সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জন্মের ১২১ বছর পরও তাঁকে নিয়ে বাঙালির আবেগ একইরকম। তিনি জন্মেছেন, কিন্তু মৃত্যুর খবর বিশ্বাস করতে বা বুঝতে সায় নেই অনেকেরই। মহানিষ্ক্রমণের পর নেতাজির বিমান দুর্ঘটনা পর্ব পর্যন্ত বাঙালির কৌতুহলের শেষ নেই। সেই ধাঁধা কাটাতে আসছে এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের বই।
‘বোস ক্যান বি এ মেজর থ্রেট, ফাইন্ড হিম নাউ’। অর্থাৎ ‘বোস বড়সড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এখনই তাঁকে খুঁজে বের কর।’ ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগকে এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল ভিক্টর হোপ। ১৯৪১ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতার বাড়ি থেকে নেতাজির অন্তর্ধানের পর রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় সাহেবদের মধ্যে। তারপর বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মণিপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান সবই ইতিহাস। নেতাজিকে নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে ছিল সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরা। তাইওয়ানে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু-রহস্য নিয়ে তিন-তিন বার তদন্তও চালায় ব্রিটিশ সরকার। শেষমেষ বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে বলে মেনে নেয় তারা। এমনটাই জানা গিয়েছে ‘ লেইড টু রেস্ট: দ্য কনট্রভারসি ওভার সুভাষচন্দ্র বোস’স ডেথ’ নামের একটি বইয়ে। যার লেখ লন্ডনের বিখ্যাত সাংবাদিক আশিস রায়।
[নেতাজি কি সত্যিই বেঁচে রয়েছেন? নেটদুনিয়ায় তরজা তুঙ্গে]
দীর্ঘদিন ধরে নেতাজির উপর গবেষণা চালাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাংবাদিক আশিস রায়। সেই সময় নেতাজি সংক্রান্ত বেশ কিছু গোপন নথি চলে আসে তাঁর হাতে। সেখানে উঠে আসে বেশ কিছু অজানা তথ্য। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর খবর নিয়ে সন্দিহান ছিল ক্লিমেন্ট এটলির সরকার। ফলে দেওয়া হয় তদন্তের নির্দেশ। ওই বছর লন্ডনের নির্দেশে পরাধীন ভারত প্রথম তদন্ত শুরু করেন টি এস ফিনি নামের এক ব্রিটিশ পুলিশ আধিকারিক। ব্যাংকক, সাইগন বা বর্তমানের হো চি মিন সিটিতে তদন্ত চালানো হয়। ১৯৪৫ সালের অক্টোবর মাসে রিপোর্ট জমা দেন তাঁরা। বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছে নেতাজির বলে রিপোর্ট দেন তদন্তকারীরা।
তবে ফিনির রিপোর্টে সন্তুষ্ট হতে পারেনি তদানীন্তন ইম্পেরিয়াল সরকার। ফের ফাইল খোলার নির্দেশ দেয় তারা। এবারে তদন্তের ভার দেওয়া হয় ‘ব্রিটিশ কম্বাইনড সার্ভিসেস’কে। নেতাজির ছায়াসঙ্গী কর্নেল হাবিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। ১৯৪৫-এর ডিসেম্বরে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয় কম্বাইনড সার্ভিসেস। তারা জানায়, বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয় নেতাজির। মৃত্যুর সময় হাবিবুর রহমান নেতাজির সঙ্গে ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন ওই ব্রিটিশ তদন্তকারী। এবার কিছুটা আশ্বস্ত হয় ‘রাজ সরকার’। তবুও ফের একবার তদন্ত চালাতে বলা হয় লেফটেন্যান্ট কর্নেল জন ফিগসকে। টোকিওতে ‘ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মি’ লেফটেন্যান্ট কর্নেল শিরো ননগাকি, লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাদেও সাকাই এবং ডাক্তার তয়শি সুরিটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। তারপর ১৯৪৬ সালে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেন ফিগস। তিনি জানান বিমানে নেতাজির সঙ্গে ছিলেন ননগাকি ও সাকাই। আহত নেতাজির চিকিৎসা করেন সুরিটা। তাঁদের সামনেই নাকি মৃত্যু হয় নেতাজির। তিনটি রিপোর্টে একই কথা উঠে আসায় শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হয় ব্রিটিশ সরকার।
[ভিয়েতনামের জেলে নেতাজির মৃত্যু! ফরাসি ইতিহাসবিদের দাবিতে নয়া জল্পনা]
চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে মুক্তি পাবে আশিস রায়ের এই বিতর্কিত বইটি। বিখ্যাত ওই সাংবাদিক জানান, শুধুমাত্র মানবিকতার খাতিরেই বইটি লিখেছেন তিনি। ভারতের ওই মহান বীরের পরিবারের কথা ভেবেই তিনি এই কাজে হাত দিয়েছিলেন। আজও নেতাজির অস্থিভস্ম ভারতে আসেনি। তাঁর মেয়ে অনিতা পাফ চাইছেন গঙ্গায় বাবার চিতাভস্ম বিসর্জন দিতে। এই রহস্যের সমাধান হওয়া উচিত। তাঁর বইয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্রের কথাও তুলে ধরেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই সাংবাদিক। ১৯৪১ সালে তুরস্কে নেতাজিকে হত্যার চেষ্টা করে ব্রিটিশ ঘাতকরা বলেও দাবি করেন তিনি। সব মিলিয়ে তাঁর বইটিতে রয়েছে বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য। তবে যাই হোক না কেন, আজও রহস্যে মোড়া নেতাজির মৃত্যু। নেতাজি জয়ন্তীর পর ভারতমাতার এই বীর সন্তানকে নিয়ে নতুন করে যে জলঘোলা হবে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ব্রিটিশ সাংবাদিকের মন্তব্যে। তাঁর এই বই মৃত্যু রহস্যে নতুন কোনও কিনারা খুঁজে দেয় কিনা তা নিয়ে কৌতুহল দেশের ইতিহাস গবেষক তথা নেতাজি অনুরাগীরা।
[নেতাজি ফিরে আসবেন, আজও বিশ্বাস করে কাটোয়ার এই আশ্রম]
The post বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু নেতাজির? তিনবার তদন্তে ব্রিটিশ সরকারের হাতে একই রিপোর্ট appeared first on Sangbad Pratidin.