সন্দীপ্তা ভঞ্জ: একই ছাদের তলায় হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান! সে কী? চরমপন্থী মনোভাবাপন্নরা তো শুনলেই রে-রে করে উঠবে! বছর দুয়েক আগে অবধি কলকাতা শহরের বুকে মুসলিমদের ভাড়া বাড়ি খোঁজা দায় হয়ে উঠেছিল। কারণ, মুসলিম শুনলেই মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিতেন বাড়ির মালিকরা। ভাড়া দেওয়া তো দূরের কথা। তবে, ব্যতিক্রমও আছে বইকী! আর সেই ব্যতিক্রমী গল্প আমরা ইতিমধ্যেই শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের সাম্প্রতিক ছবি ‘গোত্র’তে দেখেছি। যেখানে নিত্য রাধামাধব পূজারি মুক্তিদেবীর বাড়িতে থাকেন তারেক আলি। যে বাড়িতে রোজ প্রহরে প্রহরে পূজিত হন ইষ্টদেবতা রাধামাধব। অন্যদিকে, প্রহর মেনে নমাজ পড়েন তারেক। যেখানে মু্ক্তিদেবীর সাধের গোবিন্দধামে জন্মাষ্টমী ভোগ পরিবেশন করেন মুসলিম তারেক। ঠিক এরকমই বাস্তবের ‘গোত্র’র মুক্তিদেবী এবং তারেককে পাওয়া গিয়েছে দিন কয়েক আগে। খাস কলকাতা শহরের বুকে তাঁদের বাস।
তবে তারেক মুক্তিদেবীকে ‘মা’ বলে ডাকলেও বাস্তবের প্রেক্ষাপট একটু আলাদা। সেখানে ঠাকুমা-নাতির সম্পর্ক ওদের। স্মৃতিলতা দত্ত, খাঁটি সুবর্ণ বণিক বাঙালি। অন্যদিকে, আরেকজন আবু শামিম। নাম শুনে বুঝতে নিশ্চয় দ্বিধা হওয়ার কথা নয় যে দ্বিতীয়জন মুসলিম! স্মৃতিলতা দেবীকে শামিম ঠাকুমা বলেই ডাকেন। সম্প্রতি, এক গণমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা দিয়েছিল এই সম্প্রীতির গল্প। আর বাস্তবের আরও এক ‘গোত্র’ চরিত্রকে পেয়ে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত শিবু-নন্দিতা। সংবাধমাধ্যমে দেখেই এই পরিচালকদ্বয়ের তরফে যোগাযোগ করা হয় স্মৃতিলতা দেবী এবং আবু শামিমের সঙ্গে। ‘গোত্র’ দেখতে আমন্ত্রণ জানাতেই রাজি হয়ে যান ‘ঠাকুমা-নাতি’। তৎক্ষণাৎই উইন্ডোজের পক্ষ থেকে দক্ষিণ কলকাতার এক খ্যাতনামা প্রেক্ষাগৃহে বিশেষ আয়োজন করা হল স্মৃতিলতা দেবী এবং আবু শামিমের জন্য। যাঁদের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখলেন ‘গোত্র’র মুক্তিদেবী অনুসূয়া মজুমদার এবং তারেক নাইজেল আকারা। অতঃপর ‘গোত্র’র রিল লাইফের মুক্তিদেবী-তারেকের সঙ্গে দেখা হল বাস্তবের ভিনধর্মী ‘ঠাকুমা-নাতি’ স্মৃতিলতা দত্ত এবং আবু শামিমের। যেন মুখোমুখি সিনেমা আর বাস্তব।
[আরও পড়ুন: শিশুদের যৌন হেনস্তা রুখতে ইউনিসেফের মুখ হলেন আয়ুষ্মান]
কেমন করে গড়ে উঠল এই ঠাকুমা-নাতির সম্পর্ক? বছর সাতেক আগের কথা। মুসলিম শুনেই শামিমকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁর বাড়ির মালিক। ঘটনাচক্রে স্মৃতিলতা দত্তের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানেই থাকা শুরু করেন শামিম। তবে এক মুসলিম ছেলের হিন্দু বাড়িতে থাকার খবর কিন্তু চাপা থাকেনি। অনেকেই স্মৃতিলতা দেবীকে হুমকি দিয়ে যান শামিমকে বাড়ি ছাড়া করতে। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে হাঁটেন তিনি। শামিমকে আপন করে নেন। এখন একই ছাদের তলায় ভিন্ন ঘরে পূজিত হন মঙ্গলচণ্ডী এবং আল্লাহ। মানব ধর্মই যে সবচেয়ে সেরা- তা বারবার আমাদের শেখায় বাস্তবের মুক্তিদেবী-তারেকরা।
[আরও পড়ুন: সংস্কৃততে টুইট লেডি গাগার, ধেয়ে এল ‘জয় শ্রীরাম’ মন্তব্য!]
The post বাস্তবের ‘গোত্র’র গল্প, ভিনধর্মী ঠাকুমা-নাতিকে ছবি দেখার আমন্ত্রণ শিবু-নন্দিতার appeared first on Sangbad Pratidin.