আকাশ মিশ্র: কথায় আছে অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট! দক্ষিণী ছবির পরিচালক মণিরত্নমের প্রযোজনায় তৈরি নেটফ্লিক্সের (Netflix) এক মুঠো ছবি বা অ্যান্থলজির ক্ষেত্রে একথা অল্প হলেও খেটে যায়। সব বাঘা বাঘা পরিচালক, চিত্রনাট্যকর একসঙ্গে দল বেঁধে ছবি তৈরি করে ফেলল। গোটা ৫ ঘণ্টা ধরে একের পর এক ছবি। ৯ টা অনুভূতি। ৯ টা গল্প। ৯ জন পরিচালক। ফরম্যাট হিসেবে ‘নবরস’ অবশ্যই দারুণ একটা প্রোজেক্ট। তবে গল্প এগোতেই খামতিগুলো একে একে সামনে এসে যায়। ৯ টা ছবির মধ্যে ঠিকঠাক দাঁড়াল মোটে ৪ টে!
প্রোজেক্ট অগ্নি (Project Agni)
‘নবরস’ ছবির ৩ নম্বর গল্প ‘প্রোজেক্ট অগ্নি’। বিষয় ‘আশ্চর্য’। ছবির পরিচালক কার্তিক নারেন। দক্ষিণী ছবিতে কার্তিক বরাবরই নতুন কায়দায় গল্প বলার জন্য জনপ্রিয়। এখানেও এই ধারা বজায় রাখলেন তিনি। তাই তো গল্প হিসেবে বাছলেন চেতনা ও অবচেতনা এবং কল্পবিজ্ঞানকে। যা কিনা মানুষের অতীত ও ভবিষ্যতকে বেঁধে রেখেছে। এই বিষয়কেই কার্তিক থ্রিলারের রূপ দিয়েছেন। যা কিনা অবাক করে দেওয়ার মতো। শেষ দৃশ্য পর্যন্ত আপনাকে বেঁধে রাখবে। খুব জটিল বিষয়কে অত্যন্ত সহজ ও যত্ন করে সামনে নিয়ে এসেছেন কার্তিক। আর এই ছবিতে অরবিন্দ স্বামী ও প্রসন্নের অভিনয়ও আলাদা করে নজর কাড়বে।
রুদ্রম- (Roudhram)
এটি নবরসের ৬ নম্বর গল্প। এর বিষয় রাগ। এই ছবি দিয়ে প্রথমবার পরিচালকের জুতোয় পা গলালেন অভিনেতা অরবিন্দ স্বামী। এই অ্যান্থলজির সেরা গল্পই হল এটিই। এক পুলিশ এবং এক যুবককে কেন্দ্র করেই এই ছবির গল্প তৈরি হয়েছে। তবে এর গল্পের আসল টুইস্টই এর ক্লাইম্যাক্স। ছবির শেষ পর্যন্ত যেভাবে রহস্য রেখে গিয়েছেন পরিচালক অরবিন্দ। তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।
ইনমাই- ( Inmai)
নবরস ছবির ৭ নম্বর ছবি পরিচালক রথীন্দ্রন প্রসাদের ইনমাই। বিষয় ভয়। এই ছবিতে পার্বতী এবং সিদ্ধার্থ। তবে এই ছবি একেবারেই চলতি হরর ছবি ঘরানাকে অনুসরণ করেনি। বরং গোটা ছবিজুড়ে ভয় অনুভূতিকে এমনভাবে সাজিয়েছেন যা কিনা গা ছমছমে। তবে এই ছবির আসল টুইস্টই হল ছবির শেষ। যা কিনা অবাক করে দেওয়ার মতো।
[আরও পড়ুন: Lihaaf Movie Review: চুঘতাইয়ের নিষিদ্ধ গল্পের দুর্বল চিত্রনাট্য, অতি আবেগে ডুবল ছবি]
ইধিরি- (Edhiri)
‘নবরস’ শুরুই হচ্ছে পরিচালক বিজয় নাম্বিয়ারের ছবি ইধিরি দিয়ে। এই ছবির বিষয় মূলত অপরাধ বোধ বা ক্ষমা। এক খুনি ও এক মহিলাকে কেন্দ্র করেই গল্প এগিয়ে চলে। তবে পরিচালক গল্পের মধ্যে দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, অপরাধবোধকে অদ্ভুত ভাবে তুলে ধরেছেন। দক্ষিণের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রেবতি এবং অভিনেতা বিজয় সেতুপতির অভিনয় মুগ্ধ করবে। অল্প সংলাপে এই ছবি যেন অনেক কথা বলে যায়।
নবরস দেখার পর, ৯ টি ছবির মধ্যে মূলত এই ৪টি ছবিই মনে থেকে যাবে। তার কারণ বাদবাকি ৫ টা ছবি একেবারেই মাঝারি মানের। বিশেষ করে হাস্যরস নিয়ে প্রিয়দর্শনের ছবি খুবই মোটা দাগের কমেডি। অন্যদিকে ঈর্ষা বোঝাতে ‘পায়েশম’ ছবিটি খুবই চেনা ছকে চলে। ‘শান্তি’কে বিষয় বানিয়ে ‘লিবারেশন টাইগারস অফ তামিল এলম’ (LTTE) যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি নবরসের ৫ নম্বর ছবিটি একেবারে বিষয় থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে সেভাবে মনে দাগ কাটতে পারে না।
অন্যদিকে ভালবাসাকে বিষয় নিয়ে নবরসের শেষ ছবি ‘গিটারে’ পরিচালক গৌতম মেনন, পুরনো বস্তাপচা লাভস্টোরিকেই তুলে আনেন। যার ফলে নবরসের সবচেয়ে খারাপ ছবি হয়ে থেকে যায় এটি। নবরসের ৮ নম্বর ছবিতে নকশাল আন্দোলনকে প্রেক্ষাপট বানিয়ে এক সৈনিকের প্রাণ রক্ষার গল্পও একেবারে ধোপে টেকে না।
শেষমেশ বলা ভাল, মণিরত্নমের প্রযোজনায় তৈরি এই নবরস নতুন রকমের অভিজ্ঞতা দেবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে সব গল্পের প্রতি সমান যত্ন থাকলে, নবরস সত্যিই অসাধারণ অ্যান্থলজি হয়ে উঠতে পারত।