ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্য়ায়: ব্লকস্তরের নেতার হালহকিকত জানতে সমীক্ষা শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস। এলাকার বিধায়কের দেওয়া প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই সমীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ফিল্ড রিপোর্ট জমা পড়লে তার ভিত্তিতে ওই ব্লকের নেতার ভাগ্য নির্ধারণ করবে রাজ্যের শাসকদল।
এর আগে দেখা গিয়েছে অশান্তির খবর গড়িয়েছে বিধানসভায়। কখনও মন্ত্রীর কাছে, কখনও রাজ্য কমিটির দরবারে। স্থানীয় বিধায়ক ও ব্লক সভাপতিকে বসিয়ে বিধানসভাতেই সেই গোলমাল মিটিয়েছেন তৎকালীন জেলা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে নতুন করে এমন কোনও অশান্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে দলকে আর অস্বস্তির মধ্যে ফেলতে না পারে, তার জন্যই ব্লকস্তরে এমন সমীক্ষা। ২০ মে-র পর থেকে ধাপে ধাপে রাজ্যজুড়ে ব্লকস্তর পর্যন্ত নতুন কমিটি গড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া সেরে ফেলার কথা নেতৃত্বের। সেই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক কাজ শেষ। বিধায়কদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্লকস্তর থেকে নেতাদের নাম পৌঁছে গিয়েছে রাজ্য দফতরে। এবার সেগুলিরই স্ক্রিনিং পর্ব চলছে। সেই পর্ব শেষ করেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে দেওয়া হবে।
[আরও পড়ুন: পড়ুয়াদের বিক্ষোভে মাথা নোয়াচ্ছে না কলকাতা ও সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়, অফলাইনেই পরীক্ষার ভাবনা]
তাতে কী দেখা হচ্ছে? জনপ্রতিনিধিদের থেকে পাওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত ব্লক নেতার জনভিত্তি কতটা, মানুষের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা কেমন প্রথমেই তা দেখে নেওয়া হচ্ছে। মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে কি না তা-ও দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে অবশ্যই দেখা হচ্ছে ব্লকের ওই নেতা জনপ্রতিনিধিদের কাজে সহযোগিতা করেন কি না। কারণ, এই অভিযোগ বিধানসভা ভোটের সময় একাধিক জেলা থেকে এসেছে। বিশেষ করে দলের একটি সাধারণ কর্মসূচি পালন নিয়ে বিধায়কের সঙ্গে প্রকাশ্যে ঝগড়া করার অভিযোগ উঠেছে ব্লকের নেতাদের বিরুদ্ধে। বিধায়ককে না জানিয়েই কর্মসূচি করা হয়ে গিয়েছে। সেই অশান্তি মেটাতে হয়েছে রাজ্য কমিটির দরবারে। তাতেও অনেক জায়গায় পরিস্থিতি সামলানো যায়নি। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে তার প্রভাব পড়তে পারে ভোটে। স্বাভাবিকভাবেই তাই আগাম সতর্কতা। এক রাজ্য নেতার কথায়, “বিধায়কদের থেকে পাওয়া রিপোর্ট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যালয়ে জমা পড়ছে। সেই রিপোর্ট নিয়েই একেবারে ময়দানে নেমে সমীক্ষা হচ্ছে।”
কলকাতার ক্ষেত্রে আবার একাধিক কাউন্সিলরের সঙ্গেও ব্লক সভাপতিদের অসহযোগিতার অভিযোগ সামনে এসেছে। তার ভিত্তিতেই এই আগাম সমীক্ষা করানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি অবশ্যই দুর্নীতির অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে। বর্ধমান, নদিয়া, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, কোচবিহার, জলপাইগুড়ির মতো একাধিক জেলা থেকে ব্লকস্তরে নানা অশান্তির অভিযোগ সামনে আসে। সেইসব অশান্তি গোড়া থেকে নির্মূলের পর্ব শুরু হয়েছে। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য এক বর্ষীয়ান সাংসদের কথায়, “মানুষের সঙ্গে জনসংযোগই আমাদের দলের মূল অস্ত্র। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। সেই পথেই সমীক্ষার কাজ চলছে।”