্মীদের কাছে ছুটে এসে সাহায্য চান। রঞ্জিতবাবু সঙ্গে সঙ্গে মহিলা কনস্টেবল মধুমিতা মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে ওই কম্পার্টমেন্টে যান। সেখান থেকে আরজিনা বিবিকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোর শুরু হচ্ছিল। মধুমিতা মণ্ডল বলেন, “যখনই বোঝা যায় হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই। তখনই আমরা প্ল্যাটফর্মে কাপড় আড়াল করে দিয়ে প্রসবের ব্যবস্থা করি।” জানা যায় মধুমিতা দেবী ও আরজিনার বউদি দু’জনের উপস্থিত বুদ্ধিতে প্ল্যাটফর্মে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন আরজিনা।
এরপর সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে জিআরপি একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন ওই বধূ ও তাঁর সদ্যোজাত কন্যাকে। হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আনার পরেই একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মহিলা। কাটোয়া হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর দুই সন্তান ও প্রসূতি এখন সুস্থই রয়েছেন। দিনমজুর সিরাজ শেখ বলেন, “কাটোয়া জিআরপির কাছে যে সহযোগিতা আমরা পেয়েছি তা জীবনে ভুলব না।” পরিবার সূত্রে জানা যায়, একটি তিন বছরের পুত্রসন্তান রয়েছে আরজিনা বিবির। তারপর যমজ সন্তান হল তাঁর।