সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভিলেন একজনই – নোভেল করোনা ভাইরাস (Coronavirus)। সেটাই এক লহমায় পালটে দিয়েছে সব কিছু। নানা উৎসব-অনুষ্ঠানের আনন্দ হারিয়ে গিয়েছে করোনার কাঁটায়। দুর্গাপুজো, ক্রিসমাস – সবই কেটেছে নিউ নর্মালে। এবার সরস্বতী পুজোর পালা। যদিও জৌলুসের বিচারে দুর্গাপুজোর সঙ্গে তাঁর ‘বিদ্যেবতী’ কন্যের আরাধনার আয়োজন বেশ খানিকটা ফিকে। কিন্তু বাংলার পড়ুয়াদের কাছে বিদ্যার দেবী দারুণ পছন্দের। বিদ্যে, বুদ্ধি অর্জনের উৎসাহ কম থাক বা বেশি, সরস্বতী পুজোর দিনটা তো একেবারে স্পেশ্যাল। উড়ে বেড়ানোর দিন। কিন্তু কোভিড-১৯ সেই অবাধ ওড়ায় বাধ সেধেছে। তাতে সবচেয়ে বেশি মনখারাপ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের (Burdwan University)ছাত্রছাত্রীদের। এই তত্ত্ব বিনিময়েই যে লুকিয়ে থাকে মন দেওয়ানেওয়ার রসদ। তার কী হবে এবার?
এ এক ঐতিহ্য। বাংলার ঐতিহ্য, বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের আবেগ। একুশে পা দেওয়ার আগে বছরে মাত্র একটি দিনই তো অবাধ স্বাধীনতা। বাসন্তী শাড়ি, হলদে পাঞ্জাবির ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা, আড়চোখ, আলতো উদাসী হাসি, মা সরস্বতীর পায়ের কাছে রাখা কলম তুলে দু’লাইন কবিতা গুঁজে দেওয়া পাঞ্জাবির পকেটে – এসব দৃশ্যের কোলাজে চোখের সামনে দানা বাঁধে এক রসায়ন। তা প্রেম না অন্য কিছু, সে বিচার না হয় তোলা থাক ভাবী সময়ের জন্য।
[আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ফের বাঘের দেখা, নদী পেরনোর সময় ক্যামেরাবন্দি দক্ষিণরায়]
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় আবার একধাপ এগিয়ে। সরস্বতী পুজো অর্থাৎ বাঙালির প্রেমদিবসের পরদিন এখানকার ছাত্রাবাস আর ছাত্রী আবাসের মধ্যে তত্ত্ব বিনিময় হয়। একেবারে ঢাকঢোল পিটিয়ে বর-কনের বাড়ির মতোই ছাত্রী আবাস থেকে ছাত্রাবাস এবং ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রীদের আবাসে নিয়ে যাওয়া হয় উপহারের ডালি। এমন দিন তো বছরে একবারই আসে।
[আরও পড়ুন: মালদহে তুঙ্গে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বিধায়কের বাড়িতে ‘হামলা’ প্রাক্তন মন্ত্রীর]
২০২০ তেও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হস্টেলে এই তত্ত্ব বিনিময়ের প্রথা চলেছিল মহাসমারোহে। করোনা তখনও থাবা বসায়নি। এ বছর করোনা কাল। বসন্তপঞ্চমীতেও চোখ রাঙিয়েছে মহামারী। তাই এবার দীর্ঘদিনের প্রথায় ছেদ। হস্টেলে হস্টেলে বাণীবন্দনা চলছে ঠিক, কিন্তু শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনে। এবছর আর হলদে পাঞ্জাবি, বাসন্তী শাড়ির মধ্যে আলতো ছোঁয়াছুঁয়ি নেই। কোপ পড়েছে তত্ত্ব বিনিময়ের রীতিতেও। ছাত্রী আবাস আর ছাত্রাবাসের মধ্যে উপহার আদানপ্রদান নেই, নেই উপহারের ফাঁকে থাকা দু-চার কথার চিরকুটও। তাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ঠিক সেভাবে বসন্ত এল না। বাগদেবীর আরাধনা হল বটে, তবে নিষ্প্রাণ, জৌলুসহীন। কিছু অপ্রাপ্তি, বছরভর বুকের ভিতর জমিয়ে রাখা সমস্ত কথা অপ্রকাশিত রেখেই কেটে গেল মাঘপঞ্চমীর তিথি।
ছবি ও ভিডিও: মুকুলেসুর রহমান।