শীতকালে ত্বক ভাল রাখতে তেল কেন জরুরি, কোন তেল বেশি উপকারী? জানালেন ডার্মাটোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. রথীন্দ্রনাথ দত্ত। শুনলেন সোমা মজুমদার।
শীতের মরশুম মানেই রুক্ষ ত্বক। তাপমাত্রার পারদ না চড়লেও ত্বক কিন্তু আমাদের ঠান্ডা আবহাওয়ার জানান দিয়ে দেয়। সামান্য নখের আঁচড় লাগল কি লাগল না, ত্বকের উপর সাদা দাগ হয়ে গেল! আর সেই রুক্ষ ত্বক থেকে বাঁচতে আজকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী এলেও ত্বকের যত্নে আজও তেলের জুড়ি মেলা ভার। তবে সব তেল সবার জন্য নয়। তা বুঝেই তেল মাখুন।
কেন তেল এত জরুরি?
যুগ যুগ ধরে বহুবিধ উপকারিতার জন্যই আমাদের দেশে ত্বকের পরিচর্যায় তেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের যত্নে তেল ব্যবহার করা উচিত। সেক্ষেত্রে তেল আমাদের রোমকূপের মধ্যে প্রবেশ করে ত্বকে পুষ্টি জোগায়। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং তেল ব্যবহারের ফলে ত্বকের যে বর্ম তৈরি হয়, তা ভেদ করে ত্বকে বাইরের আবহাওয়ার কোনও খারাপ প্রভাব পড়তে পারে না। ফলে ত্বকে বলিরেখা পড়ে না, ত্বক টানটান থাকে এবং তেল মাখলে ত্বকে তাড়াতাড়ি বার্ধক্যের প্রাথমিক লক্ষণগুলি ফুটে ওঠে না। এছাড়া তেল শরীর থেকে টক্সিন শুষে নেয়। আবার তেল গরম করে মাখলে পেশি শিথিল থাকে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
স্নানের আগে না পরে, কখন তেল মাখা ভাল?
তেল শুধু মাখলেই হবে না, তেল মাখার পরে ভাল করে মালিশ করতে হবে। নচেৎ তেল মাখার পরে স্নান করলে শরীর থেকে তেল বেরিয়ে যাবে। তবে ত্বক শুষ্ক থাকলে স্নানের পরে তেল মাখা উচিত। এতে শুষে যাওয়া জল বেরোতে পারে না অর্থাৎ ট্রান্স এপিডার্মাল ওয়াটার লস কম হয়। ফলে ত্বক কোমল ও মোলায়েম থাকে। আবার দাদ, হাজা হলে শুকনো অবস্থায় তেল লাগিয়ে স্নান করতে হবে। কারণ তেল লাগিয়ে স্নান করলে জল শুষে যায় না বলে চামড়া নরম হয় না। ফলে ওই নির্দিষ্ট জায়গায় ফাঙ্গাস বাড়তে পারে না।
[আরও পড়ুন: এ কী কাণ্ড! উত্তোলনের আগেই কংগ্রেসের পতাকা খুলে পড়ল সোনিয়ার হাতে! ভিডিও ভাইরাল]
ভাল তেল চেনার উপায় কী?
সরষের তেল – এই তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল গুণ রয়েছে, যা শীতকালে ত্বকের যত্নে কার্যকরী। ম্যাসাজ করলে বলিরেখা দূর হয়। শরীরের কোনও তীব্র গন্ধ দূর করতেও সরষের তেল খুবই কার্যকরী।
- নারকেল তেল – নারকেল তেল শুধু চুলের জন্যই উপকারী নয়, ত্বকের জন্যও সমান উপকারী। অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণসমৃদ্ধ এই তেল ময়েশ্চারাইজার হিসাবে খুব ভাল কাজ করে। এটি ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে।
- আমন্ড অয়েল – আমন্ড অয়েলে ভিটামিন ‘E’ রয়েছে। ত্বকে লাগানোর সঙ্গে আমন্ড ওয়েল খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। আবার মাথায় আমন্ড ওয়েল লাগালে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও খুবই উপকারী।
- তিলের তেল – শুষ্ক ত্বকের সমস্যা থাকলে তিলের তেল ত্বকের কোমলতা আনতে এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হওয়া থেকে রক্ষা করে। এছাড়া তিল তেলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় এটি খেলেও ত্বক মোলায়েম থাকে।
- অলিভ অয়েল – শীতকালে অনেকেই অলিভ অয়েল মাখেন। তবে আমাদের দেশে অলিভ ওয়েল সচরাচর পাওয়া যায় না এবং অন্যান্য তেলের তুলনায় এটির দাম অপেক্ষাকৃত বেশি।
দীর্ঘদিনের পরিচর্যা –
মনে রাখবেন, বাজার চলতি সমস্ত তেলের মূল কাজ একইরকমের হয়। শুধু সুগন্ধী-সহ কিছু জিনিস মিশিয়ে তেলের মানের প্রকারভেদ করা হয়। একইসঙ্গে ত্বকে তেল ব্যবহারের উপকারিতা কিন্তু একদিনে পাওয়া যায় না। নিয়মিত ত্বকে তেল ম্যাসাজ করলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ত্বকে উপকার চোখে পড়বে। একই সঙ্গে প্রতিটি তেলেরই মূল কার্যকারিতা এক থাকলেও কোন তেল আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত তা সঠিকভাবে বাছাই করাও জরুরি।