সুকুমার সরকার, ঢাকা: জেলেই তৈরি হয় জেহাদের ছক! প্রকাশ্যে বাংলাদেশের নতুন জঙ্গি সংগঠনের চাঞ্চল্যকর তথ্য। খোদ প্রশাসনের নাকের ডগায় এহেন ষড়যন্ত্র রচনা ও তার বাস্তবায়ন নিরাপত্তা মহলে রীতিমতো উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ফাঁক রয়েছে নজরদারিতে?
কয়েকদিন আগেই জানা যায় যে বাংলাদেশে (Bangladesh) আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’। বৃহস্পতিবার ঢাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মহম্মদ আসাদুজ্জামান। বুধবার রাজধানী ঢাকার ডেমরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার পাঁচ সদস্যকে। অতি গোপনে ২০১৭ সাল থেকে এই জঙ্গিদল তৈরির কাজ চলছে। সদস্যদের প্রশিক্ষণ শুরু হয় দেশের পার্বত্য জেলাগুলিতে। সংগঠনটির বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পরেই নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে কালী মন্দির ভাঙচুর, দেবী সরস্বতীর মাথা ভাঙল মৌলবাদীরা]
সংবাদ সম্মেলনে ধৃত পাঁচ জঙ্গির নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তারা হচ্ছে– দেশের উত্তর জনপদ জেলা নাটোরের আবদুল্লা (২২), পূর্বের কুমিল্লা জেলার চান্দিনার তাজুল ইসলাম (৩৩), ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের মাহামুদুল হাসান (১৮) এবং একই জেলার জিয়াউদ্দিন (৩৭) এবং দক্ষিণের জেলা মাদারীপুরের হাবিবুল্লা (১৯)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিটিটিসি জানতে পারে, অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে জেহাদের জন্য বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়েছিল তারা।
বলে রাখা ভাল, সপ্তাহখানেক আগেই ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শীর্ষ নেতাদের ধরতে পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবন ও রাঙামাটির পাহাড়ে অভিযান শুরু হয়। ধৃত তরুণরা জানায়, তাদের এসব আস্তানায় ভারী অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এদিকে উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় জেহাদের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ১৯ জেলার ৫৫ তরুণের তালিকা প্রকাশ করেছে এলিট ফোরস র্যাব। সিটিটিসির এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর আগস্টে কুমিল্লা থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এক যোগে সাত তরুণ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এরপরেই একে একে এদের পাকড়াও করে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, শামিন মাহফুজ ওরফে স্যার নামে এক ব্যক্তি সংগঠনের প্রধান। ২০১৪ সালে ‘স্যার’ গ্রেপ্তার হয় ডিবি’র হাতে। ২০১৫ সালেও একবার সে গ্রেপ্তার হয়েছিল। তারপরই জেলের মধ্যে নতুন সংগঠন তৈরির পরিকল্পনএ করে সে। জামিন পেয়ে জঙ্গিদের নিয়ে শক্তিশালী একটি সংগঠন গড়ার কাজও শুরু করে দেয়। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে বেছে নেয় পাহাড়ি অঞ্চল। এরপর নতুন জঙ্গি সদস্যদের অস্ত্র চালনা-সহ বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম এই উপজেলাগুলি নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবিতে লড়াই করছে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ)। তাদের দাবি, তারা বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি এই ছয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে। কেএনএর দাবি, তাদের সামরিক শাখার শতাধিক সদস্য গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য মায়ানমারের কাচিন প্রদেশে পাড়ি জমায় বছর তিনেক আগে। এখন তারা ফায়ার এসে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।