আলাপন সাহা: বেঙ্গালুরু এয়ারপোর্ট থেকে মিনিট দশ-পনেরো লাগবে। প্রায় চল্লিশ একর জমি। মাস দু’য়েক আগে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly), সচিব জয় শাহ (Jai Shah), কোষাধ্যক্ষ অরুণ ধুমল (Arun Dhumal), এনসিএ প্রধান ভিভিএস লক্ষ্মণ (VVS Laxman), ভিত পুজো করে এসেছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে জোরকদমে।
বর্তমানে যে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (NCA) রয়েছে, তার সঙ্গে নতুন এনসিএ’র আকাশপাতাল তফাত। বলা হচ্ছে, বিশ্বের অন্যতম সেরা অ্যাকাডেমি হতে চলেছে। কী থাকছে না সেখানে! বোর্ডের অন্দরমহলে খবর নিয়ে জানা গেল, তিনটে সুবিশাল মাঠ থাকছে। যার একটা হবে পুরো আন্তর্জাতিক মানের। ফ্লাড লাইট থাকবে। শুধু গ্যালারি থাকবে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের বাকি সব সুবিধা থাকবে। বলা হচ্ছে, যে কোনও আন্তর্জাতিক মাঠকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিতে পারে এনসিএ’র ওই মাঠ। বাকি দু’টো মাঠেও দারুণ সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ঠিক দুবাইয়ের আইসিসির অ্যাকাডেমির মতো। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় আইসিসির (ICC) অ্যাকাডেমির মাঠগুলোতে ভারত, অস্ট্রেলিয়া-সহ বিভিন্ন টিম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল। বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্টের সময় নতুন এনসিএর মাঠে টিমগুলো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারবে।
শুধু মাঠ কেন, ইন্ডোর ফেসিলিটিও যা থাকছে, সেটাও চমকে দেওয়ার মতো। বোর্ডের (BCCI) তরফ থেকে বলা হল, বিশ্বের খুব কম জায়গাতেই এরকম ইন্ডোরের ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যাটিংয়ের জন্য পঞ্চাশটা নেটের ব্যবস্থা থাকবে। তবে আসল চমক হল, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাটি নিয়ে এসে বিভিন্ন ধরনের উইকেট প্রস্তুত করা হবে। আসলে বিদেশে যাওয়ার আগে ক্রিকেটাররা প্রাথমিক প্রস্তুতি যাতে এনসিএতে সেরে নিতে পারেন, সেই ভাবনাচিন্তা রেখেই এটা করা হচ্ছে। বিভিন্ন রকমের উইকেট তৈরি করা হবে। কালো মাটির উইকেট, লাল মাটির উইকেট, সব কিছু আলাদা আলাদাভাবে তৈরি হবে। কোনও উইকেটে বল বেশি টার্ন করবে, কোনওটায় আবার বেশি বাউন্স থাকবে। ক্রিকেটাররা যাতে বিভিন্নরকমের উইকেটে প্র্যাকটিসের সুযোগ পান, সেই ভাবনা থেকেই এটা করা হচ্ছে। আসল ব্যাপার হল, বিদেশে গিয়ে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, তার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি এখান থেকেই সেরে নিতে পারবেন ক্রিকেটাররা।
[আরও পড়ুন: ‘পেট্রোপণ্যে ভ্যাট না কমানো রাজ্যবাসীর সঙ্গে অন্যায়’, বাংলা-সহ বিরোধী রাজ্যগুলিকে তোপ মোদির]
এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। বর্তমান এনসিএ-তে রিহ্যাব পদ্ধতি নিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে নতুন যে জাতীয় অ্যাকাডেমি (National Cricket Academy) তৈরি হচ্ছে, সেখানে আলাদা করে স্পোর্টস সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন সেন্টার তৈরি করা হবে। বিসিসিআই এই ব্যাপারটার উপর আরও বেশি করে জোর দিচ্ছে। বর্তমানে এত পরিমাণ ক্রিকেট হচ্ছে যে, ক্রিকেটাররা মাঝেমধ্যেই চোট-আঘাত সমস্যায় ভুগছেন। চোট-আঘাত এখন বড় একটা ফ্যাক্টর হয়ে যাচ্ছে। দীপক চাহার যেমন। গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে চোট পেয়েছিলেন। তারপর আবার এনসিএ-তে রিহ্যাব চলাকালীন চোট পান। যার জেরে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও (T-20 World Cup) অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন। ক্রিকেটাররা যাতে আরও দ্রুত চোট সারিয়ে উঠতে পারেন, তার জন্য রিহ্যাব থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু আরও বৈজ্ঞানিক উপায়ে হবে। বিসিসিআই কর্তারা বেশ কিছু দিন ধরেই এরকম একটা জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তৈরি করার ভাবনাচিন্তা শুরু দিয়েছিলেন। সৌরভের আমলে সেটা আরও ভালভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ‘ঘৃণার রাজনীতি বন্ধ হোক’, মোদিকে খোলা চিঠিতে আরজি ১০৮ প্রাক্তন আমলার]
নতুন এনসিএ তৈরি হয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে যে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি আছে, সেটা আর থাকবে না। প্ল্যানিং-পর্ব পুরোটাই শেষ। বোর্ড কর্তারা আশা করছেন, দু’বছরের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগামী দু’বছরে ভারতীয় ক্রিকেট পেয়ে যাবে বিশ্বের অন্যতম সেরা অ্যাকাডেমি।