ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: অভিনব মানবিক উদ্যোগ রাজ্যের। এবার থেকে প্রসবের সময় প্রসূতির সঙ্গে থাকতে পারবেন তাঁর মা কিংবা স্বামী। এই মর্মে নয়া নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর (WB Health Department)। এতদিন বিদেশে এবং রাজ্যে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে এই সুবিধা মিলত। এবার থেকে রাজ্য সরকারের হাসপাতাল, মাতৃসদন এমনকী, জেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও এই সুবিধা মিলবে। তবে সিজার পদ্ধতি প্রসবের ক্ষেত্রে এই সুবিধা মিলবে না।
প্রসবের সময় আশা-আশঙ্কার দোলাচলে ভোগেন নতুন মায়েরা। সেই সময় শারীরিক দেখভালের মতোই মানসিক জোর প্রয়োজন হয়। মা বা মাতৃস্থানীয়া কেউ কিংবা স্বামীকে পাশে চান অন্ত্বঃসত্তারা। এতদিন লেবার রুমে চিকিৎসক, নার্সরা ছাড়া কাউকে সঙ্গে পেতেন না প্রসূতিরা। এবার সেই নিয়ম বদলের পালা। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছে, প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর থেকে এমনকী, প্রসবের সময় লেবার রুমেও উপস্থিত থাকবেন অন্ত্বঃসত্তার আত্মীয়। মা কিংবা মাতৃস্থানীয়া কোনও একজন থাকতে পারবেন সঙ্গে। তবে প্রসূতি যদি চান লেবার রুমে তাঁর স্বামীও থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অন্যান্য প্রসূতির গোপনীয়তার দিকে নজর রাখতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রসব সাথী’।
[আরও পড়ুন: ওষুধের দোকান থেকে এবার আপনিও কিনতে পারবেন করোনার জোড়া ভ্যাকসিন! মিলল প্রাথমিক ছাড়পত্র]
চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রসবের সময় একটি মেয়ের কাছে সবথেকে বেশি ভরসার স্থান তাঁর পরিবার, বিশেষ করে তাঁর মা। তাই লেবার রুমে মায়ের উপস্থিতি প্রসূতির মনের জোর বাড়াবে। পাশাপাশি, ‘নরম্যাল ডেলিভারি’র সময় প্রসূতিকে বিশেষ একটি ‘পজিশনে’ রাখতে হয়, যাতে স্বাভাবিকভাবে প্রসব করতে পারেন প্রসূতি। এর জন্য প্রসূতিকে ধরে রাখার প্রয়োজন পড়ে। প্রসব সাথী লেবার রুমে সেই কাজটি করবেন। প্রসবের আগে অন্ত্বঃসত্তাকে হাঁটানোর প্রয়োজন হয়। সেই সময় তাঁকে সাহায্য করবেন ‘প্রসব সাথী’। প্রসবের পরও সদ্যোজাত ও মায়ের খেয়াল রাখবেন ওই প্রসব সাথী। তাঁদের শারীরিক কোনও অসুবিধা হলে তা দ্রুত চিকিৎসক ও নার্সেদের জানাতে পারবেন তিনি। এসব বিষয়গুলির কথা মাথায় রেখেই এবার যুগান্তকারী পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, প্রসব সাথীদের বিশেষ ব্যাজ বা কার্ড দেওয়া হবে। যা দেখিয়ে তিনি নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে বা হাসপাতালে ঢুকতে হবে। প্রসূতির সঙ্গেই থাকবেন তিনি। যেহেতু তাঁরা নতুন মা এবং সদ্যোজাতর দেখভাল করবে তাই প্রসব সাথীদের পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কোভিডবিধি অক্ষরে অক্ষরে পালনের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। রাজ্য সরকারের এই মানবিক উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য একটা থাকছেই।
রাজ্যের জেলা হাসপাতাল, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অনেক সময় প্রসূতির তুলনায় বেডের সংখ্যা কম হয়। একই বেডে দেখা যায় একাধিক প্রসূতি একসঙ্গে রয়েছেন। এর উপর যদি ‘প্রসব সাথী’রা তাঁদের সঙ্গে থাকেন তা স্থান সংকুলান করা সম্ভব হবে কীভাবে? এ প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, মাতৃ সদন, স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সহ হাসপাতালগুলির জায়গা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে নতুন মায়েদের সঙ্গে প্রসূতিরা থাকতে পারে। ইতিমধ্যে রাজ্যের এই নয়া নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদনগুলিতে।