shono
Advertisement

নিম্নমানের সিমেন্ট-বালি, জমি দখল করে প্ল‌্যানবিহীন নির্মাণ গার্ডেনরিচে! জেরায় বিস্ফোরক ওয়াসিম

জমি যাতে হাতছাড়া না হয়, তাই মালিকদের উপর জোর খাটায় ওয়াসিম, জেরায় স্বীকার।
Posted: 09:38 AM Mar 21, 2024Updated: 02:58 PM Mar 21, 2024

অর্ণব আইচ: দখল করা জমির উপরই তড়িঘড়ি বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছিল প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম। জমির মালিক রাজি থাকলেও নারাজ ছিলেন তাঁর ভাই। জমি যাতে হাতছাড়া না হয়, তাই মালিকদের উপর জোর খাটায় ওয়াসিম। প্রোমোটারের বিরুদ্ধে আদালতে কোনও মামলা হওয়ার আগেই খুব তাড়াতাড়ি কোনও প্ল‌্যান বা নকশা ছাড়াই নিজের মতো কাজ শুরু করেছিল সে। ধৃত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমকে জেরা করে এই চাঞ্চল‌্যকর তথা হাতে এসেছে লালবাজারের গোয়েন্দাদের। ধৃত জমির অন‌্য এক মালিক মহম্মদ সরফরাজ ওরফে পাপ্পুও তা স্বীকার করেছে গোয়েন্দাদের কাছে। বুধবার কয়েকজন আহতকে এসএসকেএম ও মেটিয়াবুরুজের বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এবার পুরসভার কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন গোয়েন্দারা। লাগোয়া জমিটির মালিক নাসির আহমেদের। ওই জমির উপর নিজের বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেন তিনি। সেই জমিও ওয়াসিম দখল করেছিল কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে রাজ‌্য ফরেনসিকের পদার্থবিদ‌্যা বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন। প্রাথমিকভাবে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশ জেনেছে যে, নির্মাণের মশলা ছিল একেবারে নিম্নমানের। কোনও মাটি পরীক্ষা না করেই তার উপর কংক্রিটের থাম বসিয়ে বাড়ি নির্মাণ শুরু হয়। থামগুলি পরীক্ষা করে ফরেনসিকের অভিমত, সেগুলি নির্মাণ ধরে রাখার মতো যথেষ্ট চওড়া ও শক্তপোক্ত নয়। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা জেনেছেন, মাটি ও বালি মেশানো সিমেন্ট ব‌্যবহার করা হয়েছিল। এক সরবরাহকারী প্রোমোটার ওয়াসিমকে ২০০ টাকা বস্তার সিমেন্ট বিক্রি করত। সস্তার মিহি দানার মাটি মেশানো বালি ব‌্যবহার করত সে। তার ফলে যেমন থাম শক্তপোক্ত হয়নি, তেমনই অবস্থা ছিল কংক্রিটের ঢালাইয়ের। মহম্মদ ওয়াসিমকে জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, সে নির্মাণ শুরু করার পর কোনও প্ল‌্যানের ধার ধারেনি। নিজের ইচ্ছামতো ভিত তৈরির পর থাম পুঁতে পর পর পাঁচটি তলার ফ্লোর ও ছাদ ঢালাই করে। কোনও প্ল‌্যান না থাকায় থাম নিজের মতো চওড়া করে। এমনকী, একেকটি থাম, একেকরকমের চওড়া, এমন নমুনাও চোখে পড়েছে ফরেনসিকের। পাঁচতলায় ইট গাঁথনি শুরু হওয়ার পর প্ল‌্যান ছাড়াই ইচ্ছামতো বাথরুম ও অন‌্যান‌্য ঘরের দেওয়াল তৈরি করে। তাই বাড়িটির ভারসাম‌্যও রক্ষা হয়নি।

[আরও পড়ুন: জোটে কংগ্রেসকে প্রাধান্য বামেদের, বৃহস্পতিবারই একপেশেভাবে প্রার্থী ঘোষণার পথে ISF]

এদিকে, তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গার্ডেনরিচে আজাহার মোল্লা বাগানে যে জমির উপর ওয়াসিম বাড়ি প্রোমোটিং করেছিল, তার মূল মালিক মহম্মদ সরফরাজ ওরফে পাপ্পু ও তার ভাই দু’জনই। প্রথমে আলিফনগরের সরফরাজের সঙ্গে কথা বলে ওয়াসিম। প্রোমোটিং করে তাঁকে ফ্ল‌্যাট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রথমে এতে রাজি হয় সরফরাজ। কিন্তু বেঁকে বসেন সরফরাজের ভাই। তিনি প্রতিবাদ করে ওঠেন। এর পরই হুমকি শুরু করে ওয়াসিম। ভাইয়ের কথায় সরফরাজও দোনোমনা করতে থাকে। তাতেই আগুনে ঘি পড়ে। ওয়াসিম দুই ভাইকেই প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে বলে, তার হাতে জমি তুলে দিতে হবে। যদিও কোনও নথিপত্র না দিয়েই সে মালিকদের ফ্ল‌্যাট দেবে বলে জানায়।

লালবাজারের এক কর্তা জানান, যখন ওয়াসিম জমি নিয়েছে বাড়ি তৈরি করার জন‌্য, তখন ধরেই নিতে হবে যে, মালিকপক্ষ ইচ্ছা করেই ফ্ল‌্যাটের লোভে তার হাতে তুলে দিয়েছে। জোর করে জমি কেড়ে নেওয়ার কথা উঠলেও সেই ব‌্যাপারে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। ওই জমিতে ওয়াসিম যে বেআইনিভাবে নির্মাণ করছে, তা জানত সরফরাজ। তাই একই ওয়াসিমের মতো একই অভিযোগে জমির মালিক সরফরাজও অভিযুক্ত। তার ভাইকে গোয়েন্দা পুলিশ খুঁজছে। তাকেও জেরা করা হবে। তার বিরুদ্ধে প্রমাণ মিললে আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

[আরও পড়ুন: একতরফা প্রার্থী ঘোষণা কেন? সিপিএমকে বিঁধে হাইকম্যান্ডের হস্তক্ষেপ দাবি ৪ কংগ্রেস জেলা সভাপতির]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement