সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মোদি-মমতা জ্বরে কাঁপছে পুরুলিয়া! সেই ২০১৯-র পুনরাবৃত্তি। উনিশের লোকসভায় একইদিনে পুরুলিয়ায় নির্বাচনী কর্মসূচি নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে দুই হেভিওয়েটের নির্বাচনী জনসভা ছিল। কাল রবিবার ৮ কিলোমিটারের মধ্যে পুরুলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী কর্মসূচি। যাকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ যেমন তুঙ্গে। তেমনই রাজনৈতিক তাপ-উত্তাপ। তবে এই দুই হেভিওয়েটের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে একেবারেই প্রস্তুত পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গেঙ্গাড়াতে নির্বাচনী সভা করবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদযাত্রা করবেন এসপি অফিস মোড় থেকে।
মোদি-মমতার নির্বাচনী কর্মসূচিকে ঘিরে প্রশাসনিক প্রস্তুতি উনিশের মতো একই রকম থাকলেও রাজনৈতিক চিত্রটা কিন্তু গত পাঁচ বছরে আমূল বদলে গিয়েছে জঙ্গলমহলের এই জেলায়। উনিশে শ্রীরামচন্দ্রকে ভর করে বিজেপিকে নিয়ে যে গেরুয়া আবেগ ছিল। এবার তার ছিটেফোঁটা নেই। পুরুলিয়ায় ষষ্ঠ দফার ভোট হতে আর মাত্র ছদিন বাকি। এখনও এই জেলার অধিকাংশ ভোটার 'সাইলেন্ট'। আর এটাই ভাবিয়ে তুলেছে গেরুয়া শিবিরকে। সর্বোপরি পুরুলিয়া কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই বিস্তর ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে। সমগ্র কেন্দ্র জুড়েই তাঁর বিরুদ্ধে কাজ না করার অভিযোগ রয়েছে সাধারণ মানুষজনের। এমনকি তাঁকে তাঁর কেন্দ্রে গত পাঁচ বছরে সেভাবে দেখাও যায়নি।
পুরুলিয়ায় মোদির জনসভাস্থল। ছবি: সুনীতা সিং।
[আরও পড়ুন: ভুয়ো সার্টিফিকেট নিয়ে শিক্ষকতা! বাগুইআটির নামী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ]
অন্যদিকে পুরুলিয়া কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী সহজ-সরল শান্তিরাম মাহাতো হওয়ায় প্রথম থেকেই অ্যাডভান্টেজ শাসক দলের। তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক বিষয়ে বেনিয়মের অভিযোগ থাকলেও এই জেলায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই এপ্রিলেই প্রথম নির্বাচনী জনসভা করায় সবুজ ঝড় তুলে দিয়েছেন। সেই সবুজ হাওয়া এখনও অটুট।তৃণমূলের পক্ষে সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজ লক্ষ্মীর ভান্ডার মেগা প্রকল্প। আর এই প্রকল্পের হাত ধরে মহিলাদের ভোটব্যাঙ্ক। যার প্রমাণ মিলে ছিল একুশের বিধানসভাতেই। আর এবার লক্ষ্মীর ভান্ডারের অর্থ বৃদ্ধিতে পরিস্থিতি আরও ভালো। তাই উনিশের থেকে এবারের রাজনৈতিক ছবিটা একেবারেই ভিন্ন বনমহল পুরুলিয়ায়।
মোদির জনসভাস্থল ঘুরে দেখছেন পুরুলিয়ার বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো সহ দলীয় নেতৃত্ব। শনিবার পুরুলিয়া মফস্বলের গেঙ্গারা ময়দানে। ছবি: সুনীতা সিং।
গত বছর মোদির নির্বাচনী সমাবেশ ছিল পুরুলিয়া-রাঁচি রোডে রাইবাঘিনী ময়দানে। মমতার জনসভা হয় শিমুলিয়ার ব্যাটারি গ্রাউন্ডে। বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, "দেড় লক্ষ মানুষের জমায়েত হবে। মানুষজনের উৎসাহ, উদ্দীপনার শেষ নেই। প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য অপেক্ষা করে আছেন। " এদিন দুপুরের দিকে বিজেপি নেতৃত্ব ওই মাঠের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে। বিজেপির জেলা সভাপতি ছাড়াও দলের রাজ্য কমিটির সদস্য বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তথা পুরুলিয়ার প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো ওই জনসভাস্থল ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন,"কত মানুষ যে আসবেন তার হিসাব নেই। শেষবার একুশের ভোটে ভাঙড়ার কাছে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী জনসভা করেছিলেন। সেবার ছোট হয়ে গিয়েছিল মাঠ। তাই এবার বড় মাঠ করলাম। শুধু বিজেপি নেতা-কর্মী, সমর্থক নয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে সাধারণ মানুষজন সভায় আসবেন।"
[আরও পড়ুন: যোগ্য তো? নথি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে রাজ্যের সব শিক্ষককে, জারি নির্দেশিকা]
চলতি নির্বাচনে পুরুলিয়ায় মমতার তৃতীয় নির্বাচনী কর্মসূচি। এর আগে তিনি হুড়া ও পাড়ায় জনসভা করে গিয়েছেন। রবিবার তিনি পুরুলিয়া শহরের এমএসএ ময়দানে অস্থায়ী হেলিপ্যাডে নামবেন। এর পর এসপি অফিস মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হবে। পদযাত্রা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, পোস্ট অফিস মোড়, চকবাজার, মধ্যবাজার, নামোপাড়া,রথতলা, স্টেশন, ডাকবাংলো, নীলকুঠি ডাঙ্গা হয়ে ওই ভগৎ সিং মোড় পর্যন্ত তিন কিমি এই পদযাত্রা হবে। এরপর ওই মোড় লাগোয়া এমএসএ ময়দানের অস্থায়ী হেলিপ্যাড থেকেই তিনি রওনা দেবেন। দুপুর একটা থেকে তাঁর এই পদযাত্রা শুরু হবে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, "পদযাত্রায় রেকর্ড জমায়েত হবে। প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।" যে পথ দিয়ে পদযাত্রা হবে সেই পথে তৃণমূলের কার্ট আউট, পতাকা, ফেস্টুন, ফ্লেক্স ও তৃণমূল নেত্রীর ছবিতে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে।
মোদির জনসভাস্থলে তিনটি হেঙ্গার করা হয়েছে। এক- একটি হেঙ্গারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার জমায়েত হয়। ফলে বাকিরা দাঁড়িয়ে থাকবেন। হেঙ্গারে বসার জন্য চেয়ার থাকছে। থাকছে জলের পাউচ। জনসভাস্থলের উল্টোদিকে অস্থায়ী হেলিপ্যাড করা হয়েছে। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেমে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়ক পার হয়ে সড়কপথে জনসভা স্থলে আসবেন।