সুব্রত বিশ্বাস: ছাপ্পান্ন বছর পার হয়ে গিয়েছে। অতীতে যাঁরা সেই রেলপথ দিয়ে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করতেন তাঁদের অধিকাংশই আজ ইহলোক ছেড়েছেন। এবার ফের ভারত-বাংলাদেশের (Bangladesh) মধ্যে যোগসূত্র তৈরি হতে চলেছে। রেলপথে জুড়ছে নিউ জলপাইগুড়ি-ঢাকা। ২৬ মার্চ থেকেই দুই দেশের মধ্যে শুরু হবে যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা।
[আরও পড়ুন: ভয়াবহ দুর্ঘটনা বর্ধমানে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লরি পিষে দিল ৭ জনকে]
জানা গিয়েছে, সপ্তাহে দু’দিন ট্রেনটি চলবে বলে আপাতত ঠিক হয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) থেকে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার ট্রেনটি সকাল সাড়ে ন’টায় ছাড়বে এমনটাই প্রথমিকভাবে ঠিক হয়েছে। এনজেপি থেকে ঢাকা (Dhaka) পর্যন্ত ট্রেনটি চলবে। তবে ভাড়া এখনও ঠিক হয়নি। এনজেপি স্টেশনের থেকে ট্রেনটি চললে সেখানকার কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা কী থাকবে, পাশাপাশি কর্মীদের কার্যপদ্ধতি, ট্রেন চলাচলের পরিকাঠামোর উন্নয়ন, কর্মীদের প্রশিক্ষণ নিয়ে এই ক’দিন আলোচনা হয়েছে দু’দেশের রেলকর্তাদের মধ্যে।
গত ডিসেম্বর মাসে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারচুয়াল উপস্থিতিতে এই রেলপথ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও ট্রেন এখনও চলেনি। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ঘোষণা করেন, এই রেলপথ দিয়েই উত্তরবঙ্গের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের মেলবন্ধন ঘটবে। মঙ্গলবার ভারত ও বাংলাদেশের রেলকর্তাদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। এই রেলপথ খুব শিগগির চালু করার বিষয়ে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়। নিউ জলপাইগুড়ির রেলওয়ে ইলেকট্রিক অফিসের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের পাকসি ডিভিশনের ডিআরএম এস ইসলাম, কাটিহারের ডিআরএম আর কে বর্মা ও শিয়ালদহের ডিআরএম এসপি সিং-সহ দুই দেশের একাধিক রেলকর্তাদের বৈঠক হয়। পণ্যবাহী ট্রেনের যাতায়াতের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তে আসার একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। তারপর বুধবার ফের এই কর্তারা যাত্রীবাহী ট্রেন চালনা নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার বৈঠক শেষে রেল কর্তারা জানিয়েছেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের চিলাহাটি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। প্রথমে পণ্যবাহী পরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে।
১৯৬৫ সালের আগে হলদিবাড়ি থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত ট্রেন চললেও ভারত-পাক যুদ্ধের পর সেই রুট বন্ধ হয়ে যায়। লাইন তুলে ফেলা হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) দুই দেশের সংযোগকারী লাইন ফের চালু করার উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালে হলদিবাড়ির বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত নয় কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন তৈরি করে বাংলাদেশ সরকার। খরচ হয় ৮০ কোটি টাকারও বেশি। হলদিবাড়ি থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইন তৈরি করে ভারত সরকার। নতুনভাবে তৈরি রেলপথ খুলে যাওয়ার আগে দু’দিন ধরে রেলকর্তাদের এই বৈঠক যথেষ্ট আশার আলো দেখিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ডিআরএম এস পি সিংয়ের বক্তব্য, নতুন এই রেলপথ দু’দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতির সঙ্গে বাণিজ্যের পথ প্রশস্ত করবে। একইসঙ্গে পর্যটন শিল্পের বিকাশও ঘটবে। বাংলাদেশবাসীকে এখন কলকাতা দিয়ে ঘুরপথে শৈল শহর দার্জিলিং যেতে হয়। রেলপথ চালু হলে সরাসরি কম সময়ে সেখানে পৌঁছে যাবেন। খরচও সাশ্রয় হবে। উত্তরবঙ্গবাসী সরাসরি বাংলাদেশ যেতে পারবেন। ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি ঘটবে অচিরেই বলে রেলকর্তারা এদিন জানান।