বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়া দিল্লি: পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ীই রবিবার কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi) সঙ্গে বৈঠক করলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব। বৈঠকের পরে বিহারের দুই নেতার তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন সোনিয়া। তাই এখনই বিরোধী জোট নিয়ে চিন্তা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হলেই ২০২৪এর জন্য জোট গঠন করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নীতীশ (Nitish Kumar) বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লোভ নেই তাঁর।
তবে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হওয়াই নীতীশের একমাত্র লক্ষ্য। রবিবারের বৈঠকেও সেই কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, এনডিএ জোট ছেড়ে যখন বিহারে মহাজোটের সরকার গঠন করলেন নীতীশ, তখন থেকেই আঁচ করা গিয়েছিল, কেবলমাত্র রাজ্যের প্রধান পদে বসে সন্তুষ্ট নন তিনি। সেই কারণেই ২০২৪সালে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে বিহারের মসনদে লালুপুত্র তেজস্বী যাদবকে বসানো হবে, এমনই পরিকল্পনা করা হয় আরজেডির দিক থেকে। সেখান থেকেই কংগ্রেসের অন্দরে সংশয় শুরু হয়, কারণ বিরোধী জোটের নেতৃত্ব হাতছাড়া করতে একেবারেই রাজি নয় কংগ্রেস।
[আরও পড়ুন: পুজো প্রস্তুতিতে জল ঢালছে বৃষ্টি, করোনা বিদায়ের পর দিল্লির ‘অসুর’ এখন বৃষ্টি]
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর থেকে বিরোধী ঐক্য গঠনেক কাজে কিছুটা হলেও ধাক্কা লাগে। নিয়মিত বিরোধীদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ছেদ পড়ে। কিন্তু বিহারে নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর থেকেই ফের বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার কাজে গতি পায়। লালুপ্রসাদ (Lalu Prasad Yadav) ও কংগ্রেসের হাত ধরেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। বাইরে থেকে সমর্থন করে বামেরা। একপরেই নিজেই অবিজেপি দলের ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠেন নীতীশ কুমার। একদফা দিল্লি সফর করে রাহুল গান্ধী, শরদ পাওয়ার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সীতারাম ইয়েচুরি সহ বাম নেতাদের সঙ্গে একদফায় আলোচনা সেরে যান। কিন্তু সে যাত্রায় বিদেশে থাকায় দেখা হয়নি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে। এবার পুরনো বন্ধু লালুপ্রসাদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে রবিবার সন্ধ্যায় ১০ জনপথে যান বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে নীতীশ জানান, বিজেপির আগ্রাসন ঠেকাতে সব বিরোধীকে এক ছাতার তলায় আসতেই হবে। কংগ্রেসের সাংগাঠনিক নির্বাচন মিটে গেলেই ফের তাঁরা দিল্লি আসবেন। এবং সব অবিজেপি দলের নেতৃত্বকে নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার কাজ শুরু করবেন। নিয়মিত বিরোধীদের বৈঠকও হবে। তবে বিহারে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নীতিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেন এদিন নস্যাৎ করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তবে নীতিশের অতিসক্রিয়তার পিছনে অন্য কারণ দেখছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের মতে, দীর্ঘদিন মুখ্যমন্ত্রীত্ব সামলানোর পর এবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সির দিকে নজর পড়েছে তাঁর। সোনিয়া সহ অবিজেপি দলের নেতৃত্বের কাছ থেকে জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার সবুজ সংকেত পেলে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে জল্পনা। সেক্ষেত্রে লালুপুত্র তেজস্বী যাদবকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন পুরনো বন্ধুকে।