গৌতম ব্রহ্ম: ডায়াবেটিস, টিবি, জন্ডিস, ‘ডিকমপেনসেটেড ক্রনিক লিভার ডিজিজ’। চার-চারটি রোগে আক্রান্ত রোগী। হাঁটাচলা করতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিন্তু, সেই অবস্থাতেও হাসপাতাল থেকে পালালেন বছর তিপান্নের এক ব্যক্তি। চিকিৎসকদের অনুমান, হাসপাতালে মদ না পেয়েই পালিয়েছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে।
[গন্তব্যে নামানো নিয়ে বচসা, যাত্রীর হাতে কামড় ক্যাব চালকের]
পলাতক রোগীর নাম অজয় পাত্র। বাড়ি হরিদেবপুরের পালুয়া মধ্যপাল পাড়ায়। গত ২৪ মার্চ পেটে যন্ত্রণা নিয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন তিনি। রামমোহন ব্লকের আরএফ ১ ওয়ার্ডে ছিলেন অজয়বাবু। মঙ্গলবার সকাল আটটা নাগাদ ওয়ার্ডের কর্মী ও নার্সরা আবিষ্কার করেন, তিনি বেডে নেই। বিস্তর খোঁজাখুঁজি করে রোগীর সন্ধান মেলেনি। শেষপর্যন্ত বেলা ১১টা নাগাদ থানায় মিসিং ডায়েরি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। খবর দেওয়া হয় অজয় পাত্রের বাড়িতেও। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এখনও ওই রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার বিমলবন্ধু সাহা জানিয়েছেন, ‘২০ বছর ধরে ওই রোগী মদ্যপানে অভ্যস্ত। নেশার জিনিস না পেলে ‘উইথড্রয়াল’ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু, হাসপাতালের ডায়েটে তো আর মদ দেওয়া যায় না। ডাক্তাররা নিশ্চয়ই নেশা কাটানোর ওষুধ দিয়েছিলেন। তবে পালানোর অন্য কোনও কারণও থাকতে পারে। তদন্ত শেষ হলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।‘ গুরুতর অসুস্থ অজয় পাত্র কীভাবে হাসপাতালে থেকে পালিয়ে গেলন, তা জানতে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, ডাঃ এস এস সামন্ত ও ডাঃ এস বি পুলাইয়ের অধীনে ভরতি ছিলেন অজয় পাত্র। তাঁর শয্যার হেড টিকিটেও স্পষ্ট লেখা রয়েছে, ‘পেশেন্ট ইজ অ্যালকোহলিক ফর টোয়েন্টি ইয়ারস’। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। তাঁর শরীরে টিবি বাসা বেঁধেছে। প্রায় এক মাস ধরে প্রস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রাও অনেক বেশি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমান, সকালে হাসপাতালের কর্মী ও নার্সদের শিফট পরিবর্তনের সময়েই সম্ভবত চম্পট দিয়েছেন অজয় পাত্র।
[পার্টিতেই পাতা ধর্ষণের ফাঁদ, বন্ধুর ফ্ল্যাটেই নিগৃহীতা ছাত্রী]
কিন্তু, সত্যিই কি এমনটা সম্ভব? শুধুমাত্র নেশার টানে হাসপাতাল থেকে কি পালিয়ে যেতে পারেন মূমূর্ষ রোগীও? মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সময়মতো নেশার জিনিস না পেলে ‘ডেলিরিয়াম ট্রিমেন্স’ উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এটা হলে রোগী অনেকসময় কাউকে চিনতে পারে না। স্থান-কাল-পাত্রের জ্ঞান থাকে না। এমন রোগীর পালানোর প্রবণতা থাকে। আর অজয় পাত্র নামে ওই প্রৌঢ় যেহেতু একাধিক রোগে আক্রান্ত, তাই তাঁর ‘ডেলিরিয়াম ট্রিমেন্স’ হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি।
[SSC পরীক্ষার্থীদের চাকরির টোপ দিয়ে প্রতারণা, জালে ২ শিক্ষক-সহ ৬]
The post মদ না পেয়ে হাসপাতাল থেকে উধাও রোগী, শোরগোল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে appeared first on Sangbad Pratidin.