সুকুমার সরকার, ঢাকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সেনাদের চাঙ্গা রাখার জন্য হিটলারের তৈরি উত্তেজক ট্যাবলেট আগেই ছেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশে (Bangladesh)। আগে অন্য নামে বিক্রি হলেও মায়ানমারে তা দেদার তৈরি হচ্ছে ‘ইয়াবা’ পরিচয়ে। কিন্তু প্রশাসনের উদ্বেগ বাড়িয়ে এবার সেই ইয়াবার চাইতেও এক ভয়ানক মাদক আসছে বাজারে। এটির নাম ‘আইস’ বা ক্রিস্টাল মেথ।
[আরও পড়ুন: Bangladesh: করোনার মারে বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত ৪ কোটিরও বেশি পড়ুয়া, বলছে ইউনিসেফ]
যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীর চনমনে রাখতে এই ইয়াবা ট্যাবলেট দেশের উচ্চবিত্ত বখাটে সন্তানসন্ততিদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয় হয়েছে। বস্তুত এই কারণে ইয়াবা চক্রের সন্ধানে বিস্তারিত তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, মিষ্টি গন্ধ ও নজরকাড়া উজ্জ্বল রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট বিভিন্ন ফ্লেভারে পাওয়া যায়। কিন্তু এবার নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘আইস’। মায়ানমার থেকে দ্রুত বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে এই নয়া মাদক। সাম্প্রতিক সময়ে ধরা পড়া ১১টি আইসের চালান বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট একাধিক আধিকারিক বলেন, এসব পাচার হয়ে এসেছে মায়ানমার থেকে। এর মধ্যে ১০টি চালান ধরা পড়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। একটি চালান ধরা পড়েছে ফিরোজপুরে। এই মাদক চোরাচালান ঠেকানো না গেলে ইয়াবার মতো আইসও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) আধিকারিকরা জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম-সহ নগরগুলিতে ‘আইস’ বিক্রি বেড়েছে। আইসের বহুবিধ ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই মাদক সরাসরি সেবন করা যায়। আবার এটি ইয়াবা তৈরিরও মূল উপাদান। ইয়াবায় ৫ শতাংশ আইস থাকে। সরাসরি আইস সেবনে ইয়াবার চেয়ে ২০ গুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আবার অন্যান্য মাদকের সঙ্গে মিশিয়েও আইস সেবন করা হয়। এক তরুণ ২০১৯ সালে ঢাকার মহম্মদপুরে ল্যাব স্থাপন করে আইস দিয়ে পরীক্ষামূলক নতুন ধরনের মাদক তৈরির চেষ্টাও করেছিল। হাসিব বিন মোয়াম্মার রশিদ নামের ওই তরুণকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গ্রেপ্তার করে। এরপর জানা যায়, এই কাজে নাইজেরিয়ার এক নাগরিক তাঁকে সহায়তা করছিলেন।
উল্লেখ্য, ডিএনসির আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দেশে একসময় মাদক হিসেবে ফেনসিডিলের ব্যাপক চাহিদা ছিল। একপর্যায়ে ইয়াবা এসে ফেনসিডিলকে টেক্কা দেয়। তবে ইয়াবার চাহিদা বাড়লেও ফেনসিডিল আসা বন্ধ হয়নি। অভিযোগ, মূলত ভারত থেকেই পাচার হয়ে ফেনসিডিল আসে বাংলাদেশে। সম্প্রতি ফেনসিডিলের বিকল্প মাদক এস্কাফ নামের একটি সিরাপ ভারত থেকে আসছে। সাম্প্রতিককালে সীমান্তবর্তী জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও ফেনীতে এস্কাফের অনেকগুলো চালান ধরা পড়েছে। ঢাকায় গত ২৫ জুন একটি চালান ধরা পড়ে।