shono
Advertisement
Bardhaman

সম্প্রীতির নজির! ৬৩ কিমি হেঁটে ২৬ বছর ধরে শিবের মাথায় জল ঢালতে আসেন শেখ ফরজান

২৫ শ্রাবণ বাবার আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উৎসব পালিত হয় প্রতি বছর।
Published By: Tiyasha SarkarPosted: 04:05 PM Aug 11, 2024Updated: 04:05 PM Aug 11, 2024

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বাবা বর্ধমানেশ্বর। যা মোটা শিব নামেই বেশি পরিচিত। জনশ্রুতি কনিষ্ক এই শিবলিঙ্গের পুজো করতেন। পরবর্তিতে বর্ধমান শহরের আলমগঞ্জ এলাকায় পুকুর খননের সময় ১৯৭২ সালের ১১ আগস্ট (বাংলার ২৫ শ্রাবণ) উদ্ধার হয়েছিল ১৩ টনের বেশি ওজনের পাথরের এই শিবলিঙ্গ। ২৫ শ্রাবণ বাবার আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উৎসব পালিত হয় প্রতি বছর। আর এই উৎসব হয়ে ওঠে সম্প্রীতির উৎসব। গত ২৬ বছর ধরে প্রায় ৬৩ কিলোমিটার দূরে কাটোয়ায় ভাগীরথী থেকে পায়ে হেঁটে বাঁকে করে জল নিয়ে এসে বাবার মাথায় ঢালেন শেখ ফরজান আলি। এবারও যার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কাকভোরে জল এনে 'জয় বাবা ভোলেনাথ' বলতে বলতে আলমগঞ্জে গিয়ে বাবার মাথায় জল ঢালেন ফরজান।

Advertisement

শুধু ফরজানই নয়, প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকেও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনও বর্ধমানেশ্বরের মাথায় জল ঢালতে যান। কাটোয়ার ভাগীরথী থেকে জল আনার রীতি রয়েছে ভোলেবাবার ভক্তদের। হাজার হাজার ভক্ত কাটোয়া থেকে জল আনতে যান। শুক্রবার ভক্তরা কাটোয়া রওয়ানা হয়েছিলেন। শনিবার জল ঢালেন ভক্তরা। কাটোয়া থেকে জল আনার যাত্রাপথের দুইধারে বিভিন্ন জায়গায় শিবভক্তদের জন্য বিশ্রামের জায়গা, পানীয় জলের ব্যবস্থার আয়োজন করে বিভিন্ন সংগঠন। সেখানেও সম্প্রীতির চিত্র ধরা পড়ে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনও শিবভক্তদের সহায়তায় পথের ধারে অপেক্ষা করেন। বর্ধমান শহরের কার্জন গেট চত্বরে বিধায়ক খোকন দাসের উদ্যোগে সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হয়েছিল। দেওয়ানদিঘি, ভাতার-সহ বিভিন্ন জায়গায় সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। কয়েকবছর আগে ভাতার থিনার বলগোনা, শিকোত্তর, সেলেন্ডা-সহ কয়েকটি গ্রামের শেখ রাজু, রেজাবুল বড়াল, শেখ মনিরুল, শেখ বসিররা কাটোয়া থেকে গঙ্গাজল এনে বর্ধমানেশ্বরের মাথায় ঢেলেছিলেন।

[আরও পড়ুন: তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু থেকে শিক্ষা, বাড়ল আর জি কর হাসপাতালের নিরাপত্তা]

আর গত ২৬ বছর ধরে বাবার ভক্ত হয়ে জল ঢালছেন বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে নেড়োদিঘির বাসিন্দা শেখ ফরজান আলি। শনিবার বাবার মাথায় জল ঢালতে যাওয়ার পথে ৭৬ বছরের ফরজান জানালেন, তিনি একবার বাবাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন। স্বপ্নে দেখেন বাবার মাথায় জল ঢালছেন। তার পর তিনি বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ নেন সেটা করতে পারেন কিনা। তার পর থেকে টানা বর্ধমানেশ্বরের মাথায় জল ঢালেন ফরজান। তিনি বলেন, "বাবার মাথায় জল ঢালবো বলে টানা একমাস নিরামিষ খাবার খাই। বাড়িতেও আমিষ ঢুকতে দিই না।" আর ফরজান জাতপাত, ধর্মের ভেদাভেদ মানেন না। পেশায় ভ্যানচালক ফরজানের কথায়, "ওইসব ভেদাভেদের কোনও মানে হয় না। আমি বাবার মাথায় জল ঢালবো বলে কাটোয়া থেকে হেঁটে জল আনি। সবার আগে আমি জল ঢালি। আবার আমি বীরভূমের পাথরচাপুরির মাজারেও যাই পায়ে হেঁটে।" মানবধর্ম অন্তপ্রাণ ফরজান ইতিমধ্যে তাঁর দেহদান ও চক্ষুদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। নিয়মিত রক্তদান করেন। পরিচিত কারও মৃত্যু হলে শ্মশাণে যান আবার কবরস্তানেও যান।

[আরও পড়ুন: প্রাক্তনীর ‘ধর্ষকে’র শাস্তির দাবিতে অনির্দিষ্টকালীন ধরনায় কল্যাণীর JNM-এর পড়ুয়া চিকিৎসকরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বর্ধমান শহরের আলমগঞ্জ এলাকায় পুকুর খননের সময় ১৯৭২ সালের ১১ আগস্ট (বাংলার ২৫ শ্রাবণ) উদ্ধার হয়েছিল ১৩ টনের বেশি ওজনের পাথরের শিবলিঙ্গ।
  • ২৫ শ্রাবণ বাবার আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উৎসব পালিত হয় প্রতি বছর।
  • গত ২৬ বছর ধরে প্রায় ৬৩ কিলোমিটার দূরে কাটোয়ায় ভাগীরথী থেকে পায়ে হেঁটে বাঁকে করে জল নিয়ে এসে বাবার মাথায় ঢালেন শেখ ফরজান আলি।
Advertisement