দীপঙ্কর মণ্ডল: কিছু কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে শুকনো মুড়ি বা চিড়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে। কিন্তু এখানে মিলছে না তাও। খাবার নেই। টানা ১৪ দিন বিদ্যুৎ নেই। এমনকী নেই পানীয় জল টুকুও!
পূর্ব মেদিনীপুরের দেউলপোতা ভাগবত বালিকা বিদ্যালয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা এসে এখানে উঠেছেন। বুধবার ছত্রিশগড় থেকে ফেরা দেউলপোতার বাসিন্দা অনুভব মহাপাত্র বেরিয়ে এসে জানালেন, ভিতরে ভীষণ গরম। যেন রুটির তাওয়ায় সেঁকা হচ্ছে। তার মধ্যে জল নেই। এত কষ্ট, ভাষায় বোঝানো যাবে না।
[আরও পড়ুন: ‘আমফানে সুন্দরবনের অরণ্যের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কলকাতা’, পরিদর্শন সেরে মন্তব্য বনমন্ত্রীর]
ঘূর্ণিঝড় আমফানে রাজ্যের বিরাট অংশের মত তছনছ হয়ে গিয়েছে খেজুরিও। শয়ে শয়ে ইলেকট্রিক পোস্ট উপড়ে পড়েছে। বিস্তীর্ণ জনপদ সন্ধের পর অন্ধকারে। তীব্র গরমে শিশু এবং বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যেসব ওষুধের জন্য রেফ্রিজারেটর বাধ্যতামূলক তা মিলছে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা পানীয় জলের। প্রশাসন জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছে ঠিকই। কিন্তু এক অজ্ঞাত কারণে জলের হাহাকার খেজুরি জুড়ে। বিদ্যুৎ না থাকাতেই মূলত এই সমস্যা। দেউলপোতায় মেয়েদের স্কুলে কেরল, ছত্রিশগড়, মুম্বই, দিল্লি প্রভৃতি শহর থেকে প্রচুর শ্রমিক বাড়ি ফিরে এখানে উঠেছেন। কেন তাঁদের জন্য খাবার নেই, জল নেই, বিদ্যুৎ নেই? ১৪ দিনেও কেন ঠিক হল না লাইন? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শ্রমিক পরিবারগুলিতে।
খেজুরির এক নম্বর ব্লকের বিডিও তীর্থঙ্কর ঘোষ বলছেন, “দেউলপোতায় যে স্কুলে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চলছে তা সরকার অনুমোদিত নয়। যারা ওখান থেকে বেরচ্ছেন তাঁদের চালের ব্যবস্থা করেছি। বিদ্যুতের লাইন মেরামতের কাজ চলছে।” এত ‘নেই’য়ের মধ্যে কীভাবে বেঁচে আছেন ভিতরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা? মুম্বই থেকে ফেরা সৈকত মহাপাত্র ভিতর থেকে ফোনে জানালেন, “আমরা ৩০-৩৫ জন আছি। সমস্যার শেষ নেই। পানীয় জল তো দূরের কথা স্নানেরই জল নেই। একটা ভাঙা বিস্কুট দিয়েও কেউ সাহায্য করছে না। বাড়ি থেকেই আমাদের খাবার আসছে। খাবারের সঙ্গে প্রত্যেকদিন একটা দুটো করে মোমবাতি দিয়ে যাচ্ছেন মা-বোনেরা।”
স্থানীয় শিক্ষক তরুনাভ দাসের কথায়, “আমরা নিজেরা টাকা দিয়ে জেনারেটর চালিয়ে সবার পানীয় জলের ব্যবস্থা করছি। বিদ্যুতের তার ঠিক করে দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে কন্ট্রাক্টর প্রচুর টাকা দাবি করছে। আমরা তা দেব না ঠিক করেছি।” প্রচুর সমস্যার মাঝেও স্থানীয় ক্লাব দেউলপোতা গ্রাম্য গোষ্ঠী পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করছে। যাঁরা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ করে বেরিয়ে আসছেন, ক্লাবের তরফে সম্পাদক তনুজ বেরা তাঁদের হাতে কিছু খাদ্য সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন।
[আরও পড়ুন: ৮ জুন থেকে খুলছে রাজ্যের পাঁচটি পর্যটন কেন্দ্র, জেনে নিন কী কী?]
The post খাবার দূরের কথা, পানীয় জলও জুটছে না কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে, নাজেহাল পরিযায়ীরা appeared first on Sangbad Pratidin.