অরিঞ্জয় বোস, বারাণসী: বাদলা দিনের বেনারস এমনিতে শান্তই। ঘাটগুলো এখন প্রায় ডুবু-ডুবু। আকাশের মুখে কালো মেঘের ভারি পর্দা। শহরের রং যেন একটু হলেও ঢাকা পড়েছে জলের গভীরে। প্রতি বছরই বর্ষার বারাণসী রঙিন উচ্ছ্বাস সরিয়ে রেখে খানিক গম্ভীর হয়ে যায়। এর মধ্যেই শ্রাবণে বিশ্বনাথের দর্শনপ্রার্থী হয়ে এসেছেন বহু মানুষ। ফি বছরই তাঁরা আসেন। সেই দিক থেকে চেনা দৃশ্যের কোলাজে তেমন কিছু বদল নেই। তবে বদল একটা আছে বইকি! সেই বদলের কেন্দ্রে আছে জ্ঞানবাপী (Gyanvapi)।
আজ শুক্রবার, নমাজ পড়ার দিন। এদিকে আদালতের নির্দেশে সমীক্ষা শুরু করেছে এএসআই (ASI)। জ্ঞানবাপী আদতে মন্দির না মসজিদ-তার ফয়সালা হবে এই সমীক্ষার ভিত্তিতেই। যে-প্রশ্নে এতদিন উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ। বারাণসীতে গত এক বছরে দর্শনার্থীদের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই জ্ঞানবাপী বিতর্কে বারাণসী শিরোনামেও উঠে এসেছে ঘন ঘন। দেশবাসী কৌতূহলী নজর আটকে থেকেছে বিশ্বনাথের বিশ্বদ্বারে। অভিজ্ঞজন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ফের কি ‘৯২-এর পুনরাবৃত্তি! সারা দেশের এই এত প্রশ্ন যে বারাণসী জানে না, তা নয়। তবে শুধু প্রশ্নে আটকে থেকে তো জীবন চলে না। প্রশ্ন-সংশয়ের মীমাংসায় আইন-আদালত চলেছে তার নিজের মতো করে। বারাণসী চলেছে নিজের ছন্দে।
[আরও পড়ুন: ‘শান্ত হোন, নাহলে বাড়িতে ইডি চলে যাবে’, সংসদে দাঁড়িয়েই ‘হুমকি’ মন্ত্রীর]
দেখতে-দেখতে আদালতের নির্দেশে জ্ঞানবাপীতে সমীক্ষার সময় চলে এসেছে। এমনিতে বারাণসীবাসী কড়া নিরাপত্তার সঙ্গে ওয়াকিবহাল। তবে এবারের মাত্রাটা সামান্য বেশি। বিন্দুমাত্র উত্তেজনার যাতে না ছড়ায় তার জন্য নিরাপত্তার পরত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েক গুণ। জ্ঞানবাপীর চারিদিকে সেনাকর্মীদের টহল। নিরাপত্তার এমন কড়া বেষ্টনী দেখে মনে হয় যেন কোনও দুর্গ পাহারা দিচ্ছেন তাঁরা। অসংখ্য পুলিশকর্মী তো আছেনই। কোনওভাবেই সেখানে ঢোকা সহজ নয়। মোবাইল, পার্স, পেন সবকিছুই নিষিদ্ধ। সংখ্যালঘুদের অনেকের প্রশ্ন, শুক্রবার করে তাহলে নমাজ কোথায় পড়ব? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য কেউই তাঁদের দিতে পারেন না। জ্ঞানবাপী যদি কাল ‘মসজিদ’ বলে প্রমাণিত না হয়, তবে যে কী হবে, সেই ভবিষ্যৎ খুঁজে চলেছে গোটা বেনারসই। সাতপাঁচ সেই চিন্তায় বেশ কিছুদিন ধরেই মগ্ন বারাণসীবাসী। আইএসআই-এর সমীক্ষার দিন মানে সেই প্রায় ক্লাইম্যাক্স মূহূর্ত। অতএব টেনশন যেন কয়েক গুণ বেশি। বাইরে হাসিখুশি বেনারসে ভিতর ভিতর যে দুশ্চিন্তার স্রোত বইছে, তা টের পাওয়া যায় সহজেই।
[আরও পড়ুন: ভয়ংকর গোষ্ঠী সংঘর্ষের দিন ছুটি নিয়েছিলেন! সেই পুলিশকর্তাকে সরাল হরিয়ানা সরকার]
একটা সমীক্ষা কি বারাণসীর ভাগ্য বদলে দেবে? বলা যায়, অনেকটাই। দীর্ঘ এক বিবাদের ফয়সলা হওয়া শুধু নয়; বারাণসীর জীবনযাত্রা, সংখ্যালঘুদের ধর্মাচরণের অভ্যাসও বদলে দিতে পারে এই সমীক্ষা। সংবাদের ক্ষেত্রে যা শিরোনাম, বারাণসীর মানুষের কাছে তা তো সত্যিকার জীবন। ফলত নিরাপত্তা বেষ্টনীর ঘেরাটোপের দিকে তাঁরা তাকিয়ে থাকেন তাঁদেরই ভবিষ্যৎ সন্ধানে। ‘কী হবে’ কেউ জানেন না। অতএব ক্রমাগত দীর্ঘশ্বাস ঘনিয়ে ওঠে ‘কী যে হবে!’
আগস্টের বারাণসীতে তাই শুধু বর্ষা নয়, উদ্বেগের মেঘও নেমেছে বেশ ভারি হয়েই।