সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঠান্ডা ঘরে বসে ফাইলে সই, জাবদা খাতায় লম্বা-চওড়া হিসেবনিকেশ করে ঘাটতি বের করা, বরাদ্দ স্থির করা আর সেসবের উপর ভিত্তি করে প্রতি বছর বাজেট পেশ – এটাই দস্তুর। সে রাজ্য বাজেটই (Budget) হোক কিংবা কেন্দ্রীয়, অর্থমন্ত্রীদের ভূমিকা মোটের উপর এরকমই। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের সঙ্গে তাঁর জনসংযোগের কোনও উপায় নেই তিনি দারিদ্র্যের বোঝা টের পাবেন। তবে ঠিক এভাবে যুগের পর যুগ ধরে চলতে থাকা কার্যপদ্ধতি একদিনে খারিজ করে দিলেন দেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (Nirmala Sitharaman)। তিনি নিরাপত্তার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে নেমে এলেন মাটিতে, আর পাঁচজন ক্রেতার মতোই দরদাম থেকে বাজার থেকে সবজি কিনলেন। চেন্নাইয়ের (Chennai) মায়লাপুরের বাজারে এমন ভিআইপিকে দেখে চমকে গেলেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। তিনিও সারলেন জনসংযোগ।
বছর তিন আগে দেশে তখন পেঁয়াজের (Onion) মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হাহাকার চলছিল। কেন এই লাগামছাড়া দাম, তা নিয়ে সংসদে সরব হন বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ”পেঁয়াজ, রসুন আমি বেশি খাই না।” এহেন জবাবে বিরোধীরা আরও আক্রমণ শানিয়ে ফের প্রশ্ন তোলেন, তাই বলে কি দামবৃদ্ধি নিয়ে কোনও পদক্ষেপও করবেন না? সেসময় সীতারমণের জবাবটি নিয়ে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। অনেকেই বলেছিলেন, বাজারদর সম্পর্কে ধারণাই নেই অর্থমন্ত্রীর। মূল্যবৃদ্ধির যন্ত্রণা আর বুঝবেন কীভাবে?
[আরও পড়ুন: লক্ষ্মীর আরাধনায় ব্যস্ত বাংলা, সবজি ও ফলের দামে হাতে ছেঁকা গৃহস্থের]
বিরোধীদের সেই অস্ত্র ভোঁতা করতেই হয়ত শনিবার সন্ধেবেলা বাজারে গিয়েছিলেন নির্মলা সীতারমণ। চেন্নাইয়ের মায়লাপুরের একটি বাজারে পৌঁছে যান। তাঁকে দেখে প্রথমে মনে করা হচ্ছিল, বোধহয় তিনি বাজার পরিদর্শনে গিয়েছেন। কিন্তু একটি সবজির দোকানের সামনে গিয়ে দরদাম শুরু করেন। তাতেই বোঝা যায়, ভিভিআইপি ক্রেতা এসেছেন তাঁদের বাজারে (Market)। হাতে নিয়ে বেছে বেছে কচু কিনলেন অর্থমন্ত্রী। কিনলেন ডুমুর, পুঁইমেটুলি, নটেশাকের মতো আরও বেশ কয়েকটি সবজি। কেনার ধরন দেখেই বোঝা গেল, তিনি খাঁটি নিরামিষাশী এবং সবজিপ্রেমী। বাজারে উপস্থিত অন্যান্য ক্রেতাদের সঙ্গেও কথাবার্তা বললেন সীতারমণ।
[আরও পড়ুন: করোনার কোপ কাটিয়ে দুর্গাপুজোয় ঘুরে দাঁড়াল বাংলার অর্থনীতি, ৫০ হাজার কোটির বাণিজ্য]
সে যাই হোক, বাজারদর কি বুঝলেন অর্থমন্ত্রী? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। নিজের হাতে সবজি কিনে কেমন অভিজ্ঞতাই বা হল? সেসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে ক্রেতা-বিক্রেতারা বেজায় খুশি। এই যে মন্ত্রী নিজে নেমে বাজার করলেন, সেটাই তাঁদের কাছে চমকপ্রদ বিষয়। আর নিন্দুকরা বলছেন, যাক, পেঁয়াজ-রসুনের দাম না হয় জানতেন না, কিন্তু এবার সবজির দরদাম সম্পর্কে ধারণা তো হল। আগামী দিনে আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটার আগে নিশ্চয়ই এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন নির্মলা সীতারমণ।