স্টাফ রিপোর্টার: অকালবর্ষণে চাষের ক্ষতির কারণে রাজ্যের কোনও কৃষক আত্মহত্যা করেননি। বিজেপি অপপ্রচার চালাচ্ছে। রাজ্যে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা বিরল। সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে সেকথা জানিয়ে দিলেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (Sovandeb Chattopadhyay)। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা কৃষকদের জন্য রেখেছে, তাতে কোনও কৃষক আত্মঘাতী হওয়ার কথা নয়। বিজেপি যেহেতু কৃষি আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে সেটাকে ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করছে।’’ একই সঙ্গে কৃষকদের সার দেওয়ার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে কীভাবে বঞ্চনা করছে সে পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা রবিশস্যের সময় ৬.৭২ লাখ টন সার (১০-২৬-২৬ এটি বিশেষ ধরনের সার) চেয়েছিলাম। কেন্দ্র ২২-২৩ অর্থবর্ষে সার দিয়েছে ৭৯,৯০০ মেট্রিক টন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে চাষিদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। ২০-২১ সালে তাও ৪.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন সার দিয়েছিল কেন্দ্র, সেখানে বছর বছর তা কমছে।’’
[আরও পড়ুন: ‘ডিভোর্সি অর্জুন এখনও মনে প্রাণে বিজেপি’, দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে তোপ TMC বিধায়কের]
দুদিনের অকালবৃষ্টির কারণে রাজ্যে আলু এবং ধানচাষের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এর মধ্যেই হুগলির খানাকুল এবং বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। আর সেই ঘটনা নিয়েই বিরোধীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ শাসকদলের। সে প্রসঙ্গে মন্ত্রী এদিন সাফ জানিয়ে দেন, পারিবারিক সমস্যার কারণেই ওই দুজন আত্মহত্যা করেছেন। তিনি বলেন, এরাজ্যে কৃষকবন্ধু নতুন প্রকল্পে ১ কোটি ১ লক্ষ ৪০ হাজার কৃষক অন্তুর্ভুক্ত হয়েছেন। তাতে ভাগচাষিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যে সমস্ত চাষি শস্যবিমার আওতাধীন। ফলে শস্যের ক্ষতি হলে কৃষকরা বিমার টাকা পেয়ে যান। কোনও কৃষক মারা গেলে সরকারিভাবে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এছাড়াও পেনশনের ব্যবস্থা রয়েছে। ৬০ বছর বয়স হলেই কৃষকরা ১ হাজার টাকা পেনশন পান। এছাড়াও কৃষক বন্ধু প্রকল্প থেকে কৃষকদের সর্বোচ্চ ১০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা সাহায্য করা হয়। এত কিছু সাহায্য থেকেই পরিষ্কার, এ রাজ্যে কৃষক আত্মহত্যার কোনও ঘটনা নেই।’’
২০১৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে কৃষকদের শস্যবিমা। আর এই বিমা বাবদ সরকার কত টাকা জমা দিয়েছে, আর কত টাকা কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, কৃষিমন্ত্রী এদিন সেই তথ্য তুলে ধরেন। বলেন, ‘‘২০১৯ সালে রাজ্য সরকার প্রিমিয়াম দিয়েছে ৫৪২৭.৩৫ কোটি টাকা। আর চাষিরা ফসলের ক্ষতি বাবদ পেয়েছেন ২৭২৬ কোটি টাকা।’’ তাঁর কথায়, স্বাভাবিকভাবেই বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হলে সে টাকা সরকার দিয়ে দেয়। এবার প্রয়োজনে রবি ও খরিফ শস্যে পুরনো যে বিমার দিন তা বাড়ানো হতে পারে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘কৃষিতে আমরা এগিয়ে। কৃষকদের আয় তিনগুণ বৃদ্ধি হয়েছে। কৃষিজীবীদের আয়ের ক্ষেত্রে আমরা সেরা। তাই বিজেপি বদনাম করতে নেমে পড়েছে। কৃষকদের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে।’’ মন্ত্রী এদিন জানান, শুধু শস্যবিমা নয়, চাষ শুরু করতে দেরি হলেও সে ক্ষেত্রেও কৃষকদের টাকা দেওয়া হয়। পাশাপাশি বৃষ্টির অজুহাতে একশ্রেণির ব্যবসায়ী আলুবীজের কালোবাজারি শুরু করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। আর অভিযোগ পেলে ব্যবসায়ী-ডিলার সহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।