অভিরূপ দাস: মন খারাপ মাদকাসক্তদের। করোনার টিকা নিতে হলে দূরে রাখতে হবে সোনালি তরল। ঠোঁটে গ্লাস ছোঁয়ালে কাজ করবে না কোভিড (COVID-19) টিকা। এমনটাই জানিয়েছেন নির্মাতারা। কতদিন বন্ধ রাখতে হবে মদ খাওয়া?
এই প্রশ্নই ঘুরছে মাদকপ্রেমীদের মনে। এই সময়সীমা প্রতিটি টিকার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে প্রতিষেধক (COVID Vaccine) নিয়ে ৯৪ দিন অ্যালকোহল নৈব নৈব চ। রাশিয়ার তৈরি করোনা (CoronaVirus) টিকা স্পুটনিক-ভি নিলে ২ মাস মদ ছোঁয়া যাবে না। মডার্না প্রতিষেধকের নিয়ম অনুযায়ী ৪২ দিন মদ খাওয়া নিষিদ্ধ। এ রাজ্যে অ্যালকোহলের বিক্রি বরাবরই চড়া। ফি বছর ৮০ লক্ষ কেস বিয়ার বিক্রি হয় বঙ্গে। একেকটি কেসে ২৪টি করে বিয়ারের বোতল থাকে। অন্যদিকে, বছরে আইএমএফএল বা ইন্ডিয়ান মেড ফরেন লিকারের বিক্রি হয় ১.৪ কোটি কেস। পরিমাণেই মালুম হয় বাংলায় মদ বিক্রির বহর। কোভিড টিকা বাজারে এলে ও পথে যাওয়া বারণ। ফের লকডাউনের পরিস্থিতি ফিরে আসবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিক্রেতারা।
[আরও পড়ুন: সল্টলেকে বাড়ির ছাদে মিলল যুবকের কঙ্কাল! খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার গৃহকর্ত্রী]
তবে প্রাণ বাঁচাতে গেলে টিকা নির্মাতাদের পরামর্শ মেনে চলা ছাড়া উপায় নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চের এপিডেমিওলজি এবং কমিউনিকেবল ডিজিজের প্রধান ডা. সমীরণ পাণ্ডা জানিয়েছেন, “টিকা নিলে কোনওভাবে মদ্যপান করা যাবে না।” তাঁর ব্যাখ্যায়, “চিকিৎসা পরিভাষায় অ্যালকোহলকে বলে ইমিউনো সাপ্রেসেন্ট। অর্থাৎ অ্যালকোহল রক্তে মেশার পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। সংক্রামক স্ট্রেনকে শরীরে প্রবেশ করানোর আগে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হচ্ছে। এই নিষ্ক্রিয় ভাইরাল স্ট্রেন অত্যন্ত দুর্বল। তার আর শরীরে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করার ক্ষমতা নেই। এই স্ট্রেন শরীরে ঢুকে বি সেলকে সক্রিয় করে তুলবে। যা অ্যান্টিবডি তৈরির পক্রিয়াকে উজ্জিবিত করবে। কিন্তু অ্যালকোহল এই প্রক্রিয়াকেই ব্যাহত করবে।”
কীভাবে? ডা. পাণ্ডার কথায়, “অ্যালকোহল অন্ত্রে প্রবেশ করে ভয়ংকর কাণ্ড ঘটায়। অন্ত্রের সামনে সারিবদ্ধ ইমিউন সেলকে শরীরের ফার্স্টলাইন অফ ডিফেন্স বলা হয়। অ্যালকোহল এগুলোকেই নিস্তেজ করে দেয়। কোভিড টিকা রক্তে মিশে যাকে সবার প্রথম উজ্জিবিত করবে তাকে অ্যালকোহল দিয়ে নিস্তেজ করে রাখলে চলবে কি করে? স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত মদ্যপান করলে টিকা নেওয়ার পর যে পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া উচিৎ তা কখনওই তৈরি হবে না।”
শুধু টিকা নেওয়ার পরেই নয়, যেদিন টিকা নেবেন তার দিন সাতেক আগে থেকেই মদ বন্ধ রাখতে বলছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস। যেমনটা লেখা রয়েছে মডার্না প্রতিষেধকের লেবেলেও। অ্যালকোহলের একটা প্রভাব থাকে। কয়েকদিন আগে থেকে বন্ধ রাখাটাই যুক্তিযুক্ত। ডা. বিশ্বাসের কথায়, মদ্যপান করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। করোনা আতঙ্কে দিশেহারা পৃথিবী। মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। সকলেই চাইছেন দ্রুত টিকা আবিষ্কার হোক। টিকা নেওয়ার যে উদ্দেশ্য সেটাই যদি সফল না হয় তাহলে দীর্ঘ গবেষণার মানে থাকবে না। শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই নয়, অ্যালকোহল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত তথ্য থেকে স্পষ্ট জানা যায়, অতিরিক্ত মদ্যপানে ফুসফুসে সংক্রমণ তথা নিউমোনিয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় অ্যাকিউট রেসপিরেটরি স্ট্রেস সিনড্রোম বা ‘এআরডিএস’ ও সেপসিসের আশঙ্কা। যা করোনাকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে। টিকা নেওয়ার আগে তাই এখন থেকেই মুখ শুকনো রেখে নেট প্র্যাকটিস করছেন অনেকে।