গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: আশি পেরিয়ে গিয়েছে বয়স। সঙ্গী অগুনতি কো-মর্বিডিটি। মাথাচাড়া দিয়েছে পুরনো কর্কটরোগও (Cancer)। এরই মধ্যে টানা ২৫ দিন কাটিয়ে দিয়েছেন হাসপাতালে। এই বয়সে দীর্ঘ ভেন্টিলেশন কাটিয়ে সুস্থ হওয়ার উদাহারণ বিরল। প্রবীণ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) মেডিক্যাল টিমের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম কর শুক্রবার জানিয়ে দিলেন, যত সময় যাচ্ছে, ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে অভিনেতার সুস্থ হওয়ার আশা।
কিডনির সমস্যার কারণে ইতিমধ্যে দু’বার ডায়ালিসিস করা হয়েছে সৌমিত্রর। বেলভিউ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর হিমোগ্লোবিন এবং প্লেটলেট কাউন্ট নতুন করে আর কমেনি। আপাতত সেসব নিয়ন্ত্রিতই রয়েছে। তবে শুক্রবার তাঁর ডায়ালিসিস করা হয়নি। এদিন দুপুরেও তিনি সামান্য চোখ মেলে তাকিয়েছিলেন। যদিও অভিনেতার বয়সের তুলনায় সুগার, প্রেশার, COPD, ক্যানসারের মতো কো-মর্বিডিটির কারণে এইটুকু উন্নতিকে খুব একটা আমল দিতে নারাজ চিকিৎসকরা। চেতনা এখনও ম্রিয়মাণ। গ্লাসগো কোমা স্কেলের সূচক উঠছেই না। আশার কথা একটাই, ভেন্টিলেশনে থাকলেও, তাঁর শারীরিক অবস্থার নতুন করে অবনতি হয়নি। তবে এই জন্য তাঁকে সংকটমুক্ত বলতেও নারাজ চিকিৎসকরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শুক্রবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্যরা তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। পরিবারের সঙ্গে অগণিত ভক্তও নিত্যদিন প্রিয় নায়কের আরোগ্য কামনা করছেন।
[আরও পড়ুন: করোনাও দমাতে পারেনি মনের জোর, লক্ষ্মী প্রতিমাকে নিজের হাতেই সাজালেন অপরাজিতা]
করোনা আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে মিন্টো পার্কের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বছর পঁচাশির ‘ফেলুদা’। প্রথমে তাঁকে ICU-তে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীকালে করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ হয়। কিন্তু কোভিড এনসেফেলোপ্যাথিতে (Covid Encephalopathy) কমতে থাকে চেতনা। গত এক সপ্তাহ ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি হয়। না চাইতেও তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। কিডনি কাজ না করলেও দু’বার ডায়ালিসিসের পর, এখন অনেকটাই মূত্র নিঃসরণ হচ্ছে। তবে অভিনেতার হিমোগ্লোবিন এবং প্লেটলেট কাউন্ট কমে যাওয়ায় চিন্তিত চিকিৎসকরা। তাঁকে ক্রমাগত রক্ত দিতে হচ্ছে। তাঁর স্নায়বিক সমস্যা মেটাতে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছেন।
[আরও পড়ুন: বাংলার পর এবার হিন্দিতে মুক্তি পাচ্ছে অনির্বাণের ‘ড্রাকুলা স্যর’, প্রকাশ্যে নতুন পোস্টার]
মেডিক্যাল বোর্ডের অভিজ্ঞতা বলছে, শারীরিক মাপকাঠির একটি সূচকের উন্নতি হলে দেখা যাচ্ছে অভিনেতার হয়তো অন্য এক বা একাধিক সূচকের অবনতি হয়ে যাচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে কোভিড সম্পর্কিত এনসেফালোপ্যাথি থেকে বেরিয়ে আসতেই পারছেন না সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা। বারবার হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণে রক্ত দেওয়ার দরকার হয়ে পড়ার বিষয়টি চিকিৎসকদের এখন নতুন মাথাব্যথা। কারণ, কিডনি পাকাপাকি বিকল হয়ে পড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায় এতেই।