কুণাল ঘোষ: জগদীপ ধনকড়কে (Jagdeep Dhankhar) বাংলার রাজ্যপাল পদ থেকে সরানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিজেপি প্রশ্ন তুলবে। আর মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের অপছন্দের রাজ্যপালকে নিয়ে কী কী করেছিলেন, সেটা সবাই ভুলে থাকবেন?
আমাদের দেশের কাঠামোয় বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরোধ নতুন নয়। মূলত বিপরীতমনস্ক দলের সরকার কেন্দ্রে ও রাজ্যে থাকলে এই সংঘাতের প্রেক্ষিত ও প্রবণতা স্পষ্টতর হয়। ঘটনাবলির তালিকা দীর্ঘ।
এখন, বাংলার রাজ্যপাল পদে থাকা জগদীপ ধনকড়ের বারংবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এক্তিয়ার বহির্ভূত, কুৎসামূলক ও বিজেপির হয়ে ওকালতি করা পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার কড়া প্রতিবাদ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও তৃণমূল কংগ্রেস। এই ব্যক্তিকে সরানোর দাবিও করা হয়েছে। আজকের প্রযুক্তির যুগে ঘুম থেকে উঠে টুইট শুরু, শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানে গিয়েও কুৎসা, কথায় কথায় অনধিকার তলব, বিল সই না করে সরকারের কাজে বাধা সৃষ্টি, বিজেপির প্রতি আনুগত্যপ্রকাশ-লেবু কচলে তেতো করে ফেলেছেন ধনকড়। মুখ্যমন্ত্রী স্বাভাবিকভাবেই তীব্র সমালোচনা করেছেন।
[আরও পড়ুন: চিড়িয়াখানার রক্ষীকে মেরে সঙ্গী সিংহকে নিয়ে চম্পট সিংহীর, আতঙ্ক শহরজুড়ে]
এ নিয়ে বিজেপি এবং তার প্রচারকদের কেউ কেউ কিছু বলতে নেমেছেন। যেন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়। তাদের একটু মনে করিয়ে দিই গুজরাটে নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কী হয়েছিল। ২০১২/১৩ সালে গুজরাটের রাজ্যপাল শ্রীমতী কমলা বেনিওয়ালের সঙ্গে তীব্র সংঘাত হয় মোদির। এই সংঘাত তুঙ্গে ওঠে রাজ্য লোকায়ুক্ত কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগকে কেন্দ্র করে। রাজ্যপাল অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর এ মেহতাকে লোকায়ুক্ত নিয়োগ করেন। মোদি মানতে চাননি। স্বীকৃতি দেননি। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত লড়েছিল মোদি সরকার। দু’বছর আইনি লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত মোদি পরাজিত হন। যদিও তিতিবিরক্ত মেহতা তখন মোদির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে নিজেই সরে যান।
এরপর মোদি বিধানসভায় গুজরাট লোকায়ুক্ত কমিশন বিল পাশ করান। সেটি সই না করে ফেরত পাঠান রাজ্যপাল। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল এতে লোকায়ুক্ত নিয়োগের সব ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। এই রাজ্যপাল বেনিওয়াল বনাম মোদির সংঘাত ছিল শিরোনামে। বিজেপি তখন বলত, বেনিওয়াল কংগ্রেসের পক্ষে কাজ করছেন। আরও বলত, নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছেন মনোনীত রাজ্যপাল।
এরপর ২০১৪-তে কেন্দ্রে বিজেপির সরকার হয়। প্রধানমন্ত্রী হন মোদি এবং দেখা যায় গুজরাটের রাজ্যপাল পদ থেকে বেনিওয়াল অপসারিত। তাঁকে মিজোরামের রাজ্যপাল করা হয়। এখানেই শেষ নয়। এরপর দেখা যায় রাজস্থানে জমি কেলেঙ্কারিতে কমলা দেবীর নাম শোনা যাচ্ছে। তখন মাত্র দু’মাসের মধ্যেই তাঁকে মিজোরামের রাজ্যপাল পদ থেকেও অপসারণ করা হয়।
গুজরাটের রাজ্যপাল না মুখ্যমন্ত্রী, কে ঠিক ছিলেন সেদিন, সেটা আমার আলোচ্য নয়। আমার বক্তব্য, রাজ্যপালের কাজ পছন্দ না হলে মোদিও বিরোধিতা করেছিলেন। সরিয়ে দিয়েছিলেন পদ থেকে। তাহলে আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যখন এই রাজ্যপালকে সরাতে বলছেন, তখন কেন কেন্দ্র সরাচ্ছে না? কেন এই দ্বিচারিতা?
এক্তিয়ারবহির্ভূত কাজ করছেন বাংলার রাজ্যপাল। বারবার সরকারকে উত্ত্যক্ত করছেন। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিকে চিঠি দিলেও সুরাহা হচ্ছে না। তিনি কড়া অবস্থান নিচ্ছেন। এতে বিজেপি, তৎকাল বিজেপি বা আড়কাঠি বিজেপির যাঁরা ইতিউতি মন্তব্যের চেষ্টা করছেন, তাঁদের গুজরাটের ইতিহাসটা মনে রাখা দরকার। যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা বরং ব্যাখ্যা দিন মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মোদি সেদিন তাঁর রাজ্যের রাজ্যপালের বিরোধিতা করেছিলেন কেন? তখন গুজরাটে রাজ্যপাল হঠাও আর এখন বাংলায় রাজ্যপালের প্রতি দরদ, এসব চলতে পারে না।