মাসুদ আহমেদ: করোনায় (Covid-19) বিধ্বস্ত গোটা দেশ। এই পরিস্থিতিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই লড়াই করছে ভারত। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন প্রত্যেকে। জাত-ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সম্প্রীতির নজিরও গড়ছেন অনেকে। আর এই পরিস্থিতিতে এবার সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কাশ্মীরের (kashmir) কয়েকজন মুসলিম ব্যক্তি। দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী এক হিন্দু পন্ডিতের শেষকৃত্যে সারলেন তাঁরা। আর তাঁদের এই কাজকে কুর্নিশ জানাল গোটা দেশ।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার তাহাব গ্রামে। গত শনিবার মারা গিয়েছিলেন ৭০ বছর বয়সি হিন্দু পণ্ডিত চমনলাল। বেশ কয়েকদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন তিনি। আর সেকারণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি টেলিকম সংস্থা বিএসএনএলে কর্মরত ছিলেন চমনলাল। পরবর্তীতে চাকরি থেকে অবসরের পর গ্রামের আর পাঁচজন মানুষের সঙ্গেই মিলেমিশে দিব্যি দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালের পর একের পর এক কাশ্মীরি পণ্ডিতরা যখন নিজেদের বাসস্থান থেকে অন্যত্র সরে আসছিলেন, তখনও নিজের আদি গ্রামে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চমনলাল। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে এতগুলি বছর। জানা গিয়েছে, গোটা গ্রামেই খুব পরিচিতও ছিলেন তিনি। আর তাই শনিবার তাঁর মৃত্যুতে সবার মনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
[আরও পড়ুন: গুজরাটে গোশালার ভিতরেই করোনা সেন্টার, রোগীর চিকিৎসায় খাওয়ানো হচ্ছে গোমূত্রের ওষুধ]
জানা গিয়েছে, চমনলালের ছেলে কিংবা মেয়ে বাবার সঙ্গে থাকতেন না। কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকেন। তাই গ্রামের মুসলিম ব্যক্তিরাই তাঁর সৎকারের ব্যবস্থা করেন। প্রত্যেক প্রতিবেশীই এগিয়ে আসেন। প্রায় ১০০ জন লোক চমনলালের সৎকারে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ওই বৃদ্ধের ছেলেমেয়ে গ্রামে এসে স্থানীয়দের ধন্যবাদও জানান। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই ওই মুসলিম ব্যক্তিদের কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে গ্রামেরই এক বাসিন্দা বলেন, “চমনলাল আমাদেরই একজন ছিলেন। ওঁর সৎকারের জন্য যা যা প্রয়োজন তা আমরাই জোগাড় করেছি।” আরেক বাসিন্দার কথায়, “চমনলাল কাশ্মীরি পন্ডিত হলেও তাঁকে আমরা কখনওই আলাদা চোখে দেখতাম না। তিনি আমাদেরই একজন ছিলেন। আমরা সবাই একসঙ্গেই বসবাস করি। তাই চমনলালের শেষযাত্রাতেও তাঁকে সঙ্গ দিলাম।”