সুকুমার সরকার, ঢাকা: রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরাতে এবার সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে পাশে চাইলেন শেখ হাসিনা৷ শুক্রবার সেদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম ইব্রাহিম আল হাসিমি ঢাকার গণভবনে হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে রোহিঙ্গা সমস্যার কথা তাঁকে বিস্তারিত জানান৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও মায়ানমার এই ইস্যুতে আলোচনা করেছে এবং রোহিঙ্গাদের ফেরাতে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত করেছে। কিন্তু তাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। তিনি আরও বলেন,বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আরও সুবিধা দিতে তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য একটি দ্বীপও প্রস্তুত করা হয়েছে৷ আরব আমিরশাহির প্রতিমন্ত্রী এবিষয়ে বাংলাদেশকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর৷ ১০ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গাকে সবরকম সহযোগিতা করে নিজের দেশে আশ্রয় দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রতিমন্ত্রী রিম ইব্রাহিম আল হাসিমি৷
[ আরও পড়ুন : রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরাতে ফের বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও মায়ানমার]
কিন্তু সমস্যা বাঁধছে অন্যত্র৷ রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে ফিরতে নারাজ৷ ফেরার কথা শুনেই বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা মুসলিমদের গলায় শোনা যাচ্ছে এক সুর৷ দেশীয় ভাষায় তাঁরা বলছেন, ‘আঁরা না যাইমু। বর্মাত মারি ফালাইবো। জায়গাও নাই, কিছু নাই। আঁরা গিয়া কী কত্তাম?’ অর্থাৎ বর্মায় তাঁরা ফিরে যেতে চান না৷ ওখানে গেলে তাঁদের প্রাণ সংশয় আছে৷ ওখানে তাঁদের জমি, বাড়ি কিছুই নেই৷ গিয়ে কী করবেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন৷ কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালির রোহিঙ্গা শিবিরে এভাবেই নিজেদের ভাষায় কথাগুলো বললেন। বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় ছোট একটি দোকান খুলেছেন বালুখালি ক্যাম্পের বড়বাজারে। তাই এদেশ ছেড়ে তিনি আর ফিরতে চান না মায়ানমারে।
উখিয়ার পশ্চিম বালুখালি রোহিঙ্গা শিবিরের এক নম্বর সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে বড়বাজার। সেখানে বার্মিজ ও বাংলাদেশি পণ্যের বেচাকেনা চলছে রমরমিয়ে। মায়ানমারের মংডুর বড় ব্যবসায়ী ইদ্রিশ সওদাগর দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। সঙ্গে এসেছেন স্ত্রী এবং আরও তিন সন্তান। বাংলাদেশে এসেই তিনি বালুখালি বড়বাজারে একটি ছোট দোকান তৈরি করেন। মাত্র দেড় বছরের মাথায় ইদ্রিস সওদাগর এখন বড়বাজারের বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। এখন দিনে অন্তত ৫০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয় বলে জানান তিনি। মা, বাবা মায়ানমারের হলেও আরিফের জন্ম কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে। ব্যাটারিচালিত রিকশা চালায়। সে জানিয়েছে, শরণার্থী পরিচয়পত্র আছে তার। রোহিঙ্গা শিবির ছেড়ে কক্সবাজার চট্টগ্রামের বাসে হকারি করে৷ মায়ানমার কবে ফিরবে? এই প্রশ্নের জবাবে আরিফ জানায়, মায়ানমার কোনওভাবেই তার দেশ নয়। তার জন্ম বাংলাদেশে।
[ আরও পড়ুন : ফিরদৌস, নূরের ঘটনায় উদ্বিগ্ন টলিউডে কর্মরত বাংলাদেশি অভিনেতারা]
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিশ্বকে রোহিঙ্গা সংকটের ভয়াবহতা নিয়ে সতর্ক করেছে। উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় রয়েছে দেশি,বিদেশি কয়েকটি চক্র। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা এ রকম বেশ কয়েকটি এনজিও প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের কৌশলে অনাগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন এনজিও-র উসকানিতে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে ফিরতে অনীহা প্রকাশ করছেন৷ মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের কোনও লক্ষণ নেই।
The post নিজেদের দেশে ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা, নতুন সমস্যায় বাংলাদেশ appeared first on Sangbad Pratidin.