অর্ণব আইচ: চিৎকার করতে বারণ করেছিলাম। শোনেনি। উল্টে পালাতে গিয়েছিল। তাই দেওয়ালে মাথা ঠুকে দিই। কয়েক মিনিট অজ্ঞান হয়ে থাকার পর ফের জেগে উঠে চিৎকার করতে থাকে। তখনই তরুণীর গলা টিপে ধরি।
পুলিশের কাছে দেওয়া সঞ্জয় রায়ের এই চাঞ্চল্যকর বয়ানই এখন সিবিআইয়ের হাতে। তারই ভিত্তিতে তদন্ত করছে সিবিআই। হাই কোর্টের নির্দেশে কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের মামলার তদন্তভার হাতে নিয়েছে সিবিআই। এফআইআরে খুন ও ধর্ষণ-সহ চারটি ধারা যোগ করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘ধর্ষণের অপরাধীদের দ্রুত কঠোর শাস্তি’, আর জি কর আবহে মাঝে রাজ্য সরকারগুলিকে কড়া বার্তা মোদির]
বুধবার সিবিআইয়ের এক যুগ্ম অধিকর্তা পদমর্যাদার আধিকারিক-সহ ৬ জন আধিকারিকের একটি টিম দিল্লি থেকে আসা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আরজিকর হাসপাতালে যায়। হাসপাতালের সেমিনার হল তথা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুরো হলটি খতিয়ে দেখেন সিবিআই আধিকারিক ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। কোন জায়গায় মহিলা চিকিৎসক ঘুমোচ্ছিলেন, কোন দেওয়ালে তাঁর মাথা ঠুকে দেওয়া হয়, শেষ পর্যন্ত তরুণী চিকিৎসকের দেহ কোথায় পড়ে ছিল-সহ আরও কিছু বিষয় তাঁরা খতিয়ে দেখেন। চেস্ট বিভাগের কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলেন। সেমিনার ও তার বাইরের অংশের ছবি এবং ভিডিও তোলেন তাঁরা। যে রাস্তা দিয়ে ধর্ষণ ও খুনের অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় তিনতলা হয়ে চারতলায় গিয়েছিল, সেই অংশটি খতিয়ে দেখেন তাঁরা। কিছু নমুনাও তাঁরা সংগ্রহ করেন। সিবিআই আধিকারিকরা জরুরি বিভাগে প্রবেশ করার সময় আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান।
সিজিও কমপ্লেক্সে রাত পর্যন্ত অভিযুক্ত সঞ্জয়কে জেরা করেন সিবিআই আধিকারিকরা। কেন এই অপরাধ সে করল থেকে শুরু করে অন্য কারও মদতে এই ঘটনাটি সে ঘটিয়েছে কি না, তা জানতে সিবিআই তাকে দফায় দফায় জেরা করে। জেরার মুখে সঞ্জয় পুলিশকে জানিয়েছিল যে, সেমিনার হলে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় ওই মহিলা চিকিৎসকের শরীর স্পর্শ করে সে। তিনি চমকে উঠে চিৎকার করে ওঠেন। সঞ্জয়ের দাবি, সে তরুণীকে চিৎকার করতে বারণ করেন। কিন্তু তরুণী ফের চিৎকার করতে গেলে সঞ্জয় তাঁকে হুমকি দিয়ে বলে, তিনি ও অন্য চিকিৎসকরা এই সেমিনার হলেই কী কী কীর্তি করেন, তা সে জানে। কিন্তু সঞ্জয়ের মুখে আঁচড় দিয়ে তরুণী পালানোর চেষ্টা করেন। তিনি বাইরে বের হলে সঞ্জয় ধরা পড়ে যাবে ও তাঁর চিৎকার শুনে বাইরের কেউ চলে আসতে পারে, তাই সে দেওয়ালে মহিলার মাথা ঠুকে দেয়। প্রথমে তিনি চেতনা হারালেও কয়েক মিনিট পর চেতনা ফিরে এলে দেখেন সঞ্জয় তাঁর শরীর স্পর্শ করছে। ফের তরুণী চিকিৎসক চিৎকার করতে যান। তখনই সে তরুণীর গলা টিপে ধরে। তিনি চেতনা হারানোর পর সে যৌন নিগ্রহ করে। তখনও তরুণীর শরীরে প্রাণ ছিল। এর পর তাঁকে খুন করে সে। পুলিশকে দেওয়া এই বয়ানের ভিত্তিতে সঞ্জয়কে জেরা করছে সিবিআই।