সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিল্লি সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিক, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উপরাজ্যপাল অনিল বৈজল এবং খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগেই আসরে নেমেছিলেন। এবার দিল্লির হিংসা রুখতে আসরে নামলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে রাতেই দিল্লি পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন।দেখা করেন উত্তর-পূর্ব দিল্লির ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে। বুধবার সকালে উত্তরপূর্ব দিল্লির বিস্তির্ণ অঞ্চল সরেজমনিতে ঘুরে দেখেন তিনি।
দিল্লি পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইতিমধ্যেই দাবি করেছে, দিল্লির পরিস্থিতি একপ্রকার নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া সেনা নামানোর সম্ভাবনাও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে খুলে দেওয়া হয়েছে মেট্রো স্টেশনগুলি। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যায় দাবি করুক, পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বুধবার সকালেও ঘটেছে বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা। উন্মত্ত জনতার রোষ থেকে বাদ যাচ্ছে না সমাজের কোনও অংশের মানুষই। প্রাথমিকভাবে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ালেও পরে তাদের ‘টার্গেট’ হয়ে উঠেছে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনী। এরপর আক্রমণ করা হয় খবর সংগ্রহে আসা সাংবাদিকদেরও। মঙ্গলবার এক বৈদ্যুতিন মাধ্যমের কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। আহত হয়েছেন আরও জনাপাঁচেক। ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা ১৮। আহত প্রায় দেড়শোর উপর। যার মধ্যে ৫৬ জন পুলিশকর্মী। ইতিমধ্যেই একজন হেড কনস্টেবল শহিদ হয়েছেন। গুরুতর আহত দুই আইপিএস অফিসার।
মাঝরাতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের একটি অংশ। তবে এই পরিস্থিতিতেও সেনা নামানোর পক্ষে নয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সূত্রের খবর, দেশের রাজধানীতে সেনা নামলে বিশ্বের কাছে খারাপ বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা করেই এই সিদ্ধান্ত। তার উপর মার্কিন রাষ্ট্রপতি দিল্লিতে থাকায় তাঁর সঙ্গেই রয়েছে প্রচুর বিদেশি সংবাদমাধ্যমও। তাই আরও একটু ধৈর্য নিয়ে চলতে চাইছে অমিত শাহর মন্ত্রক।
[আরও পড়ুন: মানবিক! দিল্লিতে মারমুখী জনতার কবল থেকে মুসলিম দম্পতিকে বাঁচালেন বিজেপি কাউন্সিলর]
পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে সোমবার রাতেই প্রায় ঘণ্টা দেড়েক মন্ত্রকের বিভিন্ন আধিকারিক ও আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন সকালে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনিল বৈজলদের সঙ্গে বিজেপি, কংগ্রেসের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন আমলা এবং আধিকারিকদের দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করেন শাহ। প্রায় ৩৫ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী ও বেশ কয়েক হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই এলাকার বেশিরভাগ গলিই বেশ ঘিঞ্জি। তাই অনেকক্ষেত্রেই সঙ্গে সঙ্গে অশান্ত এলাকায় গিয়ে পৌঁছন সম্ভব না হলেও যত দ্রুত সম্ভব সেখানে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। চারটি এলাকায় কারফিউ জারির পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব দিল্লির প্রায় বেশিরভাগ জুড়েই রয়েছে ১৪৪ ধারা। মাঝরাতেই দিল্লির স্পেশ্যাল পুলিশ কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছে আইপিএস অফিসার এস এন শ্রীবাস্তবকে।
[আরও পড়ুন: দিল্লির হিংসায় লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, গুলিবিদ্ধ সাংবাদিকও]
এদিকে, মঙ্গলবার মাঝরাতে জরুরি ভিত্তিতে এই সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি করেছে দিল্লি হাই কোর্ট। তবে, আদালত চত্বরে নয়, সেই শুনানি হয় বিচারপতির বাড়িতে। দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেভাবেই হোক হিংসায় আহতদের যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং তাঁদের নিরাপদভাবে হাসাপাতালে পৌঁছে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, দিল্লির বেশ কিছু জায়গায় হিংসার জেরে প্রবেশ করতে পারছে না অ্যাম্বুল্যান্সও। অন্যদিকে, এই হিংসার জেরে উত্তরপূর্ব দিল্লির ৮৬টি কেন্দ্রে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে CBSE। বোর্ডের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দিল্লির বাকি অংশে নির্ধারিত সূচি মেনেই পরীক্ষা হবে। শুধু উত্তরপূর্ব দিল্লির ওই কেন্দ্রগুলির জন্য নতুন করে তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
The post দিল্লির হিংসায় লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আসরে অজিত দোভাল appeared first on Sangbad Pratidin.