ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও জোট সম্ভব নয়। বিজেপি বিরোধী সরকার অথবা আন্দোলন সবকিছুতেই নেতৃত্ব থাকবে কংগ্রেসের (Congress) হাতে। রাজ্যে এসে জোর গলায় দাবি করে গেল এআইসিসির (AICC) নেতারা। সেই সঙ্গে জয়রাম রমেশ দিগ্বিজয় সিংদের দাবি, তৃতীয় ফন্ট বলে যে কিছু হয় না, অতীতে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার প্রচারে এসে শনিবার বিধান ভবনে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেসের দুই প্রবীণ কেন্দ্রীয় নেতা জয়রাম রমেশ এবং দিগ্বিজয় সিং। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে জয়রাম রমেশ দাবি করেন, “কংগ্রেস ভেঙে অনেক দলই তৈরি হয়েছে, কিন্তু কংগ্রেস এই নামটা তারা ছাড়তে পারেনি। এই নামটা কিন্তু তাদের দলের সঙ্গে যুক্ত করতে হয়েছে। নেহেরু যদি পেটেন্ট নিতেন যে কংগ্রেস নামটা কেউ যুক্ত করতে পারবে না তাহলে বোধহয় অন্যরকম হতো, ভালো করতেন। তবে যে যাই করুক না কেন, কংগ্রেস নামটা কিন্তু তাদের দলের আগে বা পরে রাখতেই হয়েছে। এটাই কংগ্রেসের সাফল্য। কংগ্রেস হচ্ছে হাতি। অনেকে মনে করেন কংগ্রেস শেষ, কিন্তু কংগ্রেস নিজেদের ঐতিহ্য নিয়েই আছে।
[আরও পড়ুন: বিজেপির দেখানো পথে তৃণমূল বিরোধিতা! পলিটব্যুরোর বৈঠকে ধমক খেলেন বঙ্গ সিপিএম নেতারা]
এদিন জয়রাম রমেশরা (Jairam Ramesh) দাবি করেন, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে যে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ হচ্ছে, তা অতীতে কখনও কোনও দল করার সাহস দেখায়নি। ১৫০ দিন ধরে উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত হাঁটবেন রাহুল গান্ধী। তার সঙ্গে পদযাত্রায় থাকছেন ১২০ জন। এরপর পূর্ব থেকে পশ্চিম আরও একটি পদযাত্রা করার ভাবনা আমাদের রয়েছে। তারিখ আমরা পরে ঠিক করব। পশ্চিমবঙ্গেও ‘ভারতের জোড়ো (Bharat Jodo) পশ্চিমবঙ্গ’ হবে, সুন্দরবন থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত এই যাত্রা হবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে। কংগ্রেসের প্রথম সারির সমস্ত নেতারা থাকবেন। কবে এই পদযাত্রা শুরু হবে তা চূড়ান্ত করবে কংগ্রেস কমিটি। ২০ তারিখ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি আলোচনা করে ঠিক করবে দিনক্ষণ। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা দাবি করেন, রাহুল গান্ধীর এই পদযাত্রার সাফল্য দেখে ভয় পেয়েছে বিজেপি। তাই কংগ্রেস ভাঙার মরিয়া চেষ্টায় নেমেছে তাঁরা। গোয়াতে কংগ্রেস বিধায়কদের তুলে নেওয়া এটা তারই ফল, আরও অনেক ঘটনা ঘটবে আমরা সব কিছুর জন্য প্রস্তুত আছি।
[আরও পড়ুন: কংগ্রেসের পালটা বিজেপির, ‘ভারত জোড়ো’র জবাবে ‘বিবিধতা মে একতা’ করবে গেরুয়া শিবির]
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে জয়রাম রমেশ বা দিগ্বিজয় সিংরা তৃণমূল কংগ্রেসের নাম সরাসরি একবারও উচ্চারণ করেননি। তবে, তাঁদের মূল বার্তা তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উদ্দেশ্যেই ছিল। তৃতীয় ফ্রন্ট অথবা কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে যাবতীয় যা মন্তব্য দিল্লির কংগ্রেস নেতারা করছেন, সব ক্ষেত্রেই টার্গেট ছিল মমতা। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস বহু আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছে তাঁরা যে বিজেপি বিরোধী জোটের কথা বলছে, তাতে কংগ্রেসকে ব্রাত্য করে রাখার কোনও উদ্দেশ্য নেই। শুধু নেতৃত্বের ব্যাটন থাকবে মমতার হাতে। এদিনও কংগ্রেসকে পালটা দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি বলেছেন, “আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগছে কংগ্রেস৷ রোজ দল ভাঙছে। ওদের ছাড়া আমাদের চলেছে। ওদেরকে আমাদের প্রয়োজন কোথায়? আমরা কাউকে ছুরি মারিনি কোনওদিন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে আমাদের একই রাজনীতি। ২০০৯ সাল থেকে সব ভোট নানা দফা-রফা করে আমাদের নড়ানো যায়নি। বাংলার মানুষ আমাদের সাথে আছে। ওরা প্রাসঙ্গিক হতে চাই।” তৃণমূলের আরেক মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলছেন,” কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জোটের কথা বলেনি তৃণমূল। আসলে আত্মতুষ্টিতে ভুগছে কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যৌথ মেকানিজম হোক। কংগ্রেস দায়িত্ব পালন করেনি। দয়া করে জমিদারি মানসিকতা না দেখিয়ে বিজেপিকে হারিয়ে দেখান। পঞ্জাবটাও হারলেন। তৃণমূল তার কর্তব্য পালন করছে।”