সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লড়াই সহজ ছিল না। একটা রাজ্যে ২০ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। অন্য রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের জনপ্রিয়তা। আরেক রাজ্যে কংগ্রেসের (Congress) সাংগঠনিক শক্তি। তিন রাজ্যে আলাদা আলাদা চ্যালেঞ্জ ছিল। তিন চ্যালেঞ্জেই একেবারে দাপটের সঙ্গে উতরে গেল বিজেপি। সৌজন্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যা ট্রেন্ড তাতে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি (BJP) যে শুধু সরকার গড়ছে, তাই নয়। রীতিমতো কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করে দিয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে। বড় কোনও অঘটন না ঘটলে ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশে দেড়শোর বেশি আসন যাচ্ছে পদ্ম শিবিরের দখলে। অথচ এ রাজ্যে চ্যালেঞ্জ ছিল সবচেয়ে কঠিন। ২০ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, এবং সেই সঙ্গে কংগ্রেসের দেদার প্রতিশ্রুতির বন্যা। অধিকাংশ ভোট বিশেষজ্ঞ বলেই দিচ্ছিলেন, এবার মধ্যপ্রদেশে বিজেপির ফেরা কঠিন। কিন্তু অধুনা ভারতীয় রাজনীতিতে একটি প্রবাদ তৈরি হয়েছে, ‘মোদি হ্যায়, তো মুমকিন হ্যায়।’ সেই প্রবাদ আরও একবার সত্যি হল মধ্যপ্রদেশে। ‘ব্র্যান্ড মোদি’ জিতিয়ে দিল কঠিন লড়াই।
[আরও পড়ুন: স্ত্রীর কান ছিঁড়ে ‘অত্যাচার’, থানায় অভিযোগ জানানোয় শ্বশুরবাড়িতে আগুন লাগাল জামাই]
মধ্যপ্রদেশের তুলনায় সহজ ছিল রাজস্থানের লড়াই। সেরাজ্যে পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলের রীতি আছে। সেই রীতি অনুযায়ী এবার সরকার গড়ার কথা বিজেপিরই। তবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট কিন্তু কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেলেছিলেন গেরুয়া শিবিরকে। আসলে অশোক গেহলটের একাধিক প্রকল্প সেরাজ্যে জনপ্রিয়। কিন্তু মোদি-ম্যাজিকের সামনে উড়ে গেলেন ‘জাদুকর’ গেহলটও। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যা ট্রেন্ড তাতে রাজস্থানেও বিজেপির প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত।
[আরও পড়ুন: মানসিক অবসাদের জের! বাইপাসের ধারে আত্মঘাতী বৃদ্ধ]
গেরুয়া শিবিরের জন্য মধ্যপ্রদেশের মতোই কঠিন লড়াই ছিল ছত্তিশগড়ে। নকশাল অধ্যুষিত রাজ্যটিতে বিজেপির সংগঠনের অবস্থা ভালো নয়। স্থানীয় নেতৃত্বেও তেমন জোর নেই। তাছাড়া কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেলও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। ভোট বিশারদরা একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন, ছত্তিশগড়ে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করবে কংগ্রেসই। কিন্তু আখেরে দেখা গেল ওই রাজ্যটিতেও কার্যত গেরুয়া ঝড়। এখানেও ব্র্যান্ড মোদির সামনে উড়ে গেল গোটা কংগ্রেস।
আসলে এই তিন রাজ্যেই বিজেপি মুখ হিসাবে এগিয়ে দিয়েছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীকে। কংগ্রেস যেখানে স্থানীয় নেতৃত্বকে সামনে রেখে ভোটে নেমেছে, সেখানে বিজেপি স্থানীয় নেতাদের সেভাবে গুরুত্বই দেয়নি। পুরো প্রচার অভিযানই চলেছে মোদিকে কেন্দ্র করে। গেরুয়া শিবিরের প্রত্যাশা ছিল, স্থানীয় নেতাদের প্রতি যাবতীয় যা অসন্তোষ সব উড়ে যাবে মোদি আসরে নামলে। হলও সেটাই। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, সাংগঠনিক দুর্বলতা সব ঢেকে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাছাড়া গোবলয়ে বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে কংগ্রেস যে বারবার অসহায় হয়ে যায়, সেটা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। এই পাঁচ রাজ্যের ভোটকে অনেকেই ২০২৪ লোকসভার (Lok Sabha 2024) সেমিফাইনাল হিসাবে ধরে নিচ্ছিলেন। সেই সেমিফাইনালে যেভাবে মোদি ঝড় উঠল, তাতে লোকসভার আগে বিরোধী শিবিরের চিন্তা বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।